জানুয়ারিতে সোয়া দুই লাখ কর্মসংস্থান যুক্ত মার্কিন অর্থনীতিতে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান সৃষ্টির বাজারে রেকর্ড চাঙ্গা ভাব দেখা গেছে। গত মাসে দেশটিতে ২ লাখ ২৫ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন নিয়োগকর্তাদের এ পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পেছনে ভালো আবহাওয়ার অবদান রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এর ফলে টানা ১১ মাস ধরে মার্কিন অর্থনীতির রেকর্ড ভাঙা কর্মসংস্থান সৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকল। খবর গার্ডিয়ান, এএফপি।
স্থানীয় সময় শুক্রবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সংখ্যা অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসকে সহজেই ছাড়িয়ে গেছে। জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ ৬৪ হাজারের কাছাকাছি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিকসের পরিসংখ্যান অনুসারে, নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাশ এবং আতিথেয়তা খাতে কোম্পানিগুলোর নতুন কর্মী নিয়োগের সুবাদে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিটির বেকারত্বের হার ৫০ বছরের সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শক্তিশালী শ্রমবাজার দিয়ে বছর শুরু করল যুক্তরাষ্ট্র।
শ্রমবাজারের প্রত্যাশাতীত সাফল্য আশীর্বাদ হয়ে উঠতে যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য। ট্রাম্প চলতি বছরের নভেম্বরে পুনর্নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছেন শক্তিশালী শ্রমবাজার। শ্রমবাজারের পরিসংখ্যান প্রকাশের পর পরই এক টুইটার বার্তায় ‘হ্যাশট্যাকপ্রমিজমেডপ্রমিজকেপ্ট’ পোস্ট করেন তিনি। এছাড়া চলতি সপ্তাহে স্টেট অব ইউনিয়নের ভাষণে ট্রাম্প বলেন, আমরা যদি পূর্ববর্তী প্রশাসনের ব্যর্থ নীতিমালাগুলো সংশোধন না করতাম, তবে বিশ্ব আমেরিকান মহান অর্থনৈতিক সাফল্য প্রত্যক্ষ করতে পারত না।
মার্কিন অর্থনীতি প্রতি মাসেই কর্মসংস্থান যোগ করলেও বেশ কিছু প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। রেকর্ড নিম্ন বেকারত্ব ও শক্তিশালী মাসিক অর্জন সত্ত্বেও মজুরি প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত মন্থর রয়ে গেছে। জানুয়ারিতে মাত্র বার্ষিক ৩ দশমিক ১ শতাংশ হারে মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া বার্ষিক প্রবৃদ্ধিও হ্রাস পেয়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ১৮ মাসের সর্বনিম্ন। এ সমন্বয়হীনতা কর্মসংস্থান সৃষ্টির ধরন নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করছে।
সম্প্রতি চালু হওয়া ইউএস প্রাইভেট সেক্টর জব কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুসারে, গত ৩০ বছরে মার্কিন কর্মসংস্থান বাজার নাটকীয়ভাবে কম-মজুরির কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে সরে গেছে। ১৯৯০ সালে সৃষ্ট কর্মসংস্থানের ৫৩ শতাংশকে নিম্ন মজুরির বা নিম্ন কর্মঘণ্টার এবং ৪৭ শতাংশকে উচ্চ মজুরির বা উচ্চ কর্মঘণ্টার কর্মসংস্থান বলে চিহ্নিত করা হতো। ১৯৯০ সালের পর সৃষ্ট কর্মসংস্থানের ৬৩ শতাংশ হলো নিম্ন মজুরি এবং মাত্র ৩৭ শতাংশ হলো উচ্চ মজুরির। মহামন্দার পর কর্মসংস্থান-মজুরির অনুপাত কিছুটা পুনরুদ্ধার হলেও ২০১৭ সালের পর তা আবারো নিচে নামতে থাকে। জানুয়ারিতে প্রচলিতভাবে উচ্চ মজুরির কর্মসংস্থান সৃষ্টির ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাই হয়েছে।
এক দশকের বেশি সময় ধরে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি সত্ত্বেও চীন থেকে আমদানীকৃত বহু পণ্যের ওপর তীব্র শুল্ক বহাল থাকায় নিয়োগের এই গতি বহাল থাকবে কিনা সে নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে, কারণ বিশেষ করে চলতি বছর অর্থনীতি মন্থর থাকবে বলে পূর্বাভাস করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুসারে, গত মাসে কোম্পানি বহির্ভূত নতুন ২ লাখ ২৫ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন মার্কিন নিয়োগকর্তারা। ডিসেম্বরে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মন্থর গতি থাকলেও জানুয়ারির শক্তিশালী পরিসংখ্যানের ফলে গত তিন মাসে অর্থনীতিতে গড়ে ২ লাখ ১১ হাজার কর্মসংস্থান যুক্ত হয়েছে। ২০১৯ সালে গড় কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের বিশ্লেষকদের মতে, চীনের করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অর্থনীতিতে তীব্র পতনের ভীতি তৈরি করলেও জানুয়ারির শক্তিশালী কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দৃঢ় মজুরি প্রবৃদ্ধি অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের ধারা অব্যাহত রাখারই নিশ্চয়তা দিচ্ছে।