আগুনে পাঁচ জনের মৃত্যু ইউনাইটেড হাসপাতালে ‘নামমাত্র অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা’

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নামমাত্র অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে চলছে রাজধানীর অভিজাত গুলশান এলাকার ইউনাইটেড হাসপাতাল। বুধবার রাতে হাসপাতালটির আঙ্গিনায় করোনা ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচ রোগীর মৃত্যুর পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নানা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় নানা অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস গঠিত তদন্ত দল। তদন্ত দলেরই একজন সদস্য জানিয়েছেন, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ২৪ ঘণ্টা একজনের থাকার কথা থাকলেও দুর্ঘটনার সময় কেউই ছিলেন না। কে কি কাজ করবে, তাও নির্ধারণ করা ছিল না।
এছাড়া হাসপাতালে ১১টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকলেও তার আটটিরই মেয়াদ এক মাস আগে শেষ হয়ে গেছে। বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেসরকারি হাসপাতালটির নিচের প্রাঙ্গণে করোনাভাইরাসের রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লাগলে একটি কে পাঁচ রোগীর মৃত্যু ঘটে। তাদের মধ্যে তিনজনের কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিল বলে জানিয়েছেন ডিএমপির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উপ-কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত) আব্দুল আহাদ। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধনের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন ফায়ার ব্রিগেড ট্রেনিং সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত অধ্য বাবুল চক্রবর্তী, উপ-সহকারী পরিচালক নিয়াজ আহমেদ এবং বারিধারার জ্যেষ্ঠ স্টেশন অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে দেবাশীষ বর্ধন বলেন, এই হাসপাতালটির অগ্নিনির্বাপণের দায়িত্বে একজন কর্মকর্তা আছেন, কিন্তু তিনি ঘটনার সময় বাসায় ছিলেন। “ওই কর্মকর্তা বাসায় ছিলেন সেখানে আমাদের বলার কিছু নাই, কিন্তু উনি তো ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের জন্য একটি দল গঠন করে দেবেন। উনাদের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দেখে আমরা মন্তব্য করেছি যে, হাসপাতালের ফায়ার সেফটি ম্যানেজমেন্ট নামমাত্র; কাজে কেউ ছিল না।” হাসপাতালে কতজনের অগ্নিনির্বাপক দল রয়েছে জানতে চাইলে দেবাশীষ বর্ধন বলেন, “আমিও তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কিন্তু কিছুই বলতে পারে না। নতুন স্থাপিত বর্ধিত অংশেও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বলতে কিছুই ছিল না। মূল ভবনেরও ১১টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের আটটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এক মাস আগেই।” ফায়ার হাইড্রেন্ট ছিল কিন্তু সেটির মুখ খুলে দেওয়ার মত কেউ ছিল না আগুন লাগার পর। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে তা করেছে বলে জানান দেবাশীষ। অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পুরোটাতেই বৈদ্যুতিক লাইন দেওয়া। কোনো ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ছিল না, কারণ নেগেটিভ প্রেসারের এসি ছিল; কয়েকটা এসি ছিল। এসিগুলোর ছবি তোলা হয়েছে এবং বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। সবগুলো বিষয় পর‌্যালোচনা করে কমিটি সিদ্ধান্ত নিবে কোথায় থেকে আগুন লেগেছিল।” আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা একটা টিনশেড। বর্ধিত অংশটি উপরে টিন দিয়ে তার নিচে সিলিং করা হয়েছে। আর বেড়া দেওয়া হয়েছে পারটেক্স ও গ্লাস দিয়ে। এসব পদার্থ সহজেই জ্বলে।” হাসপাতাল কর্তৃপরে কোনো গাফিলতি ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গাফিলতি বলতে চাচ্ছি না। মানুষগুলো কেন মরলো? ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা কী ছিল, কী নাই? অগ্নিকাণ্ডের কারণ, য়তি, কী কী প্রয়োজন ছিল আর কী কী আছে, কী কী ছিল না, তা তদন্ত প্রতিবেদনে দিয়ে দেব।” এদিকে নিহত পাঁচজনের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উপ-কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত) আব্দুল আহাদ। আর এ ঘটনায় গুলশান থানায় হাসপাতাল কর্তৃপ একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে। দেশে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের মধ্যে শুরুতে ইউনাইটেডে করোনাভাইরাসের রোগীদের ভর্তি করা না হলেও মাসখানেক আগে ভর্তি শুরু হয়েছিল। এজন্য হাসপাতালের নিচে প্রাঙ্গণের একাংশে ‘তাঁবু’ খাটিয়ে করোনাভাইরাস ইউনিট স্থাপন করে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অফ কমিউনিকেশনস অ্যান্ড বিজনেস ডা. সেগুফা আনোয়ার রাতে বলেছিলেন, বৈদুতিক ‘শর্ট সার্কিট’ থেকে আগুন লেগেছে বলে ধারণা তাদের। রোগীদের উদ্ধার করতে না পারার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করে তিনি বলেন, “আগুন লাগার সময় আবহাওয়া খারাপ ছিল, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। তীব্র বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে আইসোলেশন ইউনিটে থাকা রোগীদের বাইরে বের করা যায়নি।” পুলিশ উপ-কমিশনার সুদীপ চক্রবর্তী রাতে বলেন, “সেখানে এসি ছিল এবং এসির স্পার্ক থেকে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া এখানে যেসব উপাদান ছিল, সবই দাহ্য পদার্থ। এখানে স্যানিটাইজার ছিল, সেগুলোও দাহ্য পদার্থ। সে কারণে খুব অল্প সময়ে আগুন একটা বড় রূপ নেয় এবং পাঁচজন রোগী মৃত্যুবরণ করেন।”