কারও শরীরে মেলেনি করোনাভাইরাস, চিন্তামুক্ত চিন ফেরত ৬৪৫ ভারতীয়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥শনিবার ও রবিবার মিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চিনে আটকে পড়া মোট ৬৪৫ জন ভারতীয়কে নিয়ে দিল্লি ফিরেছিল এয়ার ইন্ডিয়ার দুটি বিমান। চিন থেকে ফিরিয়ে আনা ভারতীয়রা ছাড়াও তার একটি বিমানে ছিলেন দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালের পাঁচ জন ডাক্তার এবং এয়ার ইন্ডিয়ার একজন প্যারামেডিক। এছাড়াও ছিলেন ৭ মলদ্বীপের নাগরিক। তবে চিন থেকে ফেরত আসা ভারতীয় নাগরিকদের কারও মধ্যেই করোনভাইরাসের জীবাণু মেলেনি বলেই জানিয়ে দিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তবে এখনই তাঁদের বাড়িতে ফিরতে দেওয়া হবে না। আরও বেশ কিছুদিন পর্যবেক্ষণে থাকার পরই তাঁদের ছাড়া হবে।
বৃহস্পতিবার একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে জানানো হয়, চিনের উহান থেকে যেসব ভারতীয় নাগরিকরা ফিরেছেন, তাঁদের কারও শরীরেই মেলেনি করোনভাইরাস। সারা দেশে যতজন মানুষকে পরীক্ষা করা হয়েছে, তাতে ৩ জনের শরীরে এই ভাইরাসের খোঁজ মিলেছে। দেশের ৩২ রাজ্যে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে ৬৫৫৮ জনকে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চিন থেকে যে সব ভারতীয়দের আনা হয়েছিল, তাঁদের আনতে যাওয়া উপস্থিত বিমান কর্মী ও ডাক্তারদের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, তাই সবারই এয়ারপোর্টে বিস্তারিত ভাবে ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটিকে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় চিন প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল ভারত।
এদিকে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ থামার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না চিনে। গত ২৪ ঘণ্টায় ফের অন্তত ৬৮ জনের মৃত্যুর খবর মিলল। সোমবার পর্যন্ত যে সংখ্যাটা ছিল ৩৬১, মঙ্গলবারই তা বেড়ে দাঁড়াল ৪২৫, বুধবার ৪৯২ ও বৃহস্পতিবার তা বেড়ে হয় ৫৬০-এ। যত দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে । সার্জিক্যাল মাস্ক-সহ বেশ কিছু চিকিৎসার সরঞ্জামের আকাল শুরু হয়েছে। মাস্কের জন্য লম্বা লাইন উহানে। আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার।
সংক্রমণ আটকাতে চিনের ১৯টি শহর বহির্বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। উড়ান তো বটেই, ট্রেন-বাস-ফেরি-সহ গণপরিবহণের সমস্ত ব্যবস্থা বন্ধ। স্কুল-কলেজ-অফিস বন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দারা রীতিমতো ঘরবন্দি। এমনকি, বাজার করতে বেরেনোতেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তার উপরে রোগীর সংখ্যা যে মাত্রায় বাড়ছে, তাঁদের চিকিত্সার সমস্ত সুবিধা দেওয়াও সমস্যা হয়ে যাচ্ছে চিন সরকারের পক্ষে। ১ দিনের শিশুর দেহেও করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে উহানে। একদিনের ওই শিশুকে নিয়ে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই শিশুটিই এখন সর্বকনিষ্ঠ যার দেহে এই মারাত্মক ভাইরাসের লক্ষণ মিলল।
ভাইরাসের মোকাবিলা নিয়ে প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং জানিয়েছেন, রোগ নিয়ন্ত্রণের খুব গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে এখন দাঁড়িয়ে চিন। এই অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসনকে তিনি অনুরোধ করেছেন, ভাইরাস আক্রান্তের খবর পাওয়া মাত্র যেন দ্রুত আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা হয়। এই রোগ নিয়ে গুজব ছড়ানো বন্ধ করার উপরেও জোর দিয়েছেন শি। ব্রিটেনে এখনও পর্যন্ত দু’জনের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ মিলেছে। আরও তিনশো মার্কিন নাগরিককে চিন থেকে এয়ারলিফ্ট করেছে মার্কিন প্রশাসনও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই ভাইরাসের মোকাবিলা করতে চিনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছেন তাঁরা। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন যে ভাবে চিন থেকে আসা পর্যটকদের আমেরিকায় প্রবেশ নিয়ে কড়াকড়ি করছে, তাতে ক্ষুব্ধ বেজিং।