খুলনায় বোরোর বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকদের

0

খুলনা ব্যুরো॥ খুলনাতে এবার কৃষকের স্বপ্নের সোনালী বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও ধান কাটা, শুকানো এবং ঘরে তোলা নিয়ে মুখে হাসি নেই কৃষকদের। দাম নিয়ে শঙ্কার পাশাপাশি ধান কাটার শুরুতে করোনা আতঙ্কে কৃষি শ্রমিক সংকট, মজুরী বৃদ্ধি এবং বৈরী আবহাওয়ায় বেশিরভাগ কৃষক লাভের স্বপ্ন দেখলেও এসব সংকটে ক্ষতির আশংকা করেছেন তারা। শেষমহূর্তে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন ধান মাড়াই ও শুকানো নিয়ে। অনেক জায়গায় রোদে শুকানোর জন্য কেটে রাখা ধান বৃষ্টির কারণে এখন মাঠেই নষ্ট হতে বসেছে। সময়মত ধান শুকাতে না পারলে হাটে উঠানো সম্ভব হবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা অঞ্চলের মাঠে কৃষকের স্বপ্নের সোনালি বোরো ধান কাটা এবং শুকানোর উৎসব চলছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ রোধে গৃহবন্দি থাকায় দেখা দেয় কৃষি শ্রমিক সংকট ও শ্রমিক মজুরী বৃদ্ধি। তার মধ্যে বাধ সেধেছে বৈশাখের বৈরী আবহাওয়া। কৃষক বোরো ধান কেটে কিছুটা রস টানার (শুকানো) জন্য মাঠেই রেখে দেন সেই কাটা ধান। গত ৪/৫ দিনের প্রবল বর্ষণে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় ধানও ভাসতে শুরু করেছে। এতে কাঁদা মিশে ধান ঝরে যাওয়ার সাথে সাথে গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত বিছালিও (খঁড়-কুটো) পঁচতে শুরু করেছে।
এদিকে, অতি বর্ষণে খুলনার শস্যভাণ্ডার খ্যাত ডুমুরিয়া উপজেলার বেশিরভাগ জমিতে পানি জমে গেছে। এতে এ উপজেলার অধিকাংশ কৃষকই ক্ষতির আশংকায় ক্ষণ গুণছেন। বিশেষ করে এ উপজেলার সিংগাইর (সিঙ্গের বিল), বানিয়াখালি বিল, খলশির বিল, গুটুদিয়ার বিল, বামনদিয়ার বিল ও গোনালির বিলসহ অধিকাংশ বিলই পানিতে থৈ থৈ করছে। বৃষ্টির এ পানিতে কৃষকের স্বপ্নও ভাসছে। উপজেলার টিপনা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো: জামাল গাজী জানান, ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ১একর ২০ শতক জমিতে বোরো ধান রোপন করেছিলাম। ফলনও হয়েছিল ভালো। গত বৃহস্পতিবার ৮-১০জন শ্রমিক নিয়ে পুরো জমির ধান কেটে জমিতে রেখে দেই। দু’দিন রৌদ পেলে একটু রস টানলে ঘরে তোলার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টিতে গাছসহ ধান ভেসে উঠেছে। এতে ধান ও বিছালি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে তুলতে না পারলে এ ধান আর গোলায় উঠানো সম্ভব হবে না।
রায়েরমহল এলাকার কৃষক স্বরজিত ও খোকন বিশ্বাস বলেন, যেখানে শ্রমিকের মজুরি ছিল জনপ্রতি ৫০০ টাকা। সেখানে এখন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা করে শ্রমিক দিয়ে ধান কেটেছি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ধান ঘরে তুলতে না পারায় এখন বিক্রি করাতো দূরের কথা, সারা বছরের খাবারেরও সংকট দেখা দেবে। একইভাবে সিঙ্গাইর বিলের কৃষক আব্দুল আজিজ মোল্লার ১২ বিঘা, নূরুল ইসলামের সাড়ে ৩ বিঘা, কামরুল ইসলাম সরদারের ৫ বিঘা, জিয়াউর হালদারের ৪ বিঘা, সাইদুল গাজীর দেড় বিঘা, শাহাজান ফকিরের ৬ বিঘা ও আব্দুর রাজ্জাক সরদারের ১ বিঘা ও খলশির বিলের লাভলু শেখের জমির ধানও পানিতে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ডুমুরিয়া উপজেলায় বোরো আবাদ হয়েছে ২১ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২৭ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন। তবে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। খুলনা কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক পংকজ কান্তি মজুমদার বলেন, খুলনায় ৫৭ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত বছর ৫৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো উৎপাদন হয়েছিল।