যশোরে পৌর কাউন্সিলর হাজি সুমনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা : পাল্টা অভিযোগ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছাগল ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর আটকে রেখে মারপিট, চাঁদা আদায় ও জোরপূর্বক চেক বইতে স্বাক্ষর করে নেয়ার অভিযোগে যশোরের পৌর কাউন্সিলর হাজি সুমনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। হাজি সুমন (৩৮) পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। এবং শহরের পোস্টঅফিস পাড়ার আব্দুল খালেকের ছেলে। অপর আসামিরা হলেন ষষ্ঠিতলাপাড়ার শওকত আলীর ছেলে সুমন (৩৫), একই এলাকার ইমন (২৮) এবং শহরতলীর বাহাদুরপুর পশ্চিমপাড়ার আব্দুল খালেকের ছেলে তরিকুল ইসলাম (৪০)। যশোর কোতয়ালি থানায় বুধবার মামলাটি করেছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের জান মোহাম্মদের ছেলে জিবার উদ্দিন জীবন (৩০)। এছাড়া অজ্ঞাত ৭/৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অপরদিকে মামলার বাদী জিবার উদ্দিন জীবনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে পাল্টা মামলা করেছেন হাজি সুমন পরে মারিফুল ইসলাম সুমন। তিনি ষষ্ঠিতলাপাড়ার শওকত আলীর ছেলে। এ মামলায় পুলিশ জীবনকে আটক করেছে। জিবার উদ্দিন জীবনের দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি ছাগলের ব্যবসা করেন। গত ২৬ নভেম্বর সকালে উন্নতমানের ছাগল কেনার জন্য যশোরের ছাগল ব্যবসায়ী বাহাদুরপুর গ্রামের খামারি তরিকুল ইসলামের বাড়িতে যান। ওই দিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি বাহাদুরপুর বাজারের রাসেলের চায়ের দোকানের সামনে বসেছিলেন। এসময় আসামিরা ৫/৬টি মোটরসাইকেল নিয়ে সেখানে যান এবং তাকে জোর করে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে মারিফুল ইসলাম সুমনের ষষ্ঠিতলাপাড়াস্থ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিটে জখম করেন। তার কাছে চাঁদা হিসেবে ১ লাখ টাকা চাওয়া হয়। পরে তার কাছে থাকা ইসলামী ব্যাংকের একটি চেকে ৮৫ হাজার টাকা লিখে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করে নেয়া হয়। আটকে রেখে ব্যাংক থেকে ওই ৮৫ হাজার টাকা উঠিয়ে নেন তারা। তার একটি দামি মোবাইল ফোন সেট কেড়ে রাখা হয়। পরদিন ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে খুলনা থেকে রাজশাহীগামী কপোতাক্ষ ট্রেনে উঠিয়ে দেয়া হয় জিবার উদ্দিন জীবনকে। একই সাথে তারা হুমকি দেন যে, এই নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে জীবনে শেষ করে দেয়া হবে। পুরো ঘটনার সাথে কাউন্সিলর হাজি সুমন ছিলেন।
এদিকে মারিফুল ইসলাম সুমনের দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি জীবন তার পূর্বপরিচিত। তিনি ভারত থেকে উন্নতমানের ছাগল বাংলাদেশে এনে বিক্রি করে থাকেন। গত ৬ আগস্ট তার নিজের বাড়িতে বসে আসামির কাছ থেকে ৪৪টি বড় জাতের ছাগল কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা দেন। জীবন ওই টাকা বুঝে নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ছাগলগুলো দেবেন বলে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু ধার্য তারিখে জীবন ছাগল বুঝে না দেয়ায় তার সন্দেহ হয়। তিনি যোগাযোগের চেষ্টা করেন এবং লোক মারফত খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার টাকা দিয়ে জীবন ছাগল কিনে অন্য লোকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। পরে তিনি জীবনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তাকে জানানো হয় যশোরে ফিরে তিনি টাকা পরিশোধ করবেন। গত ২৭ নভেম্বর তিনি যশোরে আসলে টাকা চাওয়া হয়। এসময় জীবন তালবাহানা করতে থাকেন। পরে স্থানীয় লোকজনের মধ্যস্থতায় ১ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলেন তিনি। বাকি টাকা ৩ মাসের মধ্যে পরিশোধ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন এবং ৮৫ হাজার টাকার একটি চেক দেন। সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি জীবনের সাথে দেখা হলে বাকি ২৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি টাকা পরিশোধ করবেন না বলে জানান এবং উল্টো হুমকি দেন। এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই পলাশ বিশ্বাস জানান, প্রতারণা মামলায় আসামি জীবনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।