আসুন, জীবনের গান গাই

0
আমিরুল আলম খান
প্রথমেই বলে নিই, করোনাকালে (কোভিড-১৯) সবার আগে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। ঘনঘন সাবান-পানি দিয়ে হাতধোঁয়া, হাঁচি-কাশি থেকে দূরে থাকা, মাস্ক ব্যবহার করা, দরকারে ঘরবন্দি থাকা, নিজে সুস্থ্য থাকা ও অন্যকে সুস্থ্য থাকতে সাহায্য করা এ সময়ের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। এছাড়া আছে সরকারের আদেশ মেনে চলা, গুজব না ছড়ানো, গুজবে কান না দেয়া, দরকার মত ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নেয়া ও তা মেনে চলা খুব জরুরি।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার বলছে, কোভিড-১৯-তে মৃত্যুহার ৩.৪% এবং অধিকাংশ রোগীই ঘরে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু তাহলে এত আতংক কেন? যুগে যুগে মানুষ প্লেগ, যক্ষা, কুষ্ঠ, কলেরা, গুটি বসন্ত, ধনুস্টংকার, হাঁপানি, গনোরিয়া, সিফেলিস কত শত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কত নগর, জনপদ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে মাড়ি মড়কে সে হিসেব অনেক লম্বা।
একটু পিছন ফিরে দেখা যাক। ঠিক ১০২ বছর আগে, ১৯১৮ সালে দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল স্প্যানিশ ফ্লু। আর তাতে মারা গিয়েছিল প্রায় ৫ কোটি মানুষ। সে সময় পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ১৮০ কোটি। এবার যেমন চীন থেকে কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে সেবার তা ছড়িয়েছিল ইউরোপ থেকে। আমেরিকা ঘুরে তা এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ভারতেও প্রচুর লোক মারা গিয়েছিল স্প্যানিশ ফ্লুতে। তখনও মানুষ তা চিকিৎসার ওষুধ জানত না।
কী পার্থক্য স্প্যানিশ ফ্লুর সাথে কোভিড-১৯ ভাইরাসের? স্প্যানিশ ফ্লুর তুলনায় কোভিড-১৯ বেশি ছোঁয়াছে, তাই দ্রæত ছড়ায়। আর আক্রান্ত হবার সাথে সাথেই অনেকের মধ্যে এর লক্ষণ বোঝা যাচ্ছে না।
কিন্তু মূল আতংকের জায়গাটি অন্যত্র। সেটি হল, ১৯১৮ সালের তুলনায় এখন পৃথিবী অনেক ছোট হয়ে গেছে। কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রুটি-রুজি, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি-কূটনীতি, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, বিলাসিতা, প্রমোদ, ভ্রমণ কত কাজেই না মানুষ ছুটছে দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্তে। তাই ভীষণ ছোঁয়াচে কোভিড-১৯ নিয়ে এত শংকা, এত উদ্বেগ। তাছাড়া এ যুগে তথ্য-আদানপ্রদান খুব সহজ হয়ে গেছে। সামান্য একটা স্মার্ট ফোন দিয়েই মানুষ মুহূর্তে দুনিয়ার যে কোন প্রান্তে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। এর সুফল, কুফল দুটোই বিপুল। আবার মিডিয়া ছুটছে পাল্লা দিয়ে। সেখানে সত্য-মিথ্যার মিশেল, ইচ্ছাকৃত বিকৃতি অতি সাধারণ ঘটনা।
সবার উপর আছে বিশ্ব মোড়লিতে দুর্নিবার নেশা। সে মোড়লি রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে, প্রযুক্তিতে এবং কোন বিষয়ে নয়? কিন্তু আসল মোড়লি সম্পদ লুণ্ঠনের। নিজ শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার। বিশ্ব কর্তৃত্বের। ভাইরাস শুধু প্রাকৃতিকভবেই তৈরি হয় না, ল্যাবেও তৈরি করা যায় এবং মানুষ তা করেও। শত্রুদেশের মানুষের বিরুদ্ধে নানা রকম ভাইরাস ব্যবহারের নজির আছে অতীতে, এমন কি প্রাচীন কালেও। কোভিড-১৯ নিয়েও কিন্তু সে তরজা জারি আছে। পরাশক্তি হিসেবে টিকে থাকা এবং পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবার লড়াইয়ের খবর আমরা শুনে শুনে, দেখে দেখে ক্লান্ত, উৎকণ্ঠিত।
