নারায়ণগঞ্জে মৃতের সংখ্যা ১৯, আক্রান্ত ২৬১

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনার থাবা মরণঘাতি করোনাভাইরাসের থাবায় নারায়ণগঞ্জে আশংকাজনক হারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৭ দিনে নারায়ণগঞ্জে মারা গেছে ১৯জন। এরমধ্যে বন্দরে ৩, সিটি করপোরশন এলাকায় ১১, সদরে ৫ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ২৬১জন। সূত্র জেলা সিভিল সার্জন অফিস। মোটকথা প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এতে চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় নারায়ণগঞ্জবাসী। এদিকে ৮ এপ্রিল থেকে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লকডাউন করা হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনে আর অপ্রয়োজনে মানুষ ঘরের বাহিরে বের হচ্ছেই। কোনভাবেই পুরোপুরি তাদের লকডাউনের মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। আবার খাবার সংকট ও অজানা আতঙ্কে রাতের আধারে বিভিন্ন জেলার মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ থেকে। তবে বেশিভাগই পালানোর সময় পুলিশের হাতে আটক হয়ে নিজ বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।
মৃত ১৯ জনের তালিকা: জেলা সিভিল সার্জন অফিসের সূত্রমতে, জেলায় প্রথম করোনায় মৃত্যু শনাক্ত হয় ২ এপ্রিল। এবং দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বন্দরে ২৩নং ওয়ার্ডের রসুলবাগ এলাকায়। ৩০ মার্চ ওই এলাকার পুতুল (৫০) নামে এক নারী ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনার উপসর্গ নিয়ে ওই নারী প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলে ওই নারীর পরিবার তাকে বাড়ি নিয়ে যায় এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩০ মার্চ তার মৃত্যু হয়। পরে ওই নারীর নমুনা পরীক্ষা করে ২ এপ্রিল তার দেহে করোনা সংক্রমনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
৪ এপ্রিল সকাল ৯টায় রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বড় আমবাগান (সুচিন্তানগর) এলাকার বাসিন্দা ও হোসিয়ারি ব্যবসায়ি আবু সাইদ মাতবর (৫৫)। পরে আইইডিসিআর থেকে লোকজন এসে পরীক্ষা করে করোনার কথা জানায়। এরআগে ৩ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টায় শ্বাসকষ্ট ও কাশির জন্য তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
একইদিন রাত ১০টায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ আখড়া মোড় এলাকার বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন ঘোষ (৫৮)। ২৭ মার্চ থেকে জ্বর, কাশি ছিল তার। পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। শুক্রবার সারাদিন নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করলেও কোনো হাসপাতালেই তাকে ভর্তি নিতে রাজি হয়নি। উপায় না দেখে ৪এপ্রিল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। করোনা উপসর্গ থাকায় তার নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর। নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে করোনা পজেটিভ আসে। ৫ এপ্রিল বিকাল ৪টার দিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে জামতলা হাজী ব্রাদার্স রোড এলাকার বাসিন্দা গিয়াসউদ্দিন (৬০) কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গিয়াসউদ্দিন গত ৪ এপ্রিল অসুস্থবোধ করায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৬ এপ্রিল দুপুর সোয়া ১টায় রাজধানীর কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নাসিকের ১৮নং ওয়ার্ডের শীতলক্ষ্যা এলাকার বাসিন্দা ফারুক আহমেদ (৫৫)। কিছুদিন পূর্বে করোনা উপসর্গ দেখা দেয় তার। পরে ৩ এপ্রিল তাকে রাজধানীর কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা পজেটিভ আসে। একইদিন দিবাগত রাত ১২টার দিকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়া মাসুদা প্লাজার মালিক এম এ হাসান। এরআগে তিনি করোনা উপসর্গ নিয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি হন। কয়েকদিন যাবৎ সর্দি, জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। একইদিন দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ চেয়ারম্যান বাড়ি (কৃষ্ণচূড়া মোড়) এলাকায় নিজ বাসার সামনে মারা যায় জনপ্রিয় গিটারিস্ট খাইরুল আলম হিরো (৩০)। পরে তার নমুনা পরীক্ষায় করোনা ভাইরাস পজেটিভ আসে। এরআগে ২৬ মার্চ থেকে জ্বর, ঠান্ডা, গলা ব্যাথা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। ৮ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে নাসিকের সিদ্ধিরগঞ্জের ৯নং ওয়ার্ডে শ্রমিকলীগ নেতা মজিবুর রহমান প্রধান (৫৫) করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুর্মিটোলা জেনালে হাসপাতালে মারা যান। ৯ এপ্রিল বিকালে সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম সস্তাপুরের কাঠেরপুল এলাকার ব্যবসায়ি মহিউদ্দিন বেপারী (৭০) করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি ফতুল্লার ইদ্রাকপুর এলাকার চাঁদ ডাইং অ্যান্ড প্রসেসিং মিলসের কর্ণধার ও ইটভাটার ব্যবসায়ী ছিলেন। ১২ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পাক্কা রোডের মনির হোসেন (৬৫) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। করোনার উপসর্গ থাকায় ৯এপ্রিল তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নমুনা পরীক্ষায় করোনা আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন তিনি। একইদিন কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সদর উপজেলার বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন (৪০)। নমুনা পরীক্ষায় তার দেহে করোনা ভাইরাস পজেটিভ আসে। একইদিন রাত সাড়ে ৯টায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফতুল্লার ইসদাইর এলাকার রহিমা বেগম (৫৫)। এরআগে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত রহিমা বেগম পূর্ব ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মী সুলতানের স্ত্রী। একইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাজেদা বেগম (৮৫)। পরে তাকে রাজধানীর খিলগাওয়ে দাফন করা হয়। ১৩ এপ্রিল দুপুর দেড়টার দিকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা যান ফতুল্রার ধর্মগঞ্জ মাওরা এলাকার করোনা আক্রান্ত শাহিদা বেগম (৫০)। ১৪ এপ্রিল নাসিকের ১৯নং ওয়ার্ডে বন্দরের দড়ি সোনাকান্দা এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা সরকার আরিফ (৬০) কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা গেছেন। তিনিও করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৫ এপ্রিল রাতে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক ডা. মিরারা সিকদারের মা কোহিনুর বেগম (৬০) করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। একই দিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাহবুবুর রহমান বাবু (৩৫)। তিনি সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের পশ্চিম মাসদাইর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। একইদিন দুপুরে কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বন্দরের ২৩নং ওয়ার্ডের একরামপুর এলাকার বাসিন্দা সিএসডি (খাদ্যগুদাম) এর নিরাপত্তাকর্মী মো: সুরুজ মিয়া (৫৫) মারা যান। ১৬ এপ্রিল সকালে মারা যান করোনায় আক্রান্ত হরিদাস সরকার (৫৬)। তিনি সিটি করপোরশেনের ১৪নং ওয়ার্ডের দেওভোগ আখড়া দিঘিরপাড় এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।