নানা চাপে হাতছাড়া সিনোভ্যাকের বিনামূল্যের ট্রায়াল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে শুরু থেকেই সিদ্ধান্তহীনতা কাজ করছিল। টিকা লাগবে কি লাগবে না- এমন দ্বিধাও ছিল কারও কারও মাঝে। করোনা মহামারির ভয়াবহতা আঁচ করে পরে অবশ্য ভ্যাকসিন নেয়ার সিদ্ধান্ত সামনে আসে। কিন্তু কোন্‌ প্রতিষ্ঠান থেকে টিকা নেয়া হবে। কীভাবে টিকা আসবে- এর কোনো রোডম্যাপ না থাকায় এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কিছু। চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক তাদের তৈরি করোনাভ্যাক ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বাংলাদেশে করার প্রস্তাব দিয়েছিল বহু আগে। প্রস্তাব অনুযায়ী বিনামূল্যেই এই টিকার ট্রায়াল হতো দেশে। পাশাপাশি টিকা কার্যকর হলে এর নির্দিষ্ট পরিমাণ ডোজ পাওয়া যেতো বিনামূল্যে।
কিন্তু এই সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে নানামুখী চাপে। সিনোভ্যাক এখন বলছে, বাংলাদেশে তাদের ট্রায়াল চালাতে হলে অর্থ ব্যয় করতে হবে বাংলাদেশকে। কারণ টিকার ট্রায়ালের জন্য তাদের যে অর্থ বরাদ্দ ছিল তা ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রায়াল নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে এ সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এই সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পেছনে ছিল নানামুখী চাপ এবং ভূ-রাজনীতি। এসব কারণে সংশ্লিষ্টরা যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগেছেন। হিসাবনিকাশ মেলাতে গিয়ে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, একটু সময় লাগলেও সিনোভ্যাকের ট্রায়াল বাংলাদেশে হবে। আর আগামী কেবিনেট মিটিংয়ে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলেই আশা করছেন তারা।
ট্রায়ালের বিষয়ে এক চিঠিতে সিনোভ্যাক জানিয়েছে, বাংলাদেশে ট্রায়ালের জন্য ফান্ডিং ধরা ছিল। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেছে এবং অন্যান্য দেশে ট্রায়ালের জন্য ‘ফান্ড অ্যালোকেট’ করা হয়ে গেছে। তাই তারা আর্থিক সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান এ বিষয়ে বলেন, সিনোভ্যাক বাংলাদেশ থেকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা চাচ্ছে। আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেইনি। তবে সিনোভ্যাক কিন্তু বলেছে, বাংলাদেশ কো-ফান্ডিং না করলেও তারা ট্রায়াল করবে, সেক্ষেত্রে তারা সময় নেবে। আগামী মাসে তাদের একটি প্রতিনিধিদল আসবে, তাদের এ মাসে সার্ভের পর হয়তো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সিনোভ্যাক। আর সিনোভ্যাকের সব শর্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, আগামী সপ্তাহের কেবিনেট মিটিংয়ে এসব কিছুর সিদ্ধান্ত হবে। গত ১৮ই জুলাই বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)-এ ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন দেয়। আইসিডিডিআর’বি’র মাধ্যমে তারা এ দেশে তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের জন্য আবেদন করে। এরপর সিনোভ্যাকের ট্রায়ালের অনুমতি পেতে সময় লাগে এক মাসের বেশি। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও একাধিকবার দেশে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের কথা বলেছে। ভ্যাকসিনের অগ্রিম বুকিং দেয়ার বিষয়েও সুপারিশ করেছে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত এই পরামর্শক কমিটি।
গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, সঠিক সময়ে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা চাই কোভিড থেকে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব মুক্তি পাবে। সে জন্য ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেজন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। যাতে সঠিক সময়ে আমরা ভ্যাকসিন পাই সেই কার্যক্রম আমরা নিয়েছি।
বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে ৩ কোটি ৪০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা করছে। বাকি প্রায় ১৪ কোটি লোকের টিকা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে কার্যত কোনো কর্মপরিকল্পনা পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ বিশ্বের কিছু কিছু দেশে ইতিমধ্যেই তাদের জনসংখ্যার চেয়ে ৫ গুণ বেশি ভ্যাকসিনের জন্য অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশে হু’র মাধ্যমে টিকা পেলেও আসবে কয়েক দফায়। লাগবে দীর্ঘ সময়। এর মধ্যে প্রথম দফায় করোনায় সম্মুখ যোদ্ধা যারা তারা পাবেন ৫১ লাখ ভ্যাকসিন। দেশের জনসংখ্যার ৩ শতাংশ হারে প্রথমে এটা পাওয়া যাবে। এরপর যাদের বয়স বেশি (৬০ বছরের উপরে) এবং কো-মরবিডিটি (জটিল রোগে) ভুগছেন তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন পাবেন। ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য গত ৯ই জুলাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। ধারাবাহিকভাবে ২০ শতাংশ হিসেবে উল্লিখিত মোট ভ্যাকসিন আসবে দেশে। করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে জানতে চাইলে টিকাদান কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মোহাম্মদ শামসুল হক বলেন, দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো ২০ শতাংশ হারে এই টিকা পাবে। ডিসেম্বরে টিকা উৎপাদন হলে ২০২১ সালের মাঝামাঝি এই টিকা হাতে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সবকিছু টিকা উৎপাদনের উপর নির্ভর করছে। ২০ শতাংশ ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাওয়া যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কো-ফাইন্সিং হিসেবে আসবে। গত ৩০শে সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন জোট ‘গ্যাভি’র বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। চূড়ান্ত জানতে সময় লাগবে। তিনি আরো জানান, বাকি প্রায় ১৪ কোটি লোকের ভ্যাকসিন কোথা থেকে আসবে- তা এখনই বলা যাবে না। এ জন্য সরকার যোগাযোগ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।