জীবন মানেই যুদ্ধ। সে যুদ্ধের রকমফের অনেক। একুশ শতকের কথাই শুধু বলি। এ শতকের প্রথম বছরে জন্ম নেয়া শিশুর বয়স এখন ২০। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে, ১৯৭১ সালে আমি যখন প্রত্যক্ষ স্বাধীনতাযুদ্ধের ময়দানে ছিলাম তখন আমার বয়স ছিল ১৮। তাই বলছি, একুশ শতকের গোড়ায় জন্ম নেয়া শিশুর অভিজ্ঞতা হল প্রতিদিন দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে সামরিক হামলায় নগর জনপদ বিরাণ হবার খবর। শত শত মানুষকে খুন করে উল্লাস প্রকাশের ছবি। প্যালেস্টাইন, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, কসোভো, বসনিয়া, হার্জিগোভিনিয়া, সুদানে মানুষ খুনের কী জঘন্য খেলা! ঘরহারা মানুষের হাহাকার, অনাহার, মৃত্যুর করুণ চিত্র। ভূমধ্যসাগর কিংবা বঙ্গোপসাগর, থাই, মালয় কিংবা মেক্সিকো সাগরে কত শত মানুষ ডুবে মরছে শুধু একটু বাঁচার জন্য? কত মানুষ প্রতিদিন খুন হয় আমাদের দেশে রাস্তায় লোভী মালিক, বেপরোয়া ড্রাইভারের হাতে? দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে মাটি, পানি, বাতাস দূষিত করে প্রতিদিন কত মানুষকে হত্যা করার খেলা চলছে? দেশে দেশে খাদ্যে বিষ মিশাচ্ছে কারা? কারা ওষুধে ভেজাল মেশায়? কত প্রাণ তাতে ঝরে যায়? তারচেয়েও কি কোভিড-১৯ বেশি ভয়ংকর মনে হয়?
খবরে বলা হচ্ছে ২১০টি দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছে। কথাটি যেমন ঠিক, তেমনি তা বিভ্রান্তিকরও বটে। ১-৫০ জন আক্রান্ত হয়েছে এমন দেশের সংখ্যা ৬৩। আর ১৯টি দেশে আক্রান্ত ৫০-১০০ জনের মধ্যে। ১৪ দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ১০০ থেকে ২০০ জনের মধ্যে। আক্রান্তের সংখ্যা ২০১ থেকে ৫০০ জনের মধ্যে এমন দেশ ২৫টি। এভাবে নিচের টেবিল তৈরি করা হয়েছে। কোভিড-১৯এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার ভিত্তিতে তৈরি এই তালিকাটা দেখতে পারেন।
আক্রান্তের সংখ্যা       দেশের সংখ্যা     আক্রান্তের সংখ্যা        দেশের সংখ্যা
১-৫০                           ৬৩                  < ১০০০০                    ১৯
< ১০০                         ১৯                   <১০০,০০০                   ৪
< ২০০                         ১৪                   <১০০,০০০                   ৪
< ৫০০                         ২৫                   <২০০,০০০                   ৪
< ১০০০০                    ১৯                    ৫০০,০০০+                  ১
এবার মৃত্যুর হিসেব নেয়া যাক। দুনিয়ার ৫০টি দেশে একজনও মারা যায় নি। আর মাত্র ১জন করে মারা গেছে এমন দেশের সংখ্যা ১৬টি। এছাড়া ২জন করে ১৪টি, ৩ জন করে ১০টি, ৪জন করে ৮টি ৫জন করে ৫টি, ৬জন করে ৬টি, ৭জন করে ৫টি, ৮জন করে ৬টি, ৯জন করে ৬টি, ১০জন করে ৩টি দেশে মারা গেছেন। অর্থাৎ, ১০ জন বা তার নিচে মারা গেছে এমন দেশে সংখ্যা ৭৯টি দেশ।
