করোনায় কর্মহীন মানুষ, বাড়ছে ক্ষুধার জ্বালা

0

খুলনা প্রতিনিধি॥ বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। বাংলাদেশেও প্রতিদিন নতুন আক্রান্ত ও মৃতের খবর আসছে। খুলনা বিভাগে এখন পর্যন্ত কয়েক ধাপে অনেক মানুষকে হোম কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়েছে। এলাকায় জনসমাগম কমাতে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রাশাসন। ফলে মানুষের আনাগোনা কমার পাশাপাশি জনজীবনেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কাজ করতে না পেরে অনাহারে থাকছেন দিনমজুররা। তাদের জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে খাদ্য সামগ্রীও সরবরাহ করাও হচ্ছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত না। অনেক এলাকায় মুখ চিনে চিনে এসব সহায়তা সামগ্রী বিতরণের অভিযোগও উঠেছে।
দাকোপ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শেখ যুবরাজ জানান, মহামারির সময়ও মুখ দেখে নিজের লোকদের মধ্যে বরাদ্দের মালামাল বিতরণ করা হচ্ছে। উপজেলার আনন্দনগর গ্রামের দিনমজুর হজরত আলী (৫৫) বলেন, ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হয়, এখন করোনার কারণে ভয়ে বাড়িতে বসে আছি। সারাদিনে একবেলা খাবার পাই না।’ বটিয়াঘাটার হালিয়া, বুনারাাবাদ, কাশিয়াডাংগা, আমতলা, গৌরম্ভাসহ বিভিন্ন দিনমজুররা জানান- তারা একদিকে আতঙ্কিত। অপরদিকে কাজ না করলে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার দায়। সব মিলিয়ে ভালো নেই তারা। নগরীর শ্রমিক সাঈদ বলেন, ‘ কী করবো, ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। ছেলে-মেয়েদের মুখে আহার দিতে হবে। কারও কাছে ধার চেয়েও পাইনি।’
নির্মাণ শ্রমিক ওসমান গনী বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের মধ্যে সব কিছু বন্ধ থাকায় আমরা যারা দিনমজুরের কাজে নির্ভর করি, তারা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছি। সামান্য যা সঞ্চয় ছিল, তা শেষ হয়ে গেছে।’ সুতারখালি গ্রামের কালিদাস মণ্ডল জানান, নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরে সংসার চালান তিনি। সরকারি বরাদ্দের কথা জানেনই না। কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মণ্ডল বলেন, এই ইউনিয়নে সরকারের দেওয়া ৪.৫ মেট্রিক টনের সঙ্গে ব্যক্তিগত অনুদান মিলিয়ে ৪৫০ পরিবারেকে সাহায্য দেওয়া হয়েছে। তবে জনসংখ্যার তুলনায় বরাদ্দ কম। গরীব শ্রেণিকে খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হলে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কয়রার হোটেল ব্যবসায়ী আনছার আলী বলেন, ‘হোটেলে ক্রেতাদের চাপ নেই। এভাবে চললে খাবার হোটেল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কয়রায় করোনাভাইরাসে আক্রন্ত কোনও রোগী পাওয়া যায়নি। তবে আমরা বিদেশ ফেরতদের প্রতি সর্তক রয়েছি। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতনতায় করার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
করোনা আতঙ্কের মধ্যে বেকাদায় পড়ছেন নগরীর দিনমজুররা। খুলনা সিটি করপোরেশনের ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র ১ আমিনুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু ত্রাণ আসছে। আমরা দিচ্ছি কর্মহীন দিনমজুরদের।’ খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গরিব-দিনমজুর-কর্মহীন ব্যক্তিদের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করছি।’ খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ‘সংকটময় মুহূর্তে গরিব পরিবারের প্রতি সরকার খুবই আন্তরিক। একটি পরিবারও যাতে না খেয়ে না থাকে, সেজন্য সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি করা হচ্ছে।’