বায়ুদূষণ ঠেকাতে উদ্যোগ নিন

0

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য সুস্থ না থাকলে বাড়ি-গাড়ি, কোনো শান-সৈকত উপভোগ করা যায় না। বলা হয়, সুস্থতা আল্লাহর নেয়ামত। তা কেবল অসুস্থ হলেই অনুভব করা যায়। মানুষের জীবন মানেই যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে লড়াই করতে হলে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার বিকল্প নেই। আমরা যারা ঢাকা শহরে বসবাস করছি তাদের জন্য সুস্থ থাকাটা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। দিন দিন ধুলোর শহর হয়ে উঠছে রাজধানী। ঢাকার বাতাস এখন বিষাক্ত। রাস্তায় বেরোলেই ধুলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে।
ধুলার কারণে একদিকে বেড়েছে ভোগান্তি, অন্যদিকে রোগবালাই। ৬ জানুয়ারি রাত পৌনে আটটায় বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল প্রথম, এরপর ভারতের দিল্লি ও পাকিস্তানের করাচি। এর আগে বছর ২৪ নভেম্বর রাত পৌনে নয়টায়ও রাজধানী ঢাকার অবস্থান ছিল প্রথম। এ পরিস্থিতিতে রাজধানীবাসী, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আমরা ভেজাল খাদ্য খাই। এমন কোনো একটি খাদ্য, পণ্য নেই যাতে ভেজালের অস্তিত্ব নেই। বেশিদিন ধরে পচন ঠেকাতে খাদ্যপণ্যে এমন সব রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হচ্ছে যা খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়া খুব স্বাভাবিক। গাড়ির কালো ধোঁয়ায় আমরা প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছি। প্রকাশ্যে ধূমপান দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও সর্বত্র প্রকাশ্যে ধূমপান চলছে। এতে অধূমপায়ীরাও ধূমপানের তির শিকার হচ্ছে। এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে ধুলাদূষণ। কোথাও বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ারও উপায় নেই।
রাজধানীতে মেট্রোরেলসহ চলমান কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়েছে, সঙ্গে যোগ হয়েছে ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ইটভাটার দূষণ। গত বছরের ২৬ নভেম্বর ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার বায়ুদূষণ কমাতে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের জন্য পরিবেশ সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ মতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এর আগে ২০১৮ সালেও এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তখন বায়ুদূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানোর নির্দেশও দিয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু কোনো কিছুতেই যেন রোধ করা যাচ্ছে না নগরীর ধুলা দূষণ। ফলে এর বিরূপ প্রভাব দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি অ্যাজমা, সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ), এলপিডি (লিম্ফোপ্রোলিফারেটিভ ডিজিজ) ইত্যাদি রোগও দেখা দিচ্ছে। এলপিডির মতো রোগ আগে খুব একটা দেখা না গেলেও ধুলার কারণে এখন এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা মহানগরীসহ দেশের সব শহরে ধুলাদূষণের প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে যায়। এবার শুষ্ক মৌসুম ভালোভাবে আসার আগেই শুরু হয়েছে ধুলার বিপদ। রাজধানীর অনেক স্থানেই উন্নয়ন কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি চলছে, তাতে দূষণের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) তথ্য অনুসারে, রাজধানীর বায়ুদূষণের ৫০ ভাগ হয় ইটভাটা থেকে, ৩০ ভাগ হয় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য থেকে। ১০ ভাগ দূষণ হয় গাড়ির জ্বালানি থেকে। শিল্প কারখানার বর্জ্য থেকে ১০ ভাগ। এই দূষণ কমাতে জরুরি ভিত্তিতে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধের পাশাপাশি রাস্তাগুলোতে প্রতিদিন পানি দেয়ার ব্যবস্থা করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা প্রত্যাশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ধুলাদূষণ রোধে সংশ্লিষ্ট সব মহল কার্যকর উদ্যোগ নেবে। কারণ এর সঙ্গে সুস্থ জাতি ও সার্বিক অগ্রগতির সম্পর্ক জড়িত।