আতঙ্ক নিয়েই ক্লাসে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ। মিরপুরের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রভাতী শাখার ক্লাস শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয় শিফটের শিক্ষার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়। লেগে যায় যানজট। কিন্তু গতকাল ছিল ভিন্ন চিত্র। খুব স্বাচ্ছন্দ্যেই শেষ হয় আসা যাওয়ার পালা। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে ফারজানা শৈলী। তার মা বলেন, কী করবো বুঝতে পারছি না। শৈলীর সহপাঠী অনেকেই আর স্কুলে আসছে না? ভয় নিয়ে আর কতোদিন স্কুলে আনা যায়। সন্তানের জন্য অপেক্ষায় থাকা বেশ কয়েকজন অভিভাবক ছিলেন সেখানে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া আরেক শিক্ষার্থীর মা বলেন, বাড়িতে নিরাপত্তার যথেষ্ট ব্যবস্থা আছে কিন্তু স্কুলে নিরাপদ থাকা কষ্টকর।
শের ই বাংলা নগর বালিকা বিদ্যালয়েরও একই চিত্র। শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম। এই বিদ্যালয়ের ভ্যানচালক মন্টু মিয়া জানান, তার ভ্যানে ৬ জন শিক্ষার্থী। বুধবার সকলে আসলেও, পরের দিন আসে ৪ জন। আর গতকাল সেই ভ্যানে এসেছে ৩ জন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে বারবার বলা হচ্ছে জনসমাবেশ এড়িয়ে চলা। স্থগিত ও সংকুচিত করা হয়েছে অনেক অনুষ্ঠান। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোলা থাকায় শঙ্কিত অনেক অভিভাবক। তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে অপেক্ষমান অভিভাবক ইকবাল খান বলেন, জনসমাগম এড়িয়ে চলার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এটাইতো সবথেকে বড় জনসমাগম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরণের সচেতনতার কথা বলা হয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে। এ বিষয়ে সরকারি চাকরিজীবি অভিভাবক রেজাউর রহমান বলেন, এক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। প্রত্যেকের হাত ধোয়ার জন্য যে পরিমাণ সাবান বা হ্যাণ্ড স্যানিটাইজার প্রয়োজন তা সরবরাহ করতে সক্ষম কীনা এটা ভেবে দেখা প্রয়োজন। আর এরজন্য যে পরিমাণ পানি প্রয়োজন সেটির সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে কীনা প্রতিষ্ঠানগুলো তাও বিবেচনা করা প্রয়োজন।
ধানমন্ডি মডেল স্কুলের অভিভাবক রেবেকা জাহান বলেন, ধীরে ধীরে কমে আসছে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। আমরা এখানে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন মা বসি। কিন্তু আজ এসেছেন ১৪ জন। তিনি আরো বলেন, এসেম্বলি করার কথা বলা হচ্ছে ক্লাস রুমে। কিন্তু শেষে ফল কী আসবে। তিনি আরো বলেন, এই করোনা ছড়িয়ে পড়বার কারণে অধিকাংশ দেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। আমাদের দেশ ভালো আছে। তাই আমাদের আরো বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কয়েকদিনের জন্য হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা উচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের শিক্ষার্থী মাঈশা হোসেনের মা বলেন, মেয়ের লেখা পড়ায় মন নেই। সারাদিন হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত। ইন্টারনেটে দেখছে আরো আতঙ্কিত হচ্ছে। স্কুল যেতে চায়না। কিন্তু পিছিয়ে পড়ার ভয়ে জোর করে স্কুলে পাঠাই। তিনি আরো বলেন, অনেকেই আর স্কুলে নিয়ে আসছেন না।
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটরিয়ালে পড়ে অর্থ। তার মা মাহমুদা লিমা করোনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি ১০ই মার্চ ফেসবুকে লেখেন, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সনাক্ত! আজ থেকে ছেলেকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করলাম। পরিস্থিতি কেমন হবে জানিনা, তাই আমার মনে হয় সাবধানে থাকাটাই শ্রেয়। শুধু স্কুলে নয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে এই করোনা আতঙ্ক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবির চৌধুরী বলেন, কোন ভার্সিটি খোলা থাকতে হবে? আমাদের কোন ক্ষতি হলে এর দায়ভার কে নেবে? অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আসতে চায়না কিন্তু আসতে হয় বাধ্য হয়ে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চয়নিতা চাকমা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে আমাদেরই ক্ষতি তবে। কিন্তু একবার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তা হবে আরো ভয়াবহ। তাই কিছু দিনের জন্য হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হোক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরণি সেমন্তি খান ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন, সঙ্গে প্ল্যাকার্ড হাতে ছবি। প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘করোনা প্রতিরোধে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করো। সংক্রমণ ঠোকাও। #করোনার-সময়-ক্লাস-নয়। এছাড়াও ফেসবুকে ‘করোনা প্রতিরোধে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করো’ নামে একটি ইভেন্ট গ্রুপ খোলা হয়েছে। এদিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা ভাইরাসের সময় ক্লাস না করতে চেয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করছেন শিক্ষার্থীরা। নোয়াখালী বিজ্ঞাণ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দাবি তুলেছেন করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে ক্লাস না নেবার জন্য। আবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা দিয়েছেন অনির্দিষ্ট কালের জন্য ক্লাস বর্জনের ঘোষণা।