পাইকারি বাজারে কমতির দিকে নিত্যপণ্যের দাম

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে চাল ও ছোলা বাদে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম আগের তুলনায় কমে এসেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরে পণ্য খালাস স্বাভাবিক হওয়ায় পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে, নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি ত্রাণের প্রবাহ কমে এসেছে এবং রমজানের বাড়তি বিক্রির চাপও কমতির দিকে রয়েছে—এসব কারণে পাইকারি বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমেছে। দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে বাজার পরিস্থিতি বেশ চাঙ্গা ছিল।
গতকাল খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তগুলো ঘুরে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি মোটা মসুর ডাল মানভেদে ৭৪-৭৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। দফায় দফায় দাম বেড়ে গত সপ্তাহে পণ্যটি কেজিপ্রতি ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। করোনা সংক্রমণের আগে দেশের বাজারে পণ্যটি কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৪৫ টাকায় বিক্রি হতো।
গত তিন-চারদিনে কেজিতে ২২ টাকা কমেছে খেসারি ডালের দাম। রোজার সময় বাড়তি চাহিদা থাকায় গত দেড় মাসে কয়েক দফা বেড়ে গত সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিকেজি খেসারি ডাল বিক্রি হয়েছে ৯৭ টাকায়, যা বর্তমানে ৭৫ টাকায় নেমে এসেছে। একইভাবে কেজিতে ৫ টাকা কমে গতকাল প্রতি কেজি মটর ডাল বিক্রি হয় ৪০ টাকায়। গত সপ্তাহ পর্যন্ত পণ্যটি ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে প্রতি কেজি ছোলার ডালের দাম ওঠে ৭৫ টাকায়। গত তিন-চারদিনে ৫ টাকা কমে বর্তমানে প্রতি কেজি ছোলার ডাল ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্বাভাবিক সময়ে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি সাদা মটর বিক্রি হয় ৩০-৩২ টাকার মধ্যে। করোনা ও রোজা ঘিরে গত দেড় মাসে পণ্যটির দাম বেড়ে ৪০ টাকায় ঠেকেছিল। তবে চাহিদা ও বিক্রি কমে চলতি সপ্তাহে পণ্যটির দাম ৩৬-৩৭ টাকায় নেমে এসেছে।
পাইকারি বাজারে মসলার দামেও কমতি ভাব দেখা গেছে। গত এক মাস ধরে পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকার ওপরে ছিল। গতকাল পণ্যটির কেজিপ্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। অর্থাৎ পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। করোনা সংক্রমণের পর আকাশ ছুঁয়েছিল আদার দাম। এখন পণ্যটির দাম কমতির দিকে। গত দেড় মাস ধরে পাইকারি বাজারে চীন থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি আদা বিক্রি হয়েছে ২০০-২৫০ টাকায়। গতকাল পণ্যটি কেজিপ্রতি ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
একই সময় কেজিতে ৪০ টাকা কমেছে রসুনের দাম। গতকাল পাইকারি বাজারে চীন থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয় ১২৫-১৩০ টাকায়। গত সপ্তাহের শেষ সময় পর্যন্ত পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ১৬০ টাকার ওপরে ছিল। কমেছে জিরার দামও। করোনা পরিস্থিতিতে অস্বাভাবিক বেড়েছিল ভারত থেকে আমদানি করা মসলা পণ্যটির দাম। তবে এক সপ্তাহে কেজিতে ৮০ টাকা কমে বর্তমানে প্রতি কেজি জিরার দাম ৩৭০ টাকায় নেমে এসেছে।
করোনা মহামারী শুরুর পর সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছিল শুকনো খাদ্যপণ্য চিড়ার দাম। পাইকারি বাজারে আগে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিড়া সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও গত এক মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৮০০ টাকায়। তবে গত এক সপ্তাহে ৪০০-৫০০ টাকা কমে পণ্যটি বস্তাপ্রতি ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একইভাবে খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে মণে (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ১০০ টাকা কমেছে চিনির দাম। গত সপ্তাহ পর্যন্ত পাইকারি বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির প্রতি মণ চিনি বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৮০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। তবে চলতি সপ্তাহে তা ২ হাজার ১০০ টাকা থেকে ২ হাজার ১৩০ টাকায় নেমেছে।
বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম কমতির দিকে থাকলেও এখনো কমেনি চাল ও ছোলার দাম। গত এক মাসে পাইকারি বাজারে বিভিন্ন মানের চালে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৬০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতির আগে মণপ্রতি ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হওয়া ছোলার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০০ টাকা।
নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে সরকারি-বেসরকারি বহু অফিসের কার্যক্রম কার্যত স্থগিত হয়ে যায়। যদিও আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি সরকারের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু বহু জায়গায় তা বিঘ্নিত হয়েছে। বন্দরে কনটেইনার ও জাহাজজট তৈরি হয়েছে। দিনের পর দিন পণ্যগুলো আটকে থাকায় একদিকে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের ড্যামারেজ দিতে হয়েছে, অন্যদিকে বাজারে পণ্যের দামে বেড়েছে। তবে পরিস্থিতি আগের তুলনায় স্বাভাবিক হতে শুরু করায় সরবরাহ সংকট কেটে দাম কমছে নিত্যপণ্যের। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, মনিটরিং বাড়াতে হবে।
কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ব্যবসায়ীরা যাতে অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ না নিতে পারেন, সেজন্য ভোক্তা কিংবা গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে। করোনা সংক্রমণের পর সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণ শুরু হওয়ায় নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। ওই সময় মানুষের মধ্যেও মজুদপ্রবণতা বেড়েছে। এর মধ্যেই এবার রোজা শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে বাড়তি চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন না হওয়ায় বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল। এখন দাম কমতির দিকে রয়েছে। ঈদের আগে কোনো কারণে যাতে পাইকারি বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ফের বাড়তে না পারে, সেদিকে নজর রাখা জরুরি।