বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছে না ওপেক

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা পূর্বাভাস ফের কমিয়েছে অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক)। এর মধ্যে চলতি প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদায় তীব্র পতন দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছে জোটটি। এমনকি নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বেশ কয়েকটি দেশ লকডাউন শিথিল করা সত্ত্বেও বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা রেকর্ড কমতির দিকে থাকতে পারে। খবর রয়টার্স ও মার্কেটওয়াচ।
ওপেকের সর্বশেষ মাসভিত্তিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা দৈনিক গড়ে ৯০ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল বা ৯ দশমিক ১ শতাংশ কমে যেতে পারে। জোটটির আগের মাসের পূর্বাভাসে এ পরিমাণ ছিল দৈনিক গড়ে ৬৮ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল। সে হিসাবে এক মাসের ব্যধানে চলতি বছর জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা পূর্বাভাস দৈনিক গড়ে ২২ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল কমিয়েছে ওপেক।
চলতি বছরের শুরুতেই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস অল্প দিনের মধ্যেই বৈশ্বিক মহামারীতে রূপান্তরিত হয়। সংক্রমিত ভাইরাসটির কোনো প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত না হওয়ায় সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা। ফলে ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে দেশে দেশে চলছে লকডাউন। এতে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ ঘরে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে ভেঙে পড়েছে আকাশ, স্থল, নৌপথসহ বৈশ্বিক পরিবহন ব্যবস্থা। স্থবির হয়ে পড়েছে পণ্য আমদানি-রফতানিসহ বিভিন্ন শিল্প খাত। দেশে দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতির সামগ্রিক প্রভাব পড়েছে জ্বালানি তেলের বাজারে। বছরের শুরু থেকেই পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদায় ধস নামতে শুরু করে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমতে শুরু করে পণ্যটির দাম।
নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে এশিয়া ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ লকডাউন ও সরকারি বিধিনিষেধ অনেকটা শিথিল করে এনেছে। এর পরও চলতি প্রান্তিকে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা দেখছে না ওপেক। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ব্যাপক শ্লথতায় প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় উল্টো এ প্রান্তিকে পণ্যটির চাহিদা আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জোটটি জানিয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে দ্বিতীয় প্রান্তিকে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদায় সবচেয়ে বেশি পতন ঘটতে পারে। সর্বশেষ প্রতিবেদনে জোটটি এ প্রান্তিকে পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদার পূর্ভাভাস আরো কমিয়ে দৈনিক গড়ে ৫৪ লাখ ব্যারেলে নামিয়ে এনেছে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট, ইউরোপ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় জ্বালানি তেলের চাহিদা কমতির দিকে থাকতে পারে।
তবে পরের প্রান্তিকে গিয়ে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে। জ্বালানি তেলের বাজারে ভারসাম্য ফিরতে পারে বলে প্রত্যাশা করছে ওপেক জোট। এর পেছনে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে ওপেক ও নন-ওপেক দেশগুলোর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের রেকর্ড উত্তোলন হ্রাস চুক্তির কার্যকারিতা।
নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা রেকর্ড কমে গেছে। চাহিদার এমন অপ্রত্যাশিত পতনে আন্তর্জাতিক বাজার পণ্যটির উদ্বৃত্ত সরবরাহে ভরে ওঠে। ফলে পণ্যটির দাম কমেত শুরু করে হু হু করে। এ অবস্থায় পণ্যটির বাজারে ভারসাম্য ফেরাতে চলতি ও আগামী মাসে ওপেক ও নন-ওপেক দেশগুলো সক্ষমতার চেয়ে দৈনিক গড়ে ৯৭ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন কমিয়ে আনার বিষয়ে একমত হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ জোটরে বাইরের অন্যান্য শীর্ষ উত্তোলনকারী দেশগুলোও পণ্যটির উত্তোলন কমিয়ে আনবে বলে জানিয়েছে।
ওপেকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্বালানি তেলের উত্তোলন হ্রাস চুক্তি এরই মধ্যে বাজারে চাঙ্গা ভাব ফেরাতে সাহায্য করতে শুরু করেছে। চাহিদা কমে বৈশ্বিক বাজার জ্বালানি তেলের যে উদ্বৃত্ত সরবরাহ বেড়ে গিয়েছিল, তাতে অনেকটা সামঞ্জ্য ফিরেছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী প্রান্তিক থেকে পণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করবে।
এদিকে ওপেকের এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরই জ্বালানি তেলের বাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠে। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টে ক্রুডের প্রতি ব্যারেলের দাম বেড়ে ৩০ ডলারে উন্নীত হয়। পরদিন শুক্রবার আগের দিনের তুলনায় আরো ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ বা ১ ডলার ১৭ সেন্ট বেড়ে পণ্যটির প্রতি ব্যারেল ৩২ ডলার ৩০ সেন্টে বেচাবেনা হয়েছে। গত মাসে ব্রেন্টের দাম কমতে কমতে গত ২১ বছরের সর্বনিম্নে গিয়ে ঠেকেছিল। এদিকে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) প্রতি ব্যারেলের দাম দাঁড়িয়েছে ২৮ ডলার ৫৬ সেন্ট, আগের দিনের তুলনায় যা ১ ডলার বা ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি।
চলতি বছর ওপেক প্লাস জোটের বাইরের দেশগুলোও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমিয়ে আনতে পারে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওপেক। চাহিদায় ব্যাপক পতন, রেকর্ড মূল্য হ্রাস, অতিরিক্ত সরবরাহ ও দেশে দেশে স্টোরেজ স্পেসগুলো পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়া এর পেছনে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। ওপেকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ওপেক প্লাস জোটের বাইরের দেশগুলো জ্বালানি তেলের সম্মিলিত উত্তোলন দৈনিক গড়ে ৩৬ লাখ ব্যারেল কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।