তবুও বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা

0

বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে গণপরিবহন বন্ধ ও ব্যক্তিগত পরিবহন সীমিত থাকার পরও এবার ঈদের আগে-পরে সড়ক দুর্ঘটনা ছিল অতীতের তুলনায় বেশি। এ সময় সড়ক-মহাসড়কে ১৪৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৮ জন নিহত, ২৮৩ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে। তবে দুর্ঘটনার প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশি হওয়াটাই বাস্তবতা। কেননা সব সংঘটিত দুর্ঘটনা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট থানায় তথ্য থাকে না।
সংঘটিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে মোটরসাইকেল। এর পরেই রয়েছে ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, আর তার পরিমাণ ২৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সাধারণ ছুটি বা লকডাউনে দেশে গণপরিবহন বন্ধ ছিল। ৯০ শতাংশ যাত্রীর যাতায়াত বন্ধ থাকলেও সেই তুলনায় এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা কেন বাড়ল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে ব্যক্তিগত যানবাহনের চালকদের প্রশিণ রয়েছে কিনা, আর থাকলেও তা কতটা মানসম্পন্নর এটি অবশ্য খতিয়ে দেখা জরুরী হয়ে পড়েছে। সময় এসেছে সড়ক দুর্ঘটনাকেও মহামারীর মতো গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের। এ জন্য সরকারেরই করণীয় বেশি।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর গণপরিবহন রাস্তায় নেমেছে। এতে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলামোটরে বেপরোয়া গতির গণপরিবহন একাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতাও ল্য করা যায় বহু চালকের ভেতর। এ তালিকায় রয়েছে বহু ব্যক্তিগত গাড়িও। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকদের কথা না বললেই নয়। কোন ধরনের শৃঙ্খলা মানতে চান না অধিকাংশ মোটরসাইকেলের চালক। তারা অন্যের সাথে নিজের জীবনও ঝুঁকিপূর্ণ করে।
অভিযোগ রয়েছে, যানবাহন তুলে দেয়া হয়েছে লাইসেন্সবিহীন বহু চালকের হাতে। নিয়ম অনুযায়ী চালকদের প্রথমে হাল্কা গাড়ির লাইসেন্স নিতে হয়। এর তিন বছর পর মাঝারি গাড়ির লাইসেন্স পাওয়া যায়। ভারি গাড়ির লাইসেন্স নিতে আরও তিন বছর অপো করতে হয়। এরপর যে চালক বাস চালাতে চায় তাকে পিএসভি নামে ভিন্ন আরেকটি লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ েেত্রই দেখা যায় চালকরা এত দীর্ঘদিন অপো করতে চায় না। হাল্কা বা মাঝারি গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নিয়েই অনেকে বাস চালাচ্ছে। এর বাইরেও রয়েছে নিবন্ধনহীন স্বল্পগতির যানবাহন। নসিমন, করিমন, আলম সাধু, ভটভটি ইত্যাদি নামের যানবাহন সংযোগ সড়ক ছেড়ে উঠে যাচ্ছে মূল সড়কে। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সাধারণত ফুটপাথ দখল, ওভারটেকিং, ওভারস্পীড ও ওভারলোড, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, গাড়ির ত্রুটি, যাত্রীদের অসতর্কতা, ট্রাফিক আইন না মানা, গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ক্রসিংয়ে জেব্রা ক্রসিং না থাকা এবং জেব্রা ক্রসিং গাড়িচালক কর্তৃক না মানা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার করা, মহাসড়কে স্বল্পগতি ও দ্রুতগতির যান একই সঙ্গে চলাচল, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো এবং ট্রাফিক পুলিশ বা হাইওয়ে পুলিশের অসততাই দায়ী। সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরতে হলে এর কোনটিকেই উপো করা চলবে না। আমরা আশাকরবো, স্বরাষ্ট্র ও সড়ক মন্ত্রণালয় কঠোর পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করবে না।