আইসিজের রায় প্রত্যাখ্যান মিয়ানমারের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ রোহিঙ্গাদের গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে ‘অন্তর্বর্তী নির্দেশ’ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) রায় প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই রায় সত্যিকার পরিস্থিতির বিকৃত রূপ উপস্থাপন করেছে। বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাদের গণহত্যা থেকে রক্ষা ও গণহত্যার অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সকল প্রমাণ সংরক্ষণ করতে মিয়ানমারকে নির্দেশ দিয়েছে আইসিজে। নির্দেশগুলো আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক ও আপিলযোগ্য নয়। তবে তা বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে বাধ্য করার কোনো উপায় নেই আইসিজের। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের নৃশংস সামরিক অভিযানে রাখাইনে প্রাণ হারান অসংখ্য রোহিঙ্গা। বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ। গত নভেম্বরে ওই সামরিক অভিযানে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোন এনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া।
পরবর্তীতে ডিসেম্বরে মামলার শুনানিতে গাম্বিয়া যুক্তি উপস্থাপন করে যে, মিয়ানমারে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে গণহত্যার পরিস্থিতি। তা আটকাতে মিয়ানমারকে অন্তর্বর্তী পদক্ষেপ বাস্তবায়নের নির্দেশ দিতে আইসিজের কাছে আবেদন করে তারা। সে আবেদন মেনেই বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতভাবে নির্দেশ জারি করে আদালত। তবে মূল মামলাটি আরো কয়েক বছর ধরে চলার কথা রয়েছে।
বৃহস্পতিবারের রায় প্রত্যাখ্যান করে নিয়ে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি দিয়েছে। বলেছে, তাদের নিজস্ব কমিশন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশন অব ইনকুয়ারি-র অনুসন্ধানে রাখাইনে গণহত্যার কোনো প্রমাণ মেলেনি। তবে কমিশন জানিয়েছে যে, সেখানে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে ও তা মিয়ানমারের বিচার ব্যবস্থার আওতায় তদন্ত করা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ‘মানবাধিকারকর্মীদের’ সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক ক্ষুণ্ন করছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এতে রাখাইনে টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি গড়ায় মিয়ানমারের সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
রায়টির বিরোধীতা করেছেন মিয়ানমারের অনেক বাসিন্দাও। বিবিসির ফেসবুক পেজে রায়টি সরাসরি সম্প্রচারের সময় নু ইমউইন নামের একজন লিখেন, এই রায় সুষ্ঠু ও ন্যায্য না। আমি মিয়ানমারের জনগণের হয়ে বলতে চাই যে, ওই বিচারকরা অন্ধ। তারা বধির। তারা দেশের সত্যিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানে না।
কিয়াও মিন্ত ও নামে একজন লিখেন, এই রায় দেশের জন্য দুঃখজনক। আমাদের অবস্থা হচ্ছে অজগরের চাপ পিষ্ট হতে থাকা কোনো শিকারের মতো। একসময় তাদের সকল দাবি মেনে নিতে আমাদের বাধ্য করা হবে।
এদিকে, মিয়ানমার প্রত্যাখ্যান করলেও বিশ্বব্যাপি সমাদৃত হয়েছে আইসিজের রায়। বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন ইউকে’র প্রেসিডেন্ট তুন খিন এক টুইটে বলেন, আইসিজের রায়টি রোহিঙ্গাদের ন্যায় বিচারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এ সিদ্ধান্ত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, আদালত গণহত্যার অভিযোগ গুরুতরভাবে নিচ্ছে ও মিয়ানমারের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যানের ফাঁপা চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত একটি শক্ত বার্তা পাঠিয়েছে যে, বিশ্ব মিয়ানমারের পাশবিকতা সহ্য করে যাবে না। গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর তাম্বাদু জানান, তিনি রায়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছেন।