গভীর সমুদ্র বন্দর পায়রা না মাতারবাড়িতে

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ সম্পূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক বা কৌশলী প্রকল্প ‘গভীর সমুদ্র বন্দর’ নির্মাণে এক যুগের বেশি সময় ধরে কথাবার্তা বলছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে দীর্ঘ সময় চীনসহ আগ্রহী দেশগুলোর সঙ্গে দেন-দরবার করা হয়েছে। ক’বছর আগে সেই প্রকল্পে ধীর গতি আসে এবং সোনাদীয়ার বদলে পায়রায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে সরকার। চটজলদি পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর আইনও মন্ত্রীসভায় অনুমোদন হয়। কিন্তু সেই অগ্রাধিকার প্রকল্পের ফোকাসেও পরিবর্তন আনে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাতারবাড়িতেই এখন সরকার গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সম্ভাবনা দেখছে! প্রশ্ন ওঠেছে সমুদ্র পথে খুব কাছাকাছি দূরত্বে থাকা পায়রা না মাতারবাড়ি- কোথায় হবে বাংলাদেশের স্বপ্নের গভীর সমুদ্র বন্দর? বাংলাদেশ কি একটি গভীর সমুদ্র বন্দর বানাবে না-কী দু’টি বন্দর গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের সম্ভাবনার বার্তা কি পায়রা প্রকল্পের ইতিটানার ইঙ্গিত? নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন সদ্য মাতারবাড়ি সরজমিনে পরিদর্শন করে আসা পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
তার নেতৃত্বে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিনিধি দল গত শুক্রবার হেলিকপ্টারে মহেশখালির মাতারবাড়ি ঘুরে দেখেন। সেখানে জাপানের অর্থায়নে দেশের প্রথম এলএনজি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পসহ আশপাশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সরজমিনে পরিদর্শন করেন তারা। রোববার ওই এলাকা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনায় মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর করার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। ড. মোমেন এ-ও বলেন, মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর হলে আমদানি খরচ কমবে। তার দাবি- মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে জাপানিজরা ড্রেজিং করেছিলো। এতে সাগরের নাব্যতা বেড়ে গেছে। এটাকেই তিনি সম্ভাবনার একমাত্র যুক্তি হিসাবে তুলে ধরেন। করোনা ভাইরাস ঠেকাতে চীন সরকারের উদ্যোগ এবং বাংলাদেশের অবস্থান বিষয়ে ঢাকাস্থ চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ একটি ব্রিফিংয়ে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠান শেষে তিনি আলাদাভাবে সংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে গভীর সমুদ্র বন্দর বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে একাধিক প্রশ্ন আসে। জবাবে মন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়িতে গভীর সুমদ্রবন্দর করার পকিল্পনা আছে আমাদের। এর ড্রেজিংসহ বেশিরভাগ কাজ করছেন জাপানিরা। তাহলে পায়রায় গভীর সুমদ্রবন্দর নির্মাণের চিন্তা বা পরিকল্পনা কি বাদ? এমন প্রশ্নে পররাষ্টমন্ত্রী বলেন, সেখানেও হতে পারে। আমাদের একটির বেশি গভীর সুমদ্রবন্দর থাকতে পারে। আমাদের জানানো হয়েছে, এখানে বিদ্যুৎ প্রকল্প করতে গিয়ে ড্রেজিং করতে হয়েছে। এতে সমুদ্রের নাব্যতা বেড়ে গেছে। মন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়িতে এখন ১৪ মিটার গভীরতা তৈরি হয়েছে। অপর প্রশ্নে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে গভীর সমুদ্র বন্দর নেই। এটি না থাকার ফলে বিদেশ থেকে এলপিজি বা এলএনজি আনতে খরচ অনেক বেড়ে যায়। বড় জাহাজ এখানে নোঙর করতে পারে না। তা সিঙ্গাপুরে করে। সেখান থেকে ১ লাখ ২০ টনের মাল আনার জন্য ১০টি ছোট জাহাজ পাঠানো হয়। এতে খরচ বেড়ে যায়। আমার কাছে যে তথ্যে আছে, তা থেকে বলা যায়, প্রতি টনে ৫০ ডলার খরচ বেড়ে যায়। কৌশলগত এবং স্পর্শকাতর প্রকল্প ‘গভীর সমুদ্র বন্দর’ সোনাদিয়ায় তৈরির প্রস্তাব ছিল চীনের। তারা কাজটি পেতে নানাভাবে চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেখানে এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী হয়নি সরকার। গভীর সমুদ্রবন্দরের নতুন প্রকল্প গৃহীত হয় পায়রায়। কিন্তু সেটিও এগোয়নি। পেছনের এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান এই বলে ‘এটি অন্যদের জিজ্ঞাসা করুন, এই বিষয়ে আমি জানি না।’
মাতার বাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এটি শিগগিরই চালু হচ্ছে। বেশ কিছু কাজ দু’মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করেন তিনি। জাপান সরকার মাতারবাড়িতে ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ করছে। উল্লেখ্য, চীন ছাড়াও ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডসহ প্রভাবশালী বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র নির্মাণের প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত থাকার আগ্রহ ছিল। মাতারবাড়ীতে জাপানী বিদ্যুৎ প্রকল্পের সঙ্গে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের প্রকল্প মিলে গেলে সেখানে অন্যদের সরাসরি সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা আর থাকবে না। সরকারী সূত্রগুলো বলছে, বিদ্যমান পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে অর্থাৎ মাতারবাড়িতে হলে গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিকভাবে (প্রাক্কলিত) ১৮ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার ধলঘাট এলাকায় মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়নে ১৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ঋণ দেবে জাপানী উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা। বাকি অর্থের ২ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এবং ২ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা অন্যান্য সংস্থা থেকে সংস্থান হবে।