কিন্তু এসব খারাপ খবর নিয়ে আজ কথা নয়। এ কথা সত্য, করোনাভীতি সমস্ত পৃথিবীকে থামিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি এ কথাও সত্য, এই মহাদুর্যোগকালেও পৃথিবীতে করোনায় সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার অতি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র। প্রাণহানীর বিবেচনায় তা অতি নগণ্য। যে মুহূর্তে এ নিবন্ধ রচনা করছি (১৫ এপ্রিল সন্ধ্যা) ঠিক সে মুহূর্তে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭৭৭ কোটি ৭৭ লক্ষ। আর ঠিক এ মুহূর্তে পৃথিবীতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছে ১৯,৪৬,৭৮৭ জন। আর মৃত্যু ঘটেছে ১,২১,৭১০ জনের। গত ১০৩ দিনে আরোগ্য লাভ করেছেন ৪,৬০,১২১ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ১৩,৬৪,৯৫০ জন। এর মধ্যে আশংকাযুক্ত রোগী ৫১,০৫৮ জন। বাকী ১৩,১৩,৮৯২ জন আশংকামুক্ত। পৃথিবীতে প্রতি ১০ লক্ষ মানুষের মধ্যে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে মাত্র ২৫০ জন এবং মারা গেছে প্রতি ১০ লক্ষে ১৫ দশমিক ৬ জন (সূত্র: ওয়ার্ল্ডওমিটার ডট ইনফো)।
এরপরই আসবে ভয় না পেয়ে সাবধান হওয়ার প্রসঙ্গটি। মনে রাখতে হবে, দুনিয়ায় এ রকম সংকট বারবার এসেছে এবং মানুষ সে সব সংকট মোকাবেলা করেই টিকে আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে, থাকতে হবে। এটাই জাগতিক নিয়ম। এটাই বিজ্ঞান, এটাই ধর্ম। পৃথিবীতে কোটি কোটি কোটি প্রাণ ও জড়ের মধ্যে বহুজটিল আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। তা একই সাথে বন্ধনের এবং দ্বন্ধের। এর অন্যথা হবার নয়। একের বৃদ্ধি অন্যের বিনাশে; ঘুরিয়ে বললে, একের বিনাশে অন্যের বৃদ্ধি। এ জগৎ-ধর্ম মানতেই হবে। ধর্ম বলি, বিজ্ঞান বলি, প্রকৃতি বলি কোন ক্ষেত্রেই এর অন্যথা হবার নয়। কোন শাস্ত্রই তা বলে নি। সকল ধর্মীয় গ্রন্থে প্রাণ ও জড়ের মধ্যে বহুজটিল আন্তঃসম্পর্কের কথা বারবার বলা হয়েছে। ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রকৃতি বিজ্ঞান বলি, ফলিত বিজ্ঞান বলি, চিকিৎসাবিজ্ঞান বলি, সব বিজ্ঞানই এ কথা সমান গুরুত্ব দিয়ে বলছে। আধুনিক কালে বাস্তুসংস্থানবিজ্ঞান বা ইকোলজি অনেক বিকশিত হয়েছে। সে বিজ্ঞানের চর্চাই হল এই বস্তু-প্রাণপুঞ্জ-শৃঙ্খল অনুসন্ধান করা। এ কালের প্রকৃতি ও পরিবেশবাদীরা এ মহাসত্য সকলের সামনে শুধু তুলেই ধরে নি, বারবার সতর্ক করে চলেছে, বিশ্বব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলেছে। বিশ্বের তাবৎ পুরাণ, লোকগাথা, শিল্প, সাহিত্য এই সত্য উচ্চারণ করে আসছে যুগের যুগ ধরে। হাজার হাজার বছর ধরে বিপুল মানব-জ্ঞান গড়ে উঠেছে এই সত্য উপলব্ধির চেষ্টায়। এবং এ এক অনন্ত চর্চা। এর কোন শেষ নেই, কোন পরিসীমা নেই।
আসুন, আজ শুধু আশার কথা, বাঁচার কথা বলি। আসুন, আমরা মানবতার গান গাই। বেঁচে থাকার স্বপ্ন বুনি। মানুষের পাশে গিয়ে বলি, ভয় নেই; কেউ একা নয়, আমরা আছি একসাথে। এ যুদ্ধ সবার। একসাথে যুদ্ধে লড়ব এবং জিতব। মরণ পায়ে দলেই মানুষ প্রতিদিন বেঁচে থাকে। যুদ্ধের ময়দানে অকাতরে প্রাণ উৎসর্গ করে। আমরা তাদের বীর বলে সম্মান করি, পূজা করি।
সে লড়াইয়ের ময়দানে কিন্তু আজও সত্যিই লক্ষ লক্ষ মানুষ সামিল আছে। এ কথা ঠিক অনেক কিছুই বন্ধ হয়ে হয়ে গেছে, বন্ধ করতে হয়েছে। তারপরও ভাবুন একবার, এখনও আমাদের, সারা পৃথিবীর নিত্যদিনের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, খাবার সরবরাহ চালু আছে। প্রতিদিনের খবর পাচ্ছি নানা প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক যোগাগে মাধ্যমে। সেজন্য কত কত সেবা প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে হয়েছে? চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ভাইবোনেরা আছেন যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইনে। আছেন প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেবাদানকারী কর্মীবাহিনী। কৃষক, মুটে. মুজুর, ছোট-বড় দোকানী, ফার্মেসী, পরিবহণ শ্রমিক, সাফাই কর্মীদল সবাই। জীবন বাজি রেখে তারা আমাদের রক্ষায়, প্রাণ বাঁচাতে লড়াই করছেন। এ যুদ্ধ চলছে দুনিয়া জুড়ে।
