গর্ভে লিঙ্গ সনাক্তের বিরুদ্ধে আইন হোক

0

সব নারীই মা হতে চায়। মা হওয়া তার অহংকার। কোন নারী যখন তার অনাগত সন্তানকে বরণ করতে সর্বময় প্রস্তুতি নেয় তেমন শুভ সময়ে ছেলেমেয়ের ব্যাপারটি অন্তত মায়ের মাথায় থাকে না। প্রসূতি মায়ের একমাত্র প্রত্যাশা ছেলে বা মেয়ে যা হোক সুস্থ শিশুটি নিরাপদে, নির্বিঘেœ পৃথিবীর আলো দেখুক। পরিবারের সবার আদরে যেন বড় হয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসা প্রচলিত সংস্কারে বংশের বাতি জ্বালানো পুত্র সন্তানের স্বপ্নই পারিবারিকভাবে লালন করা হতো। তবে মায়ের সন্তান আগমনের ণগণনার সময়গুলো এত বেশি স্পর্শকাতর আর স্বপ্নময় হয়ে থাকে সেখানে যেই আসুক না কেন কোল আলো করা একজন সুস্থ সন্তানই থাকে প্রত্যাশিত বিষয়। সময় পাল্টেছে। বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কারে মানুষ আজ অনেক অজানা বিষয়কে নিজের আয়ত্তে নিয়ে এসেছে। সময়ের ও প্রযুক্তির যৌক্তিক আবেদনে মানুষের জানাশোনার জগতও হয়েছে সে মাত্রায় সম্প্রসারিত। গর্ভকালীন মায়েদের হরেক রকম শারীরিক জটিলতাও তৈরি হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিকতায় দুর্লভ প্রযুক্তি যেমন মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছেÑ পাশাপাশি এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠারও জন্ম দিচ্ছে। মা ও শিশুর মৃত্যুহার প্রতিরোধে অনেক বৈজ্ঞানিক পরীা-নিরীায় গর্ভে লালিত নতুন প্রজন্মকে পৃথিবীতে নিয়ে আসা হয়। এখনঅত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে এই সবঅনাগত সন্তানের জন্মের আগেই লিঙ্গ পরিচয়ও শনাক্ত করা যায়। কিন্তু নতুন এই প্রযুক্তিকে অনেকে গ্রহণ করলেও মাতৃগর্ভে লিঙ্গ চিহ্নিতকরণের ব্যাপারে সর্বত্র আপত্তিও উঠছে বিভিন্নভাবে। কারণ এই অজানা বিষয়টি নজরে আসার পর অনেকের মধ্যে মিশ্র বা বিরূপপ্রতিক্রিয়াও তৈরি হয়। যা প্রসূতি মা থেকে পরিবারের অন্যদের ওপর বিশেষ চাপ তৈরি করে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে লিঙ্গ শনাক্তকরণের মধ্য দিয়ে কন্যা শিশুর ভ্রƒণ হত্যারও মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। এর প্রভাব থেকে বাংলাদেশও খুব একটা মুক্ত নয়। সঙ্গত কারণে চিকিৎসকের বিশেষ পরামর্শ ছাড়া লিঙ্গ শনাক্তকরণ করতে আইনগত বাধা ইতোমধ্যেই তৈরিও হয়েছে। বাংলাদেশকেও এই বিশেষ ব্যাপারে সচেতন দায়বদ্ধতায় গর্ভে ছেলেমেয়ে চেনার ব্যবস্থাপনায় আইনী পদপে জরুরী।
গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় শনাক্তকরণের পরীা বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান এক রিট আবেদন মহামান্য আদালতে জমা দেন। আদালতে রিটের পে তিনি শুনানিকালে গর্ভের শিশুটি ছেলে না মেয়ে সেটা জানার পর মা ও অনাগত সন্তানটিও নির্যাতনের শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। যা মূলত সত্য এবং বাস্তবসম্মত। শুধু তাই নয়, পারিবারিক বাড়তি চাপে গর্ভবতী মায়ের গর্ভপাতেরও আশঙ্কা থেকেই যায়। অন্যদিকে রাষ্ট্রপ অভিমত জানায়, গর্ভজাত শিশুর অবস্থান ও আকার জানতে ১১ সপ্তাহ পর আলট্রাসনোগ্রাম পরীা করা হয়। পরীাটি বন্ধ হয়ে গেলে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে। উভয় পরে রিট শুনানির পর বিজ্ঞ আদালতের রুল জারি হয়েছে এভাবেÑ গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় শণাক্তকরণ রোধে নীতিমালা বা নির্দেশনা প্রণয়নে ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্বের বহির্ভূত হবে না? আমরা মনে করি, প্রচলিত সামাজিক সংস্কারই শুধু নয়, আধুনিক চিন্তা-চেতনার অভাবেও পরিবারে ছেলেমেয়ের পার্থক্য আজও দৃষ্টিকটুভাবে দৃশ্যমান। এই পশ্চাদপদ মানসিকতা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। মায়ের গর্ভ থেকে যে সন্তানই আসুক না কেন সে দেশের ভবিষ্যত নাগরিক। মানুষ হিসেবে তার বেঁচে থাকা থেকে শুরু করে সব ধরনের অধিকারই আইনগত প্রাপ্তি। এর অন্যথায় মানবতার স্খলন আর মনুষ্যত্বের অপমান হয়। এর বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকা প্রয়োজন।