শংকরপুরে ছুরিকাহত কলেজছাত্রের মৃত্যু গাড়ি ও বাড়ি ভাঙচুর, বোমার বিস্ফোরণ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের শংকরপুর চোপদার পাড়ায় ছুরিকাঘাতে আহত কলেজছাত্র নুর হোসেন (১৯) মারা গেছেন। গতপরশু শনিবার রাতে যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার পথে অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার জের ধরে ওইদিন রাতে শংকরপুর চোপদারপাড়ায় রাস্তার পাশে থাকা ২টি ক্রেনসহ ৪টি গাড়ি ও ৪টি বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। বোমার বিস্ফোরণও ঘটেছে। তবে হত্যার সাথে জড়িত কাউকে গতকাল পর্যন্ত পুলিশ আটক করতে পারেনি।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, কলেজছাত্র নুর হোসেন ছুরিকাঘাতে জখমের পর তার মা আম্বিয়া খাতুন ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১৫ জনকে আসামি করে কোতয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। তবে তখন অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি। পরবর্তীতে নুর হোসেন মারা যাওয়ায় ওই অভিযোগ সংশোধন করে হত্যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে।
নুর হোসেন হত্যায় অভিযুক্তরা হলেন- শংকরপুর চোপদার পাড়ার বাবু শেখের ছেলে রনি ওরফে কানা রনি (২৮), মিলনের ছেলে পচা (২২), মতিয়ারের ছেলে রিয়াদ (২৫), মৃত লুৎফর ড্রাইভারের ছেলে সোহাগ (৩৬) ও সুমন ওরফে পাখি সুমন (৩৮), সিরাজের ছেলে বাঁধন (২৩), জাহাঙ্গীরের ছেলে আকাশ (২৫), জহর আলীর ছেলে আলী আহমেদ (২৬) ও তোফার ছেলে পাপ্পু (২৫)।
হত্যার শিকার নুর ইসলাম শংকরপুর চোপদারপাড়া বারেক সড়কের রিকশাচালক নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
নিহতের মা আম্বিয়া খাতুন অভিযোগ করেন, গত শুক্রবার বিকেলে শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ওই খেলায় তার ছেলে নুর হোসেনদের পক্ষীয় বারেক সড়ক ফুটবল অ্যাকাডেমি ও স্থানীয় ব্রাদার্স ক্লাব টিম অংশ নেয়। সেখানে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার পচা ও রিয়াদসহ তাদের লোকজনের সাথে নুর হোসেনের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় তারা তার ছেলেকে হত্যার হুমকি দেয়। তিনি বলেন, গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শংকরপুর রেললাইন সংলগ্ন সিগন্যাল ডাউন মসজিদের পাশের কালামের দোকানের সামনে তার ছেলে নুর হোসেনের বন্ধু শান্তকে মারধর করছিলো পচা ও রিয়াদসহ তাদের লোকজন। তখন তার ছেলে মসজিদের ভেতরে ছিলো। মসজিদ থেকে বের হয়ে শান্তকে মারধরের প্রতিবাদ করে নুর হোসেন। এ সময় ফুটবল খেলা নিয়ে সৃষ্ট পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পচা ও রিয়াদের নেতৃত্বে তার ছেলে নুর হোসেনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ খবর পেয়ে তারা নুর হোসেনকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার ছেলের অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে খুলনায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে নওয়াপাড়ায় তার ছেলের মৃত্যু হয়। তিনি আরও জানান, তার ছেলেকে হত্যার পর পচাসহ অভিযুক্ত অন্যরা এলাকায় কয়েকটি গাড়ি ও বাড়ি ভাঙচুর করেছে। তাদের লোকজন এ ঘটনার সাথে জড়িত নন বলে তিনি দাবি করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকটি সূত্র জানায়, নুর হোসেনের মৃত্যুর খবর শংকরপুর চোপদার পাড়ায় ছড়িয়ে পড়লে তাদের পক্ষীয় আবির, সুমন ও সজীবসহ অন্যরা রাতে এলাকায় ৪টি গাড়ি ও ৪টি বাড়ি ভাঙচুর করেছে। এর মধ্যে এলাকার ইউনুস তরফদারের ২টি ক্রেন ও ১টি জিপগাড়ি এবং অন্য এক ব্যক্তির ১টি ট্রাক রয়েছে। আর বাড়ি ভাঙচুর করা হয় অভিযুক্ত পচার পিতা মিলনের এবং একই এলাকার ফল বাবু, বাবুল সিকদার ও মজিবরের। এছাড়া রাত পৌনে ৩টার দিকে এলাকায় একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে নুর হোসেনের হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গতকাল রোববার সকালে কোতয়ালি থানার পুলিশ ছাড়াও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা এলাকায় গিয়ে হত্যার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন।
পিবিআই’র এসআই স্নেহাশীষ দাশ জানান, হত্যার সাথে জড়িতদের আটকের জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রোববার বিকেলে কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, হত্যার ঘটনায় এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। জড়িত কাউকে আটক করা যায়নি। তবে জড়িতদের আটকের জন্য পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।