তিন স্ক্যানারের দুটিই নষ্ট : বিমানবন্দর দিয়েই এলো করোনা

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ বিমানবন্দরে করোনা ভাইরাস স্ক্যানিংয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিলো আগেই। অভিযোগ ছিল করোনা শনাক্তে আন্তর্জাতিক মানের থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার করা হচ্ছে না। তুলনামূলক কম জনবল ও একটি মাত্র স্ক্যানার দিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের যাত্রীদের দায়সারা স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে । এতে যেকোনো সময় করোনা আক্রান্ত রোগী দেশে প্রবেশ করতে পারে। এমন আশঙ্কা শেষতক সত্যি প্রমাণিত হল। এই বিমানবন্দর দিয়েই দেশে আসলো করোনা ভাইরাস। দেশে প্রথম যে তিন রোগী শনাক্ত হয়েছে তাদের দুইজন দেশের প্রধান বিমানবন্দর দিয়ে ইতালি থেকে দেশে আসেন। আক্রান্ত অন্যজন ওই দুই ব্যক্তির একজনের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছেন।
বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, পরীক্ষার জন্য আনা তিনটি স্ক্যানারের দুটিই নষ্ট এই তথ্য জানানোর পরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে প্রক্রিয়ায় যাত্রীদের পরীক্ষা হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক মানের না। সাধারণ প্রক্রিয়ার নামমাত্র পরীক্ষা করে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় সকল যাত্রীকে সঠিক প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা করা সম্ভবও হচ্ছে না। করোনাভাইরাস যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যেগে দেশের সবকটি প্রবেশ পথে আসা যাত্রীদের পরীক্ষা করে দেশে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা বিমানবন্দরে এত দিন তিনটি স্ক্যানিং মেশিন দিয়ে যাত্রী স্ক্যানিংয়ের কাজ চলছিলো। সম্প্রতি দুটি মেশিন নষ্ট হওয়াতে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়ে গেছে। বিশেষ করে একসঙ্গে কয়েকটি ফ্লাইটে আসলে ক্লান্ত যাত্রীদেরকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর খুব অল্প জনবল দিয়ে আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দরের বিপুল সংখ্যক যাত্রীদের পরীক্ষা করছে। তাই অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীদের যেমন বাড়তি সময় ক্ষেপন হচ্ছে ঠিক তেমনি পরীক্ষা নীরিক্ষাও ঠিকমত করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ আছে। বিদেশ ফেরৎ যাত্রীরা বলেছেন, বিমান থেকে নামার পর একটি মেশিনের মধ্যে দিয়ে আসতে হয়। যেখানে শরীরে তাপমাত্রা ও শারীরিক বেশকিছু তথ্য জানা যায়। এরপর মৌখিকভাবে জ্বর, ঠান্ডা ও কাঁশি আছে কিনা এসব জিজ্ঞেস করা হয়। এরপর একটি ফরম পূরন করতে বলা হয়। বেশিরভাগ সচেতন যাত্রী ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য এটি পর্যাপ্ত নয়। আরো উন্নত ও আন্তর্জাতিক উপায়ে শনাক্ত করা উচিত। কারণ প্রতিদিনই বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার যাত্রী দেশে আসছেন। এসব যাত্রীদের মাধ্যমে করোনা প্রবেশ সময়ের ব্যাপার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বিমানবন্দর কর্র্তৃপক্ষকে জানিয়েছে খুব শিগগির নতুন মেশিন আসছে।
