করোনায় টিউশন ফি মওকুফ চান শিক্ষার্থীরা, তবে…

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠরত শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের অভিভাবক করোনা পরিস্থিতির কারণে আর্থিক সংকটে পড়েছেন। তারা চাইছেন, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মার্চ ও এপ্রিল মাসের টিউশন ফি মওকুফ করা হোক। যদিও এ দাবির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। এদিকে, এ অবস্থায় বন্ধের দিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফ করার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বলছেন, টিউশন ফি এখন না দিলেও সেটি পরে একসঙ্গে দেওয়া যাবে। তাতে কোনও বিলম্ব ফি জরিমানা দিতে হবে না। একই সঙ্গে কেউ আর্থিকভাবে অসচ্ছল থাকলে সেটিও বিবেচনা করা হবে। তারা বলছেন, যেহেতু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বৃহৎ একটি অংশ টিউশন ফি। তাই মওকুফের সুযোগ নেই। যেহেতু এখন দেওয়ার সুযোগ নেই সেটি পরে দেওয়া যাবে। এছাড়া কিছু শিক্ষার্থীর আর্থিক বিষয় বিবেচনা করে টিউশন ফি মওকুফ বা অবস্থাভেদে কমানো যেতে পারে। তবে বিলম্ব ফি মওকুফ নয়, পুরো ফি মওকুফের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
অভিভাবকরা বলছেন, করোনার ছুটিতে দেশজুড়ে অচলাবস্থায় আয়-রোজগারে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। শিক্ষায় ব্যয়ের চেয়ে এই মুহূর্তে নিত্যপ্রয়োজন মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তরা। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, তা কেউ বলতে পারছেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সন্তানের স্কুলে মাসিক বেতন দেওয়ার সামর্থও নেই অনেকের। তাই পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে মানবিকভাবে সংকটময় পরিস্থিতির দিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের টিউশন মাফ করা উচিত। জানতে চাইলে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, অভিভাবকদের আয়-রোজগার স্বাভাবিক না হলে কীভাবে বেতন পরিশোধ করবেন? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ভতুর্কি দিতে হবে। সরকার বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিচ্ছে, সেই প্রণোদনা বেরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিলে অভিভাবকরা উপকৃত হবে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, যতদিন করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, ততদিন বেতন মওকুফ করতে হবে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফৌজিয়া বলেন, এখন একটি দুর্যোগকালীন সময় যাচ্ছে। এ সময়ে সবকিছুই বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। আর আমাদের প্রতিষ্ঠানে সব শ্রেণি—পেশার মানুষের সন্তান পড়াশোনা করে থাকে। এখন অনেকের আয়-রোজগার নেই। তাদের সন্তানদের পড়ালেখার জন্য তো সুযোগ দিতে হবে। তাই আমাদের আপাতত সিদ্ধান্ত বিলম্ব ফি নেওয়া হবে না। এছাড়া আর্থিক দিক বিবেচনা করে ও গভর্নিংবডির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কারো কারো ফি মওকুফ বা কমানো হতে পারে।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহানআরা জানান, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এই সময়টায় বিলম্ব ফি দিতে কোনও জরিমানা হবে না। এখনো কোনও শিক্ষার্থীর টিউশন ফি কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কারো পরিবারের অর্থনৈতিক সংকটে বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের অধ্যক্ষ ড. উম্মে সালেমা বলেন, শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বা বেতন কোনও কিছুর মওকুফের সিদ্ধান্ত হয়নি। এ সংক্রান্ত কোনও নির্দেশনা আমাদের কাছে আসেনি। তবে অভিভাবকদের জন্য একটু ছাড় দিতেই পারি। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, টিউশন ফি, বেতন ও অন্যান্য বিষয়ের ওপর নির্ভর করেই চলে আমাদের প্রতিষ্ঠান। তবে সরকার থেকে যদি বিশেষ কোনও নির্দেশনা আসে সেটি মেনে নেওয়া হবে। নীলক্ষেত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান, এখন পর্যন্ত টিউশন বেতন মওকুফের কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের হয়নি। তবে অনেক অভিভাবক অর্থনৈতিক সংকটে আছেন এ সময়ে। সেটি অবশ্যই আমাদের মাথায় আছে।
সিদ্ধেশরী গালস স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শাহাব উদ্দিন মোল্লা জানান, বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় করোনাকালে বেতন গ্রহণে বিলম্ব হলে অভিভাবকদের কাছ থেকে জরিমানা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে পরিচালনা পর্ষদে। আর কেউ আর্থিকভাবে অসচ্ছল থাকলে সেটিও বিবেচনা করা হবে। এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মো. বেলাল হোসাইন বলেন, বেতনের বিষয়ে হয়তো সিদ্ধান্ত আসতেও পারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, আমাদের সকরারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দুই ধরনের প্রতিষ্ঠান টিউশন ফির বড় পার্থক্য রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি বেশি দিন বন্ধ রাখতে হয় তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না