যশোরে কয়েকটি নমুনার ফল নিয়ে সংশয় ও বিভ্রান্তি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ল্যাব পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করার (ডিকনটামিনেশন) কাজ শেষ হবে শনিবার। পরদিন থেকে পুরোদমে করোনা পরীা কার্যক্রম চালানো যাবে বলে কর্তৃপ আশা করছেন। এদিকে, যশোরের ১৫ ও চুয়াডাঙ্গার ২৮টি নমুনা পুনঃপরীার ফল এখনো ঘোষণা করা হয়নি; যেগুলো বৃহস্পতিবার যেকোনো সময় ঘোষণা করার কথা ছিল। পরীার কাজে নিয়োজিতরা এই নমুনাগুলোর কয়েকটির ফল নিয়ে সংশয়ে আছেন। এর আগে সন্দেহভাজন রোগীদের কাছ থেকে পাওয়া নমুনা পরীা ও তার ফলাফল সংশ্লিষ্ট বিভাগে একটানা ১৪ দিন পাঠিয়ে গেছে যবিপ্রবি। সাত সদস্যের একটি টিম এই কাজে নিয়োজিত থাকার পর তাদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। ভিন্ন একটি টিম কাজ শুরুর আগে ল্যাব পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করার কাজ শুরু হয় বৃহস্পতিবার। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জেনোম সেন্টারে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন। আগামী শনিবার কিনিংয়ের এই কাজ শেষ হবে।
অবশ্য শনিবার বিকেলেই টেস্ট রান হবে। ফলাফল ভালো হলে পরদিন পুরোদমে পরীার কাজ শুরু হবে। এই মধ্যবর্তী সময়ে টিম লিডারের দায়িত্ব পালন করছেন যবিপ্রবির মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. সেলিনা আক্তার। তিনি এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ড. সেলিনা বলছেন, কোনো ল্যাবরেটরি একটানা চালানো যায় না, সেটি ঠিকও না। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী পরীা কার্যক্রম বিরতিকালে ল্যাব পরিচ্ছন্ন করতে হয় কর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই। তিনি বলেন, ‘এখানে এখন অতিছোঁয়াচে কোভিড-১৯ ভাইরাস নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। যেভাবে নমুনাগুলো আসছে, তা পুরোপুরি নিরাপদ না। তাছাড়া সমস্যা রয়েছে মাস্কেও। ফলে কর্মরতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।’
যবিপ্রবি ল্যাব থেকে সবশেষ গত বুধবার নমুনা পরীার ফলাফল দেওয়া হয়। ওইদিন ভোরে যশোরের ৬৫টি নমুনার মধ্যে ২৬টিকেই পজেটিভ হিসেবে শনাক্ত করে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিছুসময়ের মধ্যে সেই ফলাফল স্থগিত করা হয়। এরও কিছুসময় পর দেওয়া ফলাফলে জানানো হয়, যশোরের ১১টি নমুনা পজেটিভ। এ নিয়ে জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তিরও সৃষ্টি হয়।
এছাড়া গত ২৮ এপ্রিল কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পরীা করে চুয়াডাঙ্গার ৫১টি নমুনার মধ্যে ২৮টিকেই পজেটিভ হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এই রিপোর্ট হাতে পেয়ে আইইডিসিআর কর্তৃপরে সন্দেহ হয়। পরে তাদের নির্দেশনামতে নমুনাগুলো ফের ঢাকায় পাঠানো হয় বলে জানান চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন। আইইডিসিআর সেগুলো পুনঃপরীার জন্য পাঠায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারে। এই প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ড. সেলিনা আক্তার বলেন, ‘যশোর ও চুয়াডাঙ্গার নমুনাগুলোর মধ্যে কিছু ছিল বর্ডার লাইনে। সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের এক্সপার্টরা কিনফিউজড; সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। সেই কারণে এখনো ফলাফল জানানো হয়নি।’ এর আগে প্রথম টিমের লিডার অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, চুয়াডাঙ্গা ও যশোরের পেন্ডিং স্যাম্পলগুলোর পরীার ফলাফল যেকোনো সময় জানিয়ে দেওয়া হবে। যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনও একই তথ্য দিয়েছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে এই অধ্যাপক বলেন, যেভাবে রোগীদের স্যাম্পল পাঠানো হচ্ছে, তা ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী হচ্ছে না। এখানে স্যাম্পলগুলো নরমাল স্যালাইনে পাঠানো হয়। এভাবে পাঠানো স্যাম্পল দু’-একদিন রেখে দিলে রেজাল্ট নেগেটিভ হয়ে যেতে পারে। তাহলে স্যাম্পল পাঠানোর স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি কী?- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. সেলিনা জানাচ্ছেন, দুটি পদ্ধতি আছে। একটি হলো ভিটিএম। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে সাধারণ তাপমাত্রায়ও নমুনা ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ঠিকঠাক থাকবে। আর এই পদ্ধতিতে আইসব্যাগ ব্যবহার করলে ৭২ ঘণ্টা এবং মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নমুনা রাখলে তা ১৫-২০ দিন পর্যন্ত পরীার উপযোগী থাকে। ‘অন্য একটি পদ্ধতি হলো আরএনএ ল্যাটার সল্যুউশন। এই পদ্ধতিতে নমুনা অনেকদিন ভালো থাকে। আমরা সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনদের প্রথম থেকেই বিষয়টি জানিয়ে আসছি,’ বলছিলেন ড. সেলিনা।
তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় এতোটা নিখুঁতভাবে নমুনা সংরণ ও পরিবহন সম্ভব কি-না জানতে চাইলে ড. সেলিনা বলেন, ‘নরমাল স্যালাইনে নমুনা পাঠালেই যে তা নষ্ট হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়। সময়মতো ল্যাবে পৌঁছাতে পারলে সমস্যা হয় না। টিউবে ভিটিএম দিলে নমুনা ভালো থাকে। অবশ্য এতো ভিটিএম সরবরাহ করা এখন সম্ভব কি-না সেবিষয়ে সন্দেহ আছে। ‘আমরা নিজেদের উদ্যোগে কিছু আরএনএ এক্সট্রাক্সন কিট কিনেছি। সরকারের দেওয়া কিটের সাথে যে আরএনএ রিলিজ সল্যূশন আছে, তার পাশাপাশি আমাদের কেনা কিট দিয়েও কাজ করছি। নমুনা পরীার ফলাফল নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে জেল ইলেক্ট্রফরেসিস করে নিশ্চিত করে ফলাফল প্রদান করছি,’ বলেন ড. সেলিনা।
এর আগে যবিপ্রবি উপাচার্য অণুজীব বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন যে পদ্ধতিতে নমুনা পাঠানো হচ্ছে, তা নিয়ে বার বার আপত্তি করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। গতকাল শুক্রবারও ড. আনোয়ার বিষয়টির গুরুত্ব, বায়োসেফটি নিয়ে বিস্তারিত বলেন।