চীন, ইরান, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রই শুধু নয়, লড়ছে সারা পৃথিবী। সে যুদ্ধে ইতিমধ্যেই জিতেছে চীন। শুধু চীন নয়; জেতার তালিকা অনেক লম্বা। জিততে চলেছে ইরান, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেনও। মানুষ অপেক্ষা করছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রও জিতবে। এসব নিয়ে সারা দুনিয়া তোলপাড় চলছে। প্রচার তাণ্ডবে শোনা যাচ্ছে না বিজয়ের আরও বড় বড় কাহিনিগুলো। তার কিছু না বললে এ লেখা অর্থহীন হবে। যেখানে ইউরোপ, আমেরিকার মত উন্নত ধনী দেশসমূহে কোভিড-১৯ ত্রাস সৃষ্টি করেছে সেখানে চীনের পড়শি দেশ ম্যাকাও, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, ভুটান, নেপাল, মঙ্গোলিয়া, আজারবাইজান, কিরগিস্তান, আফগানিস্তান কিংবা একটু দূরের মালদ্বীপ, মাদাগাস্কার, ইয়েমেন ইত্যাদি অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে। এসব দেশে কেউ মারা যায় নি। কোভিড-১৯ থামাতে আফ্রিকা, কিংবা দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সাফল্য চোখ ধাঁধানো। সেসব কাহিনি সামনে আসছে না, আনছে না কেউ। এসব নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার।
চীন তার অভিজ্ঞতাকে সারা বিশ্বের স্বার্থে শুধু ব্যবহার করতে দিচ্ছে তা নয়, ইরান, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্যসহ দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে চিকিৎসামগ্রীসহ স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়েছে। দুনিয়ার সবচেয়ে দুর্যোগপূর্ণ দেশে তারা জীবন বাজি রেখে সেবা দিচ্ছেন। মেডিকেল ব্রিগেড পাঠিয়েছে কিউবা এবং ভেনিজুয়েলা। দুনিয়ার ৬০টির বেশি দেশে তারা কাজ করছেন।
মহাদেব সাহা যেমন গেয়েছেন,
আবার উত্থান হবে মানুষের, জেগে উঠবে প্রাণের প্রবাহ/
বৃদ্ধি পাবে বন ও বৃক্ষের পরমায়ু/
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হবে/
লোকালয়;/
ফুটে উঠবে শস্যবীজ, উচ্ছলিত হবে জলধারা/
শিশুদের পবিত্র হাসিতে আলোকিত হবে গৃহাঙ্গন,/
কোথাও থাকবে না ক্রোধ, উন্মত্ত থাবার চিহ্ন,/
সবখানে স্তব্ধ হয়ে যাবে শিকারির রক্তমাখা তির।/
আবার উঠবে ফুটে কাননে কুসুম, অঙ্কুরিত হবে নবকিশলয়/
গন্ধে ও গুঞ্জনে মুখরিত হবে বনভূমি,/
আবার গাইবে পাখি, আবার ধ্বনিত হবে রাখালের বাঁশি;/
আবার উঠবে জেগে নিদ্রিত শহর,/
পুনরায় মানুষ কল্যাণব্রতে দীক্ষা নেবে, হবে জাগরণ।/
কোথাও মানুষ থাকবে না নতমুখ, ব্যথিত কাতর/
উদ্যানে আবার প্রস্ফুটিত হবে পুষ্পরাশি,/
সব দুঃখ দূর হবে, উঠে দাঁড়াবে মানুষ/
আবার ঘোষিত হবে মানুষের জয়বার্তা, ধ্বনিত হবে/
মানুষের জয়।
আপাতত এ কথা বলে শেষ করি, মানব জাতির দীর্ঘ দীর্ঘ ইতিহাস এমন অনেক যুদ্ধ জয়েরই ইতিহাস। তাই আসুন, আমরা একসাথে লড়ি, একসাথে বিজয় অর্জন করি। সাহস হারানোর কিছু নেই। সে জন্যই আল্লাহ মানুষকে করেছেন ‘আশরাফুল মখলুকাত’, ঈশ্বরের ‘অমৃস্য পুত্র।
আমিরুল আলম খান, যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান
[email protected]