এদিকে করোন ভাইরাসের স্ক্রিনিং নিয়ে গতকাল বিমানবন্দরে কথা হয় বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরা যাত্রীদের। কলকাতা ফেরত সুভাষ সাহা ও মিনু সাহা দম্পত্তি বলেন, কলকাতায় খুব গুরুত্ব সহকারে স্ক্যানিং করা হয়। আর এখানে যেভাবে করা হয় সেটি পর্যাপ্ত নয়। ইউএস বাংলার ২০৪ নম্বরের বিমানের একটি ফ্লাইটে করে ঢাকায় এসে পোঁছেছি। নামার পর দেখি একটি স্ক্যানিং মেশিনে স্ক্যান করা হচ্ছে যাত্রীদের। পরে লম্বা লাইন পার হয়ে স্ক্যানিং করে একটি ফরম পুরণ করে আমরা বের হয়েছি। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ব্যাংককের ফ্লাইট টিজে ৩২১ এ আসা যাত্রী মাসুদ রানা বলেন, আমি পার হওয়ার সময় কোনো ঝামেলা ছিলো না। স্ক্যানারে আমার শরীরের তাপমাত্রা আছে কিনা সেটি দেখা হয়েছে। এরপর স্বাস্থ্যকর্মীরা আমার জ্বর, সর্দি কাশি বা অন্যকোনো সমস্যা আছে কিনা সেটি জিজ্ঞেস করেছেন। পরে একটি ফরম পুরণ করার পর বেরিয়ে আসি। তিনি বলেন, বিদেশে আরো ভালো প্রযুক্তি দিয়ে ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। এখানে সেটি মানহীন মনে হলো। বরগুনার তালতলীর জামাল উদ্দিন বলেন, বিমান থেকে নামার পরেই একটা স্ক্যানিং মেশিনের নিচ দিয়ে বের হলাম। তারপর আমাকে দিয়ে একটি ফরম পুরন করে ছেড়ে দিয়েছে। কি পরীক্ষা করলো সেটিও বুঝি নাই। রাজ্জাক হাওলাদার নামের আরেক যাত্রী বলেন, করোনা নিয়ে দেশে-বিদেশে এত আলোচনা অথচ প্রবেশ পথে ঝুঁকি এড়াতে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
করোনা ভাইরাসের স্ক্যানিং নিয়ে বিমানবন্দরের পরিচালক এ্‌ইচএম তৌহিদ-উল আহসান মানবজমিনকে বলেন, এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণেই হচ্ছে। মেশিন ও জনবল সবই তাদের। এতদিন তিনটা স্ক্যানিং মেশিন দিয়ে কাজ করা হয়েছে। এখন দুইটা নষ্ট হয়ে গেছে। ১টি মেশিন দিয়েই স্ক্যানিং চলছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিপুল সংখ্যক যাত্রীর জন্য একটি স্ক্যানিং মেশিনই যথেষ্ট কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন বেশি যাত্রী হয়ে যায় তখন লম্বা লাইনের সৃষ্টি হয়। আর আমাদের জায়গার সংকটও আছে। সেক্ষেত্রে একটি স্ক্যানিং মেশিন পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া যারা স্ক্যান করছেন তাদের সংখ্যাও কম। ৩/৪টা ফ্লাইটের যাত্রীরা যখন একসঙ্গে আসে তখন দীর্ঘ লাইন ও সাময়িক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কি করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে পরামর্শ দিয়েছি। তারা আমাদেরকে জানিয়েছেন মেশিন ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। খুব শিগগির নতুন মেশিন আনা হবে। করোনা শনাক্তের মান নিয়ে তিনি বলেন, মানহীন বা আন্তর্জাতিক উপায়ে করোনা শনাক্ত হচ্ছে না বিষয়টিও আমরা তাদের কাছে অভিযোগ করেছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাদের অভিযোগ নিয়েছে এবং এ বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে আমাদেরকে জানিয়েছে। চীন থেকে করোনা ভাইরাস যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ না করে সেজন্য চীন ফেরৎ যাত্রীদের স্ক্যানিং করে প্রবেশ করতে দেয়া হতো। এখন সব দেশের যাত্রীদের স্ক্যানিং করা হয় কিনা এমন প্রশ্নে তৌহিদ-উল আহসান বলেন, প্রথম থেকেই সব দেশের যাত্রীদের স্ক্যানিং করা হচ্ছে। কারণ স্ক্যানিং মেশিন এমন স্থানে রাখা হয়েছে বের হতে গেলে সবাই অটো স্ক্যান হয়ে যাচ্ছেন। সবাইকে ওইদিকেই বের হতে হবে। অন্য কোনো অপশন নাই। ওদিকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়া চট্টগামের শাহ আমানত বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্যানারটি ৯ মাস ধরে বিকল। তাই ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়েই এই বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। এছাড়া সিলেটের ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্যানারটিও দেড় বছর ধরে নষ্ট। এছাড়া স্থল ও সমূদ্র বন্দরেও যাত্রীদের পরীক্ষা হচ্ছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে।