এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন মূল্যায়ন করে স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেছেন, এই নির্বাচন আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য একটি অশনিসংকেত। এই অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ভোটের হার আরও কমে যাবে। এবং এটি ৫/১০ ভাগে নেমে আসতে পারে। ঢাকার ভোটে যে চিত্র দেখা গেছে তা নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণের অনাস্থার প্রকাশ বলেও মনে করেন সাবেক এই সচিব। মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের তরফে যেটা আমরা জানতে পারলাম যে ৩০ পারসেন্টের কম ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে থাকতে পারেন। তার যদি ১০ ভাগ বিরোধী দল পায়, ২০ ভাগ শাসক দল পায় তাহলেতো ২০ পারসেন্টের ভোটে নির্বাচিত মেয়র পাচ্ছেন ঢাকা নগরবাসী। তাহলে ৮০ ভাগ মানুষের ইচ্ছারতো কোন প্রতিফলন থাকল না এই নির্বাচনের ব্যাপারে। সেই কারণে এটি গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাবেন। তারা ভোটের মালিক। সেখানে যদি ভোটাররা উপস্থিত না থাকে তাহলেতো সেটা গণতন্ত্র হলো না। এটা গণতন্ত্রের পরাজয়। আমরা যদি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বিশ্বাস করি, যে কারণে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তৎকালীন পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের সময় গণতন্ত্র ছিল না। গণতন্ত্রের জন্যই আমরা লড়াই শুরু করলাম এবং মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হলো। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা সেটা হলো আমরা একটা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলব।
ঢাকার ভোট নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই অবস্থা চালু থাকলে ভোটার আরও কমতে থাকবে। দেখা যাবে যে পাঁচ বা ১০ ভাগ মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছেন ভোট দিতে। তার সাথে একটা অলিগো (স্বল্প সংখ্যক) গড়ে উঠবে। রাজনৈতিক দলের কিছু লোক, আমলাতন্ত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী সমস্ত পেশা থেকে এটি গড়ে উঠবে। এটিকেতো আর সরকার বা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলা যাবে না। তিনি বলেন, ভোট কেন্দ্রে ভোটাররা যে আসলেন না এটিতো নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর জনগণের, ভোটারদের অনাস্থা। আমার ভোট আমি দিতে পারব কিনা এমন অবিশ্বাস, আমি ভোট দেয়ার পর সেই ভোট ঠিকমতো গণনা করা হবে কিনা সেই অবিশ্বাস, মেশিনে ভোট ঠিকমতো দিতে পারবো কিনা এমন অবিশ্বাস রয়েছে। বিরোধীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে মেশিনে এমনভাবে সফটওয়ার তৈরি করা হবে যাতে আমার ভোটটা অন্যদিকে চলে যেতে পারে। যারা বিরোধী দলকে ভোট দেবেন তারা ভাবলেন তাহলে আমাদের আর যাওয়ার দরকার কি? তিনি বলেন, নির্বাচনে অনেক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দেখতে হবে অনিয়ম কোথায় কোথায় হয়েছে। একটা অভিযোগ পাওয়া গেছে যে কারও বায়োমেট্রিক ছাপ মিলল, তারপর বলা হলো আপনি চলে যান। ছবি প্রকাশ হয়েছে যে গোপন কক্ষে প্রবেশ করে ভোটটা অন্য কেউ দিয়ে দিচ্ছেন। কেন্দ্র পুরোপুরি দখলে রাখা হয়েছে। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। অধিকাংশ কেন্দ্রে বিরোধীদের কোন এজেন্ট ছিল না। তার মানে কি তারা কোন এজন্ট দেননি নাকি তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন বলেতো আমরা দেখিনি।
তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই একটা বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছি। আমরা যদি ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে না পারি তাহলেতো গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা হবে না। তাহলেতো একটা বিপর্যয় ডেকে আনবে। আখেরে কারও জন্য লাভ হবে না। শাসক দল, নির্বাচন কমিশন, এমনকি আমলাতন্দ্রের জন্যও কোন লাভ হবে না। কারণ হলো যে গণতন্ত্রের জন্য একটি শক্তিশালী আমলাতন্ত্র দরকার। গণতন্ত্রই যদিও না থাকে তাহলেতো আমলাতন্ত্র রাখার কোন প্রয়োজন পড়বে না। সুতরাং এটা নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনার দরকার আছে। এটার ওপরই নির্ভর করবে দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি। গণতন্ত্রই যদি না থাকে দেশের অগ্রগতি যে খুব হবে তাতো না। এর বড় প্রমাণ হলো পাকিস্তান। পাকিস্তান একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে এজন্যই যে সেখানকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অনেক ভঙ্গুর এবং দুর্বল।