গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে চারগুণ: মিষ্টির দোকান ও পরিবহন বন্ধ চরম দুর্দিন গাভী পালনকারীদের

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ করোনাভাইরাসের প্রকোপে দেশব্যাপী দোকানপাট ও গণপরিহহন বন্ধ থাকার কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গাভী পালন খামার ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, মিষ্টির দোকানগুলো খুলতে না দেয়ায় খামারিরা তাদের উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে পারছেন না। এ সময়টা খামারের দুধ বিক্রি অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। কোনো কোনো খামারি প্রতি কেজি ৭০ টাকার গাভীর দুধ ৪০ টাকায়ও বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। একই সাথে গরুর খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় চরম দুর্দিনে দিন কাটাচ্ছেন গাভী পালন খামারিরা।
বিশ^ব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দোকানপাট ও গণপরিবহন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এই সময় মানুষকে ঘরের মধ্যে অবস্থান নেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনের বাইরে বের না হওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীগুলো মানুষকে সতর্কতা অবলম্বনের দায়িত্ব পালন করে চলেছে। এই অবস্থায় মানুষ ঘরবন্দি ও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
এদিকে, সব কিছু অচল হয়ে গেলেও গাভী পালন খামারিদের তৎপরতা থামিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যথারীতি গরুর দুধ দোয়ানো এবং গরুকে সময়মত খাবার দেয়ার কাজ তাদের চালিয়ে যেতে হচ্ছে। গরুর স্বাস্থ্য এবং দুধের যোগান ঠিক রাখতে এ কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেয় বলে খামারিরা জানিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে খামারে উৎপাদিত দুধ বিক্রি করার জায়গা নেই, মিষ্টির দোকানগুলো বন্ধ, বাধ্য হয়ে অনেক খামারিকে পানির দামে দুধ বিক্রি করে খামার সচল রাখতে হচ্ছে বলে তারা জানান।
যশোর জেলা দুগ্ধ খামার সমবায় সমিতির সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন রবিবার এ প্রতিবেদককে জানান, করোনাভাইরাসের প্রকোপে কার্যত লকডাউনে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। খামারে উৎপাদিত দুধ বিক্রি করার জায়গাগুলো বন্ধ হয়ে আছে। দোকানে দই-মিষ্টি তৈরির কাজ বন্ধ। যানবাহন বন্ধ থাকায় দূরবর্তী স্থানে দুধ পাঠানো যাচ্ছে না। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারাও খামারে দুধ সংগ্রহ করতে আসতে পারছেন না। খামারিরা প্রতি কেজি গাভীর দুধ বিক্রি করেন ৭০ টাকায়। কিন্তু এই সময়ে অনেক খামারিকে ৪০ টাকা কেজি দরেও দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। তাছাড়া বাড়তি দুধ বাছুরকে খাইয়ে দেয়া হচ্ছে।
সমিতির সেক্রেটারি এবং ‘জয়নাল ডেইরি অ্যান্ড অ্যাক্সেসরিজ’ এর স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীন আরও জানান, খামারের গাভীগুলোকে ঠিকমত খাবার দিয়ে যেতে হচ্ছে। সকাল-বিকেল দু বেলা দুধও দোয়াতে হচ্ছে। নইলে গাভীর দুধের যোগানে বাধাগ্রস্ত হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে গাভী দুধ দেয়া বন্ধ করে দিতে পারে। তাই এই লকডাউনের সময়ও খামারিদের কর্মকা- সচল রাখতে হচ্ছে। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় স্থানীয়ভাবে গরুর খাবার সংগ্রহ করে চাহিদা মিটিয়ে যেতে হচ্ছে। গরুর খাবারের দামও প্রচুর বেড়ে গেছে। এক কাউন (১৬ পণ) বিচালি কিনতে হচ্ছে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায়, যা আগে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার টাকা। বেড়েছে গমের ভুসি ও ভুট্টার ভুসির দামও। বর্তমানে ১ কেজি ভুট্টার ভুসি ২৩ টাকা থেকে ২৭ টাকায় কিনতে হচ্ছে, এর দাম ছিল ১৫/১৬ টাকা কেজি। তবে এতকিছুর পরও গরুকে প্রয়োজনীয় খাবার দিতে হচ্ছে এবং সময়মত দুধও দোয়াতে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, তাঁর নিজের খামারে গত দুমাসে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। তিনি দুধের ব্যবহার ঠিক রাখার জন্য মিষ্টির দোকানগুলো সচল রাখার দাবি জানিয়েছেন, যাতে করে দই বানানোর কাজটা যেন চলে।
অপরদিকে শহরের মধ্যবর্তী স্থানে যেসব গাভীর খামার রয়েছে, তাদের দুধ উৎপাদন এবং বিপণনে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না বলে জানান খামারিরা। এমনই একটা খামার বেজপাড়া কবরস্থানের পূর্বপাশে ‘ রাবেয়া ডেইরি ফার্ম’। এই ফার্মের স্বত্বাধিকারী মোসাম্মাৎ রওশন আরা খাতুন রবিবার এ প্রতিবেদককে জানান, তাঁর খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ২২ টা গাভী আছে। এখন দুধ দিচ্ছে ১২ টা। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে দু বার তাঁকে গাভীর দুধ দোয়াতে হয়। তিনি প্রতিদিন ১৩০ কেজি দুধ পাচ্ছেন। শহরের মধ্যে তাঁর খামার হওয়ায় লোকজন বাড়িতে এসেই দুধ সংগ্রহ করতে পারছেন। তবে দোকানপাট ও গাড়ি বন্ধের কারণে দুধ বিক্রিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তাঁর একটা কারণ মানুষ কর্মহীন হয়ে ঘরবন্দি হওয়ায় নগদ টাকার অভাব দেখা দিয়েছে।