জাহাজ নির্মাণ শিল্পে দশ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিশ্বব্যাপী নোভেল করোনা (কোভিড-১৯) ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ায় কারণে গত তিন মাস দেশে বিদেশি ক্রেতা না আসায় ও কাচাঁমাল আমদানি বন্ধ থাকার কারণে জাহাজ নির্মাণ শিল্প ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এতে এ খাতে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা আর্থিক লোকসান হবে বলে আশঙ্কা করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। স্থায়ী ও অস্থায়ী এক লাখ শ্রমিক চাকুরিচ্যুত বা মাসিক বেতন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। আর জাহাজ নির্মাণ শিল্পে চলমান সংকট আরো প্রকট হবে। এতে বেশ কিছু শিপইয়ার্ড অনিদিষ্টকালের জন্য লগডাউন হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড অব শিপ বিল্ডিং ইন্ডাট্রিজ অব বাংলাদেশ (এইওএসআইবি) সূত্রমতে, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বন্ধ হয়ে আছে বেশিভাগ জাহাজ নির্মাণ কারখানা ও সহায়ক যন্ত্রপাতির কারখানাগুলো। যার ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশ। গত ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী জুন পর্যন্ত হিসেবে দেখা যায়, এইওএসআইবি’র অর্ন্তভুক্ত প্রায় ২০টি জাহাজ নির্মাণ শিল্প এবং অ্যাসোসিয়েশনের অর্ন্তভুক্ত ছাড়া আরও প্রায় ৮০টি জাহাজ নির্মাণ শিল্প থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এ শিল্পের সঙ্গে প্রায় দুই লক্ষাধিক জনবল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এছাড়া গত কয়েক বছর ধরে জাহাজ নির্মাণ শিল্প অনেক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর বর্তমান অবস্থা চলমান সংকটকে আরো প্রকট করবে। এতে কিছু কিছু শিপইয়ার্ড অনির্দিষ্টকালের জন্য লগডাউন হয়ে যাবে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এইওএসআইবি থেকে কিছু দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রমিক ও কর্মচারিদের আগামী পর্যন্ত বেতন বাবদ প্রতিমাসে প্রত্যেক কর্মচারিকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান। পাশাপাশি জাহাজ নির্মাণ শিল্পগুলোর মাসিক বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল ও পানির বিল ডিসেম্বর পর্যন্ত মওকুফ, শ্রমিক কর্মচারিদের বেতন ভাতাদির উপর আয়কর মওকুফ, শিপইয়ার্ডগুলো চালু রাখার ক্ষেত্রে দুই শতাংশ সরল সুদে ওয়াকিং ক্যাপিটাল হিসাবে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করা। সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব দাবির বিষয় জানানো হয়েছে।
নৌসম্পদকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প
এ খাতের উদ্যোক্তা ও সংগঠনের নেতারা বলেন, বাংলাদেশি শিপইয়ার্ডগুলো এলসিটি, সার্ভে জাহাজ, টাগ বোট, ফিশিং ট্রলার, কনটেইনার ভেসেল, অয়েল ট্যাংকার, কার্গো ভেসেল, বাল্ক কেরিয়ার, ফিসিং ট্রলার, অফসোর পেট্রল ভেসেল, বার্জ, এলএনজি টার্মিনাল, ওয়ার্ক বোট, প্যাসেঞ্জার ভেসেল, প্যাসেঞ্জার ফেরি, ড্রেজার নির্মাণে সক্ষম। এ খাতের ২০টি কোম্পানি দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে আন্তর্জাতিক মানের জাহাজ রপ্তানি করতে সক্ষম। বাংলাদেশ ‘শিপবিল্ডিং নেশন’ হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেছে। এ অগ্রযাত্রাকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য বর্তমান সরকারের পরিকল্পনার রয়েছে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, করোনা সৃষ্ট পরিস্থিতি বহাল থাকলে শিপইয়ার্ডগুলোর পক্ষে তাদের অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার যে খাতগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে তার মধ্যে জাহাজ নির্মাণ শিল্প অন্যতম। আর এ অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য সরকারের কাছ থেকে আর্থিক প্রণোদনা চান তারা।
এইওএসআইবি’র সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে আমাদের জাহাজ নির্মাণ খাতে অস্থায়ী এক লাখ শ্রমিক চাকরি হারিয়ে বেকার হয়েছে। করোনার কারণে বেকার বসে থাকা এক লাখ স্থায়ী শ্রমিকের বেতন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল, ব্যাংক ঋণের সুদসহ অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতিদিন দশ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। এরমধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে সম্ভাব্য ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্ডারের ব্যবসা হাত ছাড়া হবে। তাদের তো অবস্থা খারাপ। এছাড়া জাহাজ নির্মাণের জন্য যেসব কাঁচামাল প্রয়োজন হয় তার প্রায় ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। সব মিলিয়ে জাহাজ নির্মাণ শিল্প চরম সংকটে পড়বে। হয়ত প্রাথমিকভাবে আমাদের দশ হাজার কোটি লোকসান হবে। আর করোনার সার্বিক পরিস্থিতি বিচেনায় পরে সঠিক ক্ষতি হিসাব করা যাবে। এ খাতকে রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকে অনুদান প্রদানের অনুরোধ জানান। আশা করছি প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবিগুলো সদয় বিবেচনা করবেন।
উল্লেখ, রপ্তানিমুখী জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন এইওএসআইবি’র তথ্যানুযায়ী, গত এক দশকে (২০০৮-২০১৮) বিশ্বের ১৫টি দেশে মোট ৪৭টি জাহাজ রপ্তানি হয়েছে, যা থেকে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স অর্জিত হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার দক্ষ শ্রমিক তৈরি হয়েছে এবং এই শিল্পের সহযোগী অর্থাৎ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ প্রায় ১৭টি (ছোট ও মাঝারি) শিল্প গড়ে উঠেছে। এ শিল্প এখন একটি উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন বৃহৎ শিল্প হিসাবে প্রকাশ পেয়েছে, যা বাংলাদেশের সুনাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে।