ঢাকা-নারায়নগঞ্জের পর কী করোনা সংক্রমণের হট স্পট হতে যাচ্ছে যশোর !

0

আকরামুজ্জামান ॥ ঢাকা-নারায়নগঞ্জ, গাজীপুরের পরই কী করোনা সংক্রমণের হট স্পটে পরিণত হতে যাচ্ছে যশোর ? এ প্রশ্ন এখন সবার মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। গত তিনদিনে এ জেলার করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। ৭২ ঘন্টার ব্যবধানে জেলায় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ মোট ২৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের হার দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় জেলার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার মাত্র ৪৭ টি নমুনা পরীক্ষা করে ১০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে যশোরে মোট ৪৪ জনের শরীরের করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেলো। অবনতিশীল এ পরিস্থিতিতে সবাইকে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য যশোরের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহবান জানানো হয়েছে।
সোমবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারের ল্যাবে যশোরসহ আশপাশের আরও দুটি জেলার মোট ৭২ টি করোনা সন্দেহ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে ১৮ টি নমুনার পজেটিভ রেজাল্ট পাওয়া যায়। এরমধ্যে যশোরের ৪৭ টি নমুনার মধ্যে ১০ টি ও ঝিনাইদহের ২৩ টি নমুনার মধ্যে ৮ টি পজেটিভ রেজাল্ট পাওয়া যায়। মাগুরা জেলার ২টি টি নমুনা পরীক্ষা করে কোনো পজেটিভ রেজাল্ট পাওয়া যায়নি। সবকটি নেগেটিভ এসেছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারের সহকারী পরিচালক প্রফেসর ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, নমুনা পরীক্ষার রেজাল্ট আইইডিসিআরসহ সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনকে মেইল দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আক্রান্তরা বর্তমান কোথায় আছেন তাদের অবস্থান তারা বলতে পারবেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, যবিপ্রবি জেনোম সেন্টারে যশোরসহ আরও তিনটি জেলার সন্দেহভাজন মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। যশোরের বাইরের তিনটি জেলার মধ্যে রয়েছে ঝিনাইদ, মাগুরা ও নড়াইলের। প্রতিদিন এসব জেলা থেকে রেকর্ড সংখ্যক নমুনা সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব নমুনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পজেটিভ পাওয়া যাচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টার রেজাল্টে যশোরের আক্রান্তদের মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসক ও সেবিকা রয়েছে।
যবিপ্রবি জেনোম সেন্টারের একজন গবেষক বলেন, পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে গত তিনদিনে যেভাবে পজেটিভি শনাক্ত হচ্ছে এর আগে এতো বেশি সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। অল্প সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করে তার প্রায় ৩৫ শতাংশ করোনা রোগী পাওয়া গেছে। তাহলে যশোর কী ঢাকা-নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুরের পর করোনা সংত্রমণের হট স্পটে পরিণত হচ্ছে ? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভীর ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি যে খারাপের দিকে যাচ্ছে সেটি বলার আর অপেক্ষা রাখেনা। কারণ এর আগে এর চেয়ে বেশি সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করে অল্প সংখ্যক পজেটিভ রেজাল্ট পাওয়া গেছে। এখন অল্প সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করে বেশি পজেটিভ পাওয়া যাচ্ছে। তবে এখনও সংক্রমণ মহামারী আকার ধারণ করেছে বলে বলা যাবেনা। এমন অবস্থায় সবাইকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পরামর্শ দেয় ড. তানভীর ইসলাম। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, যশোর জেলায় আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও মধ্যে ৩ জন চিকিৎসকসহ ৪ জন ও চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩ জন সেবিকা, পৌরশহরের কারিগর পাড়ার একজন নারী (গার্মেন্টসকর্মী), বাঘারপাড়া উপজেলার মহিরণ গ্রামের বাসিন্দা, খুলনা সরকারি বিএল কলেজের ছাত্র ও যশোর সদর উপজেলার ১ জন রয়েছেন। সিভিল সার্জন আরো জানান,এই পর্যন্ত যশোর জেলায় মোট ৪৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হলো। তিনি বলেন, যশোরে যে হারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে আমরা চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছি। এ অবস্থায় সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সবার প্রতি আহবান জানাচ্ছি। যশোরের হঠাৎ করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শফিউল আরিফ বলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টার করোনা রোগী পরীক্ষার সুযোগ পাওয়ার পর থেকে এ জেলার সঠিক চিত্র আসতে শুরু করেছে। এটি আমাদের জন্য ভালো খবর। কারণ পরীক্ষার সুযোগ না থাকলে সংত্রমণ আরও ভয়াবহ রূপ নিতো। তিনি বলেন, এখন আমরা যে নারায়নগঞ্জ, ঢাকা বা গাজীপুরের মতো নিরাপদ নেই এটি বলতে কোনো দ্বিধা নেই। তাই এই অবস্থা থেকে উত্তরণে এখন আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। চলমান লকডাউনের মধ্যে কাউকে ঘর থেকে বের হওয়া যাবেনা। যারা বাইরে আছে তাদের দ্রুত ঘরে উঠে যেতে হবে। জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, যশোরে যারা করোনা সংক্রণে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের অধিকাংশের শরীরে করোনার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সুতরাং কে করোনায় আক্রান্ত বা আক্রান্ত না তা বলার সুযোগ নেই। এজন্য সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বিশেষ করে বয়স্ক ও যারা অসুস্থ তাদের সিরিয়াস সতর্ক থাকতে হবে।