যেভাবে ভোট হলো ঢাকা-১০ আসনে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সকাল সোয়া আটটা। নিউ মার্কেটের বলাকা সিনেমা হল কেন্দ্রে চোখে পড়ল ছোট জটলা। কেন্দ্রের সামনে ভীড় থাকলেও ভেতরে গিয়ে দেখা গেল প্রায় সবগুলো বুথই ফাঁকা। কোনো ভোটার নেই। ঘণ্টাখানেক পর লেক সার্কাস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র। নেই কোন ভোটার। কেন্দ্রের সামনে চোখে পড়েছে শুধু সাংবাদিক, নির্বাচনী কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্ট আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। ধানমণ্ডির শুক্রাবাদের নিউ মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ভোটার উপস্থিতি ও ভোটদানের হার ছিল একেবারেই কম। ভোট কক্ষের ভেতরে পোলিং অফিসাররা গল্পগুজব করে অলস সময় পার করেছেন। নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা কেন্দ্রের সামনে বসে আড্ডা দিয়ে সময় কাটিয়েছেন।
ড. মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। সকাল থেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। ভোট কেন্দ্রে বিএনপির কোন এজেন্ট পাওয়া যায়নি। গতকাল দুপুর ১ টা ১৫ মিনিটে ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ১ নম্বর ভোট কক্ষে (পুরুষ) ভোট পড়েছিল ৯ টি। ওই কেন্দ্রের ২ নম্বর ভোট কক্ষে (মহিলা) গিয়ে দেখা যায়, দুপুর ১ টা ২০ মিনিটে ভোট পড়েছিল ১৫ টি। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মো. মনির হোসেন জানান, ভোট সকাল ৯ টার দিকে শুরু হয়েছে। ভোটারেরা কম আসছেন। ঢাকা সিটি কলেজে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও ভোটারের উপস্থিতি কম। কেন্দ্রের ২ নম্বর ভোট কক্ষে (পুরুষ) দুপুর ১ টা ৪০ মিনিটে ভোট পড়েছিল ১০ টি। এছাড়াও ৩ নম্বর ভোট কক্ষে (পুরুষ) ভোট পড়েছিল ৭ টি। ৪ নম্বর ভোট কক্ষে (মহিলা) ভোট পড়েছিল ৬ টি। প্রিজাইটিং অফিসার শফিউল ইসলামের কাছে ভোট কম পড়ার কারণ কী তা জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। দুপুর ১২ টার দিকে ধানমন্ডির গভর্মেন্ট বয়েজ স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, ১ নম্বর ভোট কক্ষে (পুরুষ) ভোট পড়েছিল ৪ টি। ৩ নম্বর ভোট কক্ষে ভোট পড়েছিল ৫ টি। প্রিজাইডিং অফিসার শামসুল ইসলাম জানান, ভোট শুরু থেকেই ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। সারাদিন এমনই চিত্র দেখা গেছে প্রায় প্রত্যেকটি কেন্দ্রে। করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্য দিয়েই গতকাল ভোট গ্রহণ হয়েছে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনের। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেয়া এই নির্বাচনে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রত্যেকটি কেন্দ্রেই ছিল ভোটাদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার সব ব্যবস্থা। তারপরও ভোটাররা ছিলেন কেন্দ্র বিমুখ। যদিও কেন্দ্রে ভোটার কম উপস্থিতিকে করোনা ভাইরাসের প্রভাব বলে জানিয়েছেন একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা মঞ্জুরুল হাসান। তিনি বলেন, এটি অবশ্যই করোনাভাইরাস এফেক্ট। সিটিতে এমনিতেই লোকজন কম। এদিন বিকাল সাড়ে চারটায় মনেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার সায়েদ আব্দুল্লাহ জানান, তার কেন্দ্রে ২৫৯৮ ভোটের মধ্যে ১৮৩ টি কাস্ট হয়েছে। এদিকে সারাদিনে নির্বাচনের চরম অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ আনেন বিএনপির প্রার্থী শেখ রবিউল আলম। তিনি দাবি করেন, কেন্দ্রগুলো থেকে তার ৮৫০ এজেন্টকেই বের করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৭ এজেন্টসহ ৯জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় একজন এজেন্টসহ অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলেও দাবি করা হয় বিএনপির পক্ষ থেকে।
পরে বিকাল সাড়ে পাঁচটায় বাংলামটরের নির্বাচনী অফিসে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন ও এর ফল বর্জন করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী শেখ রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আধিপত্য বিস্তার, দখল ও কেন্দ্রে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণে মানুষ ভোট বিমুখ হয়েছে। যে নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারলো না সে নির্বাচনে আমার দল বিএনপি এবং আমি বর্জন করছি। ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। নির্বাচনে ৩৬ টি কেন্দ্র পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কেন্দ্রগুলো ঘুরেছি। কোন কোন কেন্দ্রে ১০ থেকে ১৩ ভোট কাস্টিং হতে দেখেছি। ভোটার উপস্থিতি ছিল ভয়ঙ্কর রকমের খারাপ। অনেক কেন্দ্রে দেখেছি ৫জন করে নৌকার এজেন্ট। কিন্তু ওই কেন্দ্রে কোন ভোট পড়েনি। তাদের সবাইকে বাহির থেকে এনে এজেন্ট দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।