ইশরাকের প্রচারণায় হামলা সংঘর্ষ-গুলি কাউন্সিলর প্রার্থী মেহেরুন নেসার প্রচারণায় ফের হামলা

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ রাজধানীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের প্রচারণা ঘিরে হামলা, সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইশরাক অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর নেতাকর্মীরা তার প্রচারে হামলা চালিয়ে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করেছে। তবে আওয়ামী লীগ এ অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে বিএনপিই পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে। এদিকে একই দিনে ওয়ারিতে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী মেহেরুন নেসার প্রচারে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়ে চারজন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। গোপীবাগের হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে।
ঘটনার সময় আশপাশে পুলিশ থাকলেও ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি। ঘটনার কিছু সময় পর বৃটিশ হাইকমিশনার পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ি মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বাসায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে ওই ঘটনাকে অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করেন। ঘটনার পর বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করা হয় প্রতিপক্ষ হামলা করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে। তবে এতে নির্বাচনী প্রচারণা থেমে যাবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের তরফে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ভোটের মাঠে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা করা হয়েছে।
গতকাল পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী রাজধানীর মতিঝিলের সোনালী ব্যাংকের সামনে থেকে ১৬তম দিনের প্রচারণা শুরু করেন ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। সেখান থেকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে মতিঝিলের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী। পরে বেলা একটার সময় মিছিল নিয়ে গোপীবাগের সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের মুল ফটকের সামনে গেলে মিছিলে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। কলেজের মূল ফটকের সামনেই ঘটনার সূত্রপাত। সেখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৩৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রোকনউদ্দিন আহমেদের সমর্থকদের সঙ্গে ইশরাকের সমর্থকদের বিতন্ডা শুরু হয়। পরে দুই পক্ষ ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এসময় গুলির শব্দও শোনা যায়। প্রায় আধা ঘণ্টা দুই গ্রুপের মধ্যে চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
প্রত্যক্ষদর্শী হোসেন নামের এক হকার জানান, সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের শেষ প্রান্তে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। এসময় দেখতে পাই বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক ও স্থানীয় ওয়ার্ডের বিএনপির কাউন্সিলর প্রাথীর নেতৃত্বে তাদের কর্মী সমর্থকরা মিছিল নিয়ে যাচ্ছেন। মিছিলটি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে যাওয়ার সময় হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। অপর দিক থেকে আসা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। জুবায়ের নামের এক পথচারী বলেন, বিএনপির মিছিল যাওয়ার ১৫ মিনিট আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর একটি মিছিল সেন্ট্রাল কলেজের সামনে দিয়ে গোপীবাগের দিকে চলে যায়। তাদেরকে দেখে মনে হয়েছে আগে থেকেই তারা হামলা করবে। তাদের প্রস্তুতিটা সেরকমই ছিল। আকবর নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, হঠাৎ করেই দুই দলের প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হট্টগোল লেগে যায়। এরপর অন্তত ১০ মিনিট ধরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তারা। এসময় অন্তত ৭/৮ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। জুবায়ের নামের স্থানীয় এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, নামাজ পড়তে বসেছিলাম। এর মধ্যেই হট্টগোলের শব্দ শুনতে পাই। বাইরে বের হয়ে দেখি দুই পাশ থেকে শুধু ইটপাটকেল ছোঁড়া হচ্ছে। কয়েকজনকে আহত হতে দেখেছি। রহিম নামের এক রিকশা চালক বলেন, সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে রোডেই আমি রিকশার মধ্যে বসেছিলাম। এসময় আমার