ডিজিটাল ভোট এমনই হয়!

0

শামীমুল হক ॥ নতুন কিসিমের ভোট। মডেলও নতুন। অবাক বিস্ময় ভোটারদের মাঝে। নানা শঙ্কা, নানা প্রশ্ন তো রয়েছেই। ডিজিটাল মেশিনের এ ভোট কেমন হবে? সন্দেহ আর সংশয় নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে থমকে যেতে হয়েছে অনেককে। কারো ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলছে না। কারো আবার ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। মহিলা বুথে সহায়তায় ছিল পুরুষ স্বেচ্ছাসেবীর। আর সহায়তার নামে ভোটারের নয়, স্বেচ্ছাসেবীর ইচ্ছাতেই দেয়া হয়েছে ভোট। এমন ঘটনা ভূরি ভূরি। আবার কাউকে কাউকে সরাসরি বলা হয়েছে, ফিঙ্গার প্রিন্ট আপনার আর ভোট দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। এ নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারকেও ভোট দিতে দেখা গেছে। যা একেবারেই নতুন ইতিহাস। অপরদিকে বেশিরভাগ কেন্দ্রে ছিল না বিএনপি দলীয় প্রার্থীর এজেন্ট। সকালে কোনো কোনো কেন্দ্রে এজেন্ট গেলেও তাদের বের করে দেয়া হয়। আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে দেখা গেছে, ডামি এজেন্ট বসে আছে। এভাবেই সম্পন্ন হলো প্রথমবারের মতো ইভিএম-এ হওয়া ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন। এ ভোটও ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশে ভোট হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। হুদা কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই এ আওয়াজ শুরু হয় কমিশনে। কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে একক সিদ্ধান্তে আনাও হয় ইভিএম মেশিন। এ পর্যন্ত টুকটাক নির্বাচনও হয়েছে ডিজিটাল সিস্টেমে, ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনে। তার একটিও বিতর্কমুক্ত হয়নি। তার পরও ঢাকার দুই সিটিতে পুরোপুরি ইভিএম-এ ভোট নেয়া হয়। বিস্ময়কর তথ্য হলো- যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিরোধীদের মতামত উপেক্ষা করে ইভিএম-এর পক্ষে অবস্থান নেন, সেই সিইসি কেএম নুরুল হুদা নিজেই গতকাল ইভিএম-এ ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। সিইসির ফিঙ্গার প্রিন্টই মিলেনি। অবশ্য তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে নিজের ভোটটি দেন। এ ঘটনা উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের আইইএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের। এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন, গণফোরাম সভাপতি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অনেকেই। সবচেয়ে বড় কথা ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে ভোটারের নিরাপত্তার বালাই নেই। ভোটার কোথায় ভোট দিচ্ছে তা সহজেই বুথের পাশ থেকে অন্যরা দেখে নিচ্ছে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা নয়। বুথকে কঠোর নিরাপত্তায় রাখা নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্ব। যে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন হয়নি। এ অবস্থায় স্বল্পসংখ্যক ভোটার কেন্দ্রে গেলেও তারা ফিরেছেন একরাশ হতাশা নিয়ে। কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো ঘটনা হলো- প্রতিটি কেন্দ্রই ছিল আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে। গণতান্ত্রিক জামানার একদিনের বাদশাহ ভোটারদের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে অনেক আগেই। সে থেকে ভোটাররা কেন্দ্র-বিমুখ। ডিজিটাল সিস্টেম ভোটার টানবে এমন ধারণা নির্বাচন কমিশন করলেও তা হয়নি। সবই হয়েছে গুড়েবালি। সবমিলিয়ে হতাশ যেমন হয়েছে ইসি, তেমনি হতাশ ভোটাররাও। বেলা ১১টার পর যখন সিইসি ভোট দিয়ে বের হন তখন সাংবাদিকরা ভোটার উপস্থিতির হতাশাজনক চিত্রের বিষয়টি নজরে আনলে সিইসি বলেন, ভোটাররা আরো পরে আসবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বেলা ৪টা পর্যন্ত ভোট চলাকালে ভোটার উপস্থিতি বাড়েনি। বরং বিভিন্ন কেন্দ্রে সংঘাত, সংঘর্ষের খবরে ভোটাররা পিছুই হটেছে। ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে মসজিদের মাইক থেকে ডাকা হয়েছে বারবার। কিন্তু কোনো সাড়া মিলেনি। বেলা সাড়ে ১২টায় ঢাকা দক্ষিণের ৬০নং ওয়ার্ডের রইছনগর স্কুল কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে মসজিদের মাইকে ভোটারদের অনুরোধ জানানো হয়। ঢাকা দক্ষিণের ২০নং ওয়ার্ডে কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট নিজেদের আয়ত্তে এনেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি, সম্পাদকসহ নেতারা। রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে ভোট দিতে জনতাবাগ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়েছেন জহিরুল ইসলাম নামে এক ভোটার। তিনি কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমার ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বলেন, আপনি ভোট দেবেন? নাকি আমি দিয়ে দেবো? জহির প্রশ্ন রেখে বলেন, এটা তিনি কি করে বলেন? দিনব্যাপী ভোট শেষে ফল ঘোষণা প্রথম দিকে দ্রুততার সঙ্গে এগুলেও, সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ধীরস্থীর গতিতে রূপ নেয়। এত নাটকীয়তায় পরও দিন শেষে তা ফের নানা সন্দেহ আর সংশয়ের জন্ম দেয় জনমনে।