গভীর অনিশ্চয়তায় ভারতের কাজুবাদাম খাত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নভেল করোনাভাইরাসকে বেশ আগেই বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিইএইচও)। চীন ছাড়িয়ে ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর কোনায় কোনায়। বাদ যায়নি ভারতও। প্রাণঘাতী ভাইরাসটির বিস্তার রোধে দেশজুড়ে তিন সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। এ ঘোষণার কারণে দেশটির কাজুবাদাম খাতে বড় ধাক্কা লেগেছে।
লকডাউনের কারণে ভারতের স্থলবন্দরগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত ও গণপরিবহন চলাচল স্থগিত রাখা হয়েছে। বড় বড় শহরে বাধ্যতামূলক আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনের আদেশ জারি হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে সীমা টানা হয়েছে। থমকে গেছে গোটা বাজার ব্যবস্থা। এর সঙ্গে সঙ্গে দেশটির কাজুবাদাম রফতানি খাত ঘিরে দেখা দিয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা। এ পরিস্থিতি দেশটির কাজুবাদাম আমদানি, রফতানি কিংবা ব্যবহার—সব খাতেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
ভারত বিশ্বের শীর্ষ কাজুবাদাম ভোক্তা ও আমদানিকারক দেশ। ভিয়েতনাম ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কাজুবাদাম আমদানি করে দেশটি। নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকেই পণ্যটির বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল এলোমেলো হয়ে পড়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে খাদ্যপণ্যটির আমদানি কমিয়ে এনেছে দেশটির ব্যবসায়ীরা।
এদিকে পণ্যটির আমদানি কমার জেরে দেশটির কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত শিল্প ঘিরে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কাজুবাদাম আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করে ভারত, যার অধিকাংশ প্রক্রিয়াজাত করা। দেশটি মূলত অপ্রক্রিয়াজাত কাজুবাদাম আমদানি করে তা প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করে। এ খাতে প্রতি বছর যে পরিমাণ কাঁচামালের প্রয়োজন হয় তার ৬০ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে দেশটি। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই পণ্যটির আমদানি শ্লথ হয়ে পড়েছিল। লকডাউন ঘোষণার পর বর্তমানে তা স্থবির হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে দেশটির প্রায় সব রাজ্যের কাজুবাদাম প্রক্রিয়াকরণের কারখানাগুলোর কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রয়েছে। কতদিনে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দেশটির কাজুবাদাম রফতানি খাতও।
নভেল করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীতে পরিণত হওয়ার আগে খাতসংশ্লিষ্টরা ধারণা করেছিলেন, ভাইরাসটি ভারতের কাজুবাদাম রফতানি খাতে খুব অল্পই প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এর প্রভাবে সর্বোচ্চ চীনের বাজারে পণ্যটির রফতানি ব্যাহত হতে পারে। চীন এমনিতেই সবচেয়ে বেশি কাজুবাদাম আমদানি করে ভিয়েতনাম থেকে। এমনকি প্রতি বছর ভিয়েতনাম থেকে যে পরিমাণ কাজুবাদাম আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি হয়, তার ১৫ শতাংশই রফতানি হয় চীনে। ফলে ভারত থেকে পণ্যটির রফতানিতে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। তবে পরিস্থিতি পাল্টেছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে হানা দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। এ পরিস্থিতি দেশটির কাজুবাদাম রফতানি খাতকে একেবারে ধসিয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া চীন আমদানি কমিয়ে দিলে ভারতের কাজুবাদাম খাতে যে একেবারে কোনো প্রভাব পড়বে না, এমনটা নাও হতে পারে। কারণ দেশটির প্রক্রিয়াজাত কাজুবাদামের অন্যতম শীর্ষ বাজার চীন। ফলে চীন ক্রয় কমিয়ে দিলে ভারতের কাজুবাদাম প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যায়।
একই পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে পণ্যটির চাহিদার ক্ষেত্রেও। ভাইরাসটি মহামারীতে পরিণত হওয়ার পর ভারতসহ প্রধান ভোক্তা দেশগুলোয় কাজুবাদামের বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে পণ্যটির দামে। গত ফেব্রুয়ারির শুরুর দিক থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম ৩০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। পণ্যটির চাহিদা কমার জেরে কমছে দাম। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন দেশটির কাজুবাদাম ব্যবসায়ীরা।
মোদ্দাকথা, নভেল করোনাভাইরাস ভারতের কাজুবাদাম আমদানি, রফতানি ও ব্যবহার—সব খাতেই সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষণকারীরা। এফএনবি নিউজ অবলম্বনে