কেশবপুরে বাড়ির তিনতলায় দেশি গরু খামার

0

 

জয়দেব চক্রবর্ত্তী, কেশবপুর (যশোর) ॥ যশোরের কেশবপুর পৌর এলাকায় বসতবাড়ির তিনতলা ছাদে দৃষ্টিনন্দন দেশি জাতের গরুর খামার করা হয়েছে। ব্যতিক্রমধর্মী এ খামারে দেশি প্রযুক্তির লিফটে করে গরু ওঠা-নামা করানো হয়। ওই খামার মালিক নিজে একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি অনেক শিক্ষিত বেকার যুবককে দেশি জাতের গরু পালনে উদ্বুদ্ধ করছেন। অল্পদিনেই খামারটি এলাকায় সাড়া জাগিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার ভোগতী এলাকার নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল একটি দেশি জাতের গরুর খামার করার। কারণ অধিক লাভের আশায় অধিকাংশ খামারিরা বিদেশি জাতের গরুকে ভেজাল খাদ্য খাইয়ে দ্রুত স্বাস্থ্যবান করে তোলে। এসব ভেজাল মাংস খেয়ে অনেকে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ কারনে তিনি উদ্যোগ নেন দেশি প্রজাতির গরুর খামার করার। বাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় তিনি প্রতিবেশী আলমগীর হোসেনের ১২ শতক জমি লিজ নিয়ে খামার করার পরিকল্পনা নেন। কিন্তু আলমগীর হোসেন তাঁর কাছে বছরে ৮০ হাজার টাকা দাবি করায় তিনি পরিকল্পনা নেন বসতবাড়ির তিনতলা ছাদেই করবেন তাঁর স্বপ্নের গরুর খামার। ৬ মাস আগে বসতবাড়ি তিনতলায় ১২ থেকে ১৪ টি গরু পালন করার একটি টিন শেডের খামার করেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, তাঁর খামারের গরুদের বিচালি, খৈল, কুড়া ভুসি ছাড়া অন্য কোনো ভেজাল খাবার দেয়া হয় না। খামারের প্রতিটি গরু ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে। খামারে গরু ওঠা-নামা করতে বাড়ির সামনে তৈরি করা হয়েছে নিজের উদ্ভাবিত লিফট। বর্তমান তাঁর খামারে ১২টি দেশি প্রজাতির গরু রয়েছে। প্রতিটি গরুর মূল্য ১ লাখ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা হলেই তিনি গরু বিক্রি করে দেবেন। গরু লালন-পালনের জন্যে সার্বক্ষণিক একজন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘বর্তমান গোখাদ্যের যেভাবে মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে, তাতে আমার মত ছোট ছোট খামারিরা লাভবান হচ্ছে না।’ এরপরও এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকেরা এলোমেলো ঘোরাফেরা না করে যদি নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে এ ধরনের কাজ করে তাহলে তারা সফলতা পাবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি সবেমাত্র খামার করেছেন। সরকারের প্রাণিসম্পদ দফতরের কোনো ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা এখনও তার খামারটি পরিদর্শনে আসেননি। তিনি সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা পেলে খামারের আয়তন বৃদ্ধিসহ গরুর সংখ্যাও বাড়িয়ে দেশের স্বার্থে ভেজালমুক্ত মাংস উৎপাদন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অলোকেস সরকার বলেন, ‘এ উপজেলায় ছোট বড় মিলে ৫৮০টি গরুর খামারে ৯৪ হাজার গরু রয়েছে। এছাড়া প্রায় প্রতিটি পরিবারে কম বেশি গরু-ছাগল পালন হয়ে থাকে। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সুফলভোগীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, ক্যাম্পিং এর আওতায় গরু-ছাগলের টিকাদান ও কৃমিনাশক বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমি খুব শিঘ্রই খামারটি পরিদর্শনে যাব।’