বিচার মেলেনি, উল্টো বরখাস্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে বিচার চেয়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মঞ্জু মনোয়ারা। চার বছরে তিনি অভিযোগের বিচার পাননি। উল্টো অসদাচরণের অভিযোগে এনে তাকে বরখাস্ত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রোববার বিকেলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের স্বাক্ষরিত আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
আদেশে বলা হয়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি উদ্ধত আচরণের এবং সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি ক্রমাগত দুর্ব্যবহারের কারণে তার বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। এর আগে রোববার সকালেই হাইকোর্টে সহকর্মীর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে রিট দায়ের করেছিলেন মঞ্জু মনোয়ারা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিচার না পেয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন বলে জানা যায়। তার রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই রিপোর্ট চাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় ওই নারী কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলো মন্ত্রণালয়। তবে সেখানে যৌন হয়রানির কোনো বিষয় উল্লেখ নেই।
আদেশে বলা হয়, কর্মস্থলে মঞ্জু মনোয়ারার নানাবিধ অসদাচারণ, স্বেচ্ছাচারিতা, সরকারি চাকরির শিষ্টাচার বহির্ভূত কর্মকাণ্ড, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি উদ্ধত আচরণ এবং অন্যান্য সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রতি ক্রমাগত দুর্ব্যবহার চরম অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এছাড়া জাপানের টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে কর্মরত থাকার সময়ও তিনি মিশনের কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন বলে উল্লেখ করা হয় বরখাস্তের আদেশে। মঞ্জু মনোয়ারা বিসিএস (পররাষ্ট্র) ক্যাডারের ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তা । ২০১৫ সালে বাংলাদেশ দূতাবাস টোকিওতে প্রথম সচিব হিসেবে কর্মরত অবস্থায় পররাষ্ট্র সচিবের কাছে তার সহকর্মী দূতাবাসের কাউন্সেলর মোহাম্মদ নুরে আলমের (বর্তমানে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কাউন্সিলর) বিরুদ্ধে নারী নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগপত্রে মঞ্জু মনোয়ারা জানান, ‘নিপীড়নের ভয়াবহতা চরম আকার ধারণ করে যখন ২০১৫ সালের ১২ জুন মোহাম্মদ নুরে আলম আমাকে গর্ভকালীন অবস্থায় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার হুমকি দেন। এতে আমি প্রচণ্ড ভয় এবং মানসিক আঘাত পাই। যার পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৯ জুলাই আমার গর্ভস্থ সন্তানের হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়।’
অভিযোগপত্রে মঞ্জু মনোয়ারা দাবি করেন, সেই অভিযোগের পরে তাকে টোকিও থেকে ভারতের মুম্বাই মিশনে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি মুম্বাই মিশনে যোগ দেননি। পরে তিনি যখন যোগ দেন তখন তাকে মিশন ভবনে ঢুকতে দেয়া হয়নি। অভিযোগপত্রে মঞ্জু উল্লেখ করেন, পরে তাকে মুম্বাই মিশনের একটি কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এর ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে এনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন বিভাগে সংযুক্ত করা হয়।