ছুটি প্রত্যাহারে ‘বিপর্যয়’ দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো

0

করোনাভাইরাসের মধ্যে সরকারের সাধারণ ছুটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলে মনে করছে দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দল। দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসজনিত ‘বিপর্যয়’ সৃষ্টি হবে। বৃহস্পতিবার (২৮ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক-পৃথক বিবৃতিতে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা এ মত প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, আগামী ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।বাংলাদেশ ন্যাপবাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ‘ছুটির নামে লকডাউন প্রত্যাহার সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্তকবার্তার প্রতি ‘বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন’ করে সরকার ছুটির নামে তথাকথিত লকডাউন প্রত্যাহারের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে করোনা আক্রান্তের দিকে ঠেলে দিলো। এটা সরকারের সবচাইতে বড় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে অচিরেই প্রমাণিত হবে।’ ন্যাপ নেতারা প্রশ্ন করেন, সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে করোনায় মত্যুর মিছিল দীর্ঘায়িত হলে দায় কার? তারা বলেন, ‘এই দায় জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দিলেই সরকার ব্যর্থতার দায় থেকে মুক্তি পাবে না।’

বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিবাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, করোনা মহামারির সময় জনগণের দায়িত্ব নিতে না পারায় সামাজিক সংক্রমণ বিস্তারের বিপজ্জনক পর্যায়ে বাস্তবে সবকিছু খুলে দেওয়ার হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতার পরোক্ষ স্বীকৃতি। মানুষের জীবিকার বিষয় নিশ্চয় গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তা কোনোভাবেই জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়ে নয়। জীবিকার কারণে জীবন যখন ঝুঁকিতে পড়ে, তখন আপৎকালীন সময়ের জন্য সরকারকেই মানুষের জীবন বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব নিতে হবে। সরকার তা করতে ব্যর্থ হলে খোলাখুলি জনগণের কাছে তা তুলে ধরা দরকার।’ অনতিবিলম্বে করোনা মহামারি সংক্রান্ত সব সংস্থা, কমিটি, বিশেষজ্ঞ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত ও পরামর্শ নিয়ে সমগ্র পরিস্থিতির বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণের দাবি জানান সাইফুল হক।বাসদ (মার্কসবাদী)সংক্রমণ বৃদ্ধির সময়ে লকডাউন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সরকার বলছে অর্থনীতিতে গতি ফিরিয়ে আনতে, সবাইকে নিয়ে বাঁচতে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের ভাষ্য শুনলে মনে হয়, যেন এছাড়া তাদের আর কোনও উপায় ছিল না, বাস্তব অবস্থা তা নয়। দেশের এই সক্ষমতা ছিল। কিন্তু তারা পুঁজিপতিদের স্বার্থে কারখানা খুলে দিয়েছেন অনেক আগে, এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে বাকি সব কর্মক্ষেত্র খুলে দিচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছেন না, আন্দোলনের ভয়ে। সব দায়িত্ব নিজের ওপর থেকে সরিয়ে জনগণের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। আমরা এই সিদ্ধান্তকে কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারছি না। এটা আত্মহত্যার সামিল।’বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘সরকারের এ ঘোষণায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তৃতি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারের এ সিদ্ধান্ত ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর করে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি উত্তরণের পরই কেবল অফিস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খোলা যেতে পারে।’ এর পূর্বে কোনও অবস্থাতেই অফিস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খোলা সমীচীন হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।