যুদ্ধ ছড়ালে প্রভাব পড়বে জ্বালানির বাজারে

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে। গত শুক্রবার ইরানের আল কুদ্‌সের প্রধান কাশেম সোলাইমানি যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশেও। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়ালে এবং বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সূত্র বলছে, বাংলাদেশে অপরিশোধিত তেল বেশি আসে সৌদি আরব থেকে । এছাড়া কুয়েত ও ইইউ থেকেও তেল আনা হয়। সৌদির সঙ্গে বছরে দুইবার জুলাই ও জানুয়ারিতে রাষ্ট্রীয় চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী তেল আমদানি করা হয়। চুক্তিতে তেলের যে দর থাকে সেই অনুযায়ী আমদানি করা হয়।
বিশ্বের ছোট-খাটো কোনো ইস্যু তেলের দামে সাময়িক প্রভাব পড়ে না। গত ৩০ বছর ধরে এভাবেই জ্বালানি তেল আসছে বলে ওই সূত্র দাবি করেছে। কোনো কারণে যদি সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশ যুদ্ধে জড়ায় এবং তেল উৎপাদন না করে তাহলে জ্বালানির বাজারে প্রভাব পড়বে। মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় বাংলাদেশের তেলের বাজারে প্রভাব পড়বে কি-না জানতে চাইলে বিপিসি’র জেনারেল ম্যানেজার আবু হানিফ বলেন, বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়বে না। বিপিসির সূত্র অনুযায়ী, দেশে বছরে সর্বমোট ৫৯ থেকে ৬০ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ডিজেল বেশি। বাকি ৯ থেকে ১০ লাখ টন ফার্নেস তেল। যা বিদ্যুতের জন্য ব্যবহার করা হয়।
মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় বাংলাদেশে তেলের বাজারে কী প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)-র জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম মানবজমিনকে বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে। আন্তর্জাতিক বাজার তেলের দাম বাড়ছে। ফলে সব কিছুর দাম বেড়ে যাবে। অর্থনীতিতে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি জানান, বাংলাদেশে বছরে ৬০ লাখ টনের মত ডিজেল দরকার হয়। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে লাগে ফার্নেস তেল। তা বেশি নয়। জানতে চাইলে দেশের বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ম. তামিম মানবজমিনকে বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। বড় ধরনের কোনো কিছু ঘটলে অবশ্যই তেলের দামে প্রভাব পড়বে। তেলের দামের ঊর্ধ্বগতিতে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। চুক্তি করে তেল আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেদিন চুক্তি করা হলো সেইদিন এবং আগে পরে দুইদিন করে চারদিন মোট পাঁচ দিনের গড় অতিরিক্ত মূল্য হিসাব করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়। আর তেলের মূল্য বুকিং দেয়া থাকলে তা হেজিং করা পদ্ধতিতে দাম নির্ধারণ করা হয়। এতে দাম কমলে বা বাড়লেও ওই নির্ধারণ করা দামেই তেল কেনা হবে।
বিশ্ব মিডিয়াগুলো খবর দিচ্ছে, গত শুক্রবার বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত ব্রেন্টের দাম ৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এক ব্যারেল অপরিশোধিত ব্রেন্টের দাম এখন সাড়ে ৬৯ ডলারে পৌঁছেছে। গত শুক্রবার বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর তেলের মূল্য বৃদ্ধি পায়। ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনায় ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম এবং রয়্যাল ডাচ শেলের শেয়ারের দাম প্রায় দেড় শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় যদি বিশ্বে আরেকটি যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে তেলের দামে কী ঘটবে সেটি বিশেষভাবে জানা কঠিন হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইরানের পাল্টা প্রতিশোধের আশঙ্কায় তেলের দাম সাময়িক বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিটিব্যাংকের বিশ্লেষকরা।