পাশ দিয়ে প্রথমে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা মিছিল নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর বিএনপির প্রার্থীর একটি মিছিল ওই দিকে যাওয়া মাত্রই মারামারি শুরু হয়। সরজমিন দেখা গেছে, গোপীবাগ আরকে মিশন রোড, টিকাটুলি রোড এলাকায় শুধু ইটের ছোট বড় অসংখ্য টুকরো পড়ে ছিল। দুই দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী পোস্টার ছিড়ে রাস্তায় রাখা হয়েছে। আশে পাশের কয়েকটি রোডের ব্যবসায়ীরা দোকানের সাটার বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করছিলেন। বাসা বাড়ির বাসিন্দারা গেট বন্ধ করে ভেতর থেকে সংঘর্ষ দেখছিলেন। সংঘর্ষের কারণে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ পথচারীরা ইটপাটকেল থেকে রক্ষা পেতে দিকবিদিক ছুটছিলেন। ডিএমপির ওয়ারি জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার নুরুল আমীন বলেন, উত্তেজিত স্লোগান দেয়াকে কেন্দ্র করেই সংঘর্ষ বাধে। বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি বেশ থমথমে ছিল। সিসি টিভির ফুটেজ দেখে কারা হামলা করেছে সেটি বের করা হবে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া শুনেছি আর্মসের ব্যবহার হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওয়ারি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
এদিকে গতকাল দুপুরে প্রচারণা চালানোর সময় রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মেহেরুননেসার সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলায় তিন জন আহত হয়েছেন। হামলায় আহত থানা শ্রমিক দলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শান্ত (৩৫), শেখ রবিন (৪৫) ও মো. আরজুকে (৪০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে শান্ত গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
এদিকে হামলা-সংঘর্ষের পর ইশরাক হোসেন বলেন, হামলা চালিয়ে মাঠছাড়া করা যাবে না। আমি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য আমি জীবন দিতে প্রস্তুত। রক্ত ঝরাতে প্রস্তুত। আমরা জনগণের অধিকারের লড়াইয়ে আছি। গুলির শব্দে আমি ভয় পাই না। কোন হামলার ভয় পাই না, আমি মাঠে আছি, থাকবো। মরতে হলে আমি মরব। আবারও বলছি সন্ত্রাসীরা মারতে এলে আমি মাঠ ছেড়ে দেব না। প্রচারণায় হামলার ঘটনায় নেতাকর্মীদের বিচলিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইশরাক বলেন, এ ধরনের হামলার ঘটনা ন্যক্কারজনক। ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার দেখে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটিয়েছে সরকার। আমি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা শান্ত থাকবেন। বিচলিত হওয়ার কোন কারণ নেই। এটি নির্বাচনকে বানচাল করার, ভোটারদের ভয়-ভীতি প্রদর্শনের একটা অপচেষ্টা। এতে কেউ বিভ্রান্ত হবে না। আমরা অবশ্যই ভোটারদের আহ্বান জানাব, আপনারা পহেলা ফেব্রুয়ারি নির্ভয়ে কেন্দ্রে যাবেন, এসব ঘটনায় আপনারা বিন্দুমাত্র বিচলিত হবেন না। ইশরাক বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণসংযোগ করে বাসায় আসছিলাম। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের লাভলী চৌধুরীর ক্যাম্প থেকে আমরা আসছিলাম। আকস্মিকভাবে আমাদের উপর হামলা চালানো হয়। তিন জন সাংবাদিক ও ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আমার উপরে হামলার আশঙ্কা ছিল, আমার নেতাকর্মীরা আমাকে সুরক্ষা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনার এর ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, ওখান থেকে যখন চলে আসি তখন কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়। আমি নিজে গুলির শব্দ শুনতে পাই। আমি একজন মেয়র প্রার্থী, আমি গণসংযোগ করে বাসায় আসছি তখন এই ধরনের একটা হামলা হলো। যখন যে হামলা হয়েছে তা নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা কোনো পদক্ষেপই নেননি। আমি কোন ধরনের নিরাপত্তা পাচ্ছিনা। পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে বিএনপ্থির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে তারা এসেছেন। কামরাঙ্গীরচরে আজকের মত এরকম একটা ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিলো। সেখানে পুলিশ যথেষ্ট পরিমাণ সুরক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু ওয়ারী থানায় ন্যাক্কারজনকভাবে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। কাউন্সিলর প্রার্থীর ক্যাম্প পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আরেক জনের মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। এই থানার কর্মকর্তা একেবারেই দায়সারা। তিনি কোনকিছুর পরোয়া করেন না।