পাঁচ চ্যালেঞ্জে ইসি

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ মনে করছে নির্বাচন কমিশন। দুই সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে পাঁচটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা; ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনা; ভোট কেন্দ্রে প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা; দুই সিটিতে শতভাগ ইভিএম ভোট গ্রহণ ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে। তারা বলেছেন, দুই সিটিতে ইভিএমে ভোট করতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। সেই সঙ্গে ইভিএম বিরোধীদের আস্থায় আনতে হবে। নির্বাচন কমিশনাররাও ঢাকা সিটি নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। এজন্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের সতর্কভাবে কাজ করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সিটি ভোটের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রথম প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘যন্ত্রে ভোট গ্রহণ নিয়ে এখনো দেশে অনেকের আপত্তি আছে। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেই ইভিএমে টিকে আছি। এর মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ সফলভাবে করা যায়।’ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘ইভিএম প্রশ্নবিদ্ধ হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে।’ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইসি একটা গ্রহণযোগ্য ও আইনানুগ নির্বাচন প্রত্যাশা করে।’ কবিতা খানম বলেন, ‘ইভিএম একটা চ্যালেঞ্জ। যারা নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছেন তারা পুরো নির্বাচনটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবেন।’ শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর করে কমিশনের ভাবমূর্তি। কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা দৃশ্যমান করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ইসির পাঁচ চ্যালেঞ্জ : বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিপপের চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেছেন, প্রথমত ভোটার উপস্থিতিটা বড় চ্যালেঞ্জ, দ্বিতীয়ত ইসি শতভাগ ইভিএম কার্যকর করতে যাচ্ছে। এজন্য যত বেশি ট্রেনিং, ইভিএম প্রদর্শনী করতে পারবে তত ভোটারদের মধ্যে কনফিডেন্স তৈরি হবে। তখন তারা দলে দলে ভোট দিতে যাবে। সব মিলে ব্যাপকভাবে ইভিএমের প্রচার চালাতে হবে। তৃতীয়ত পুরান তথা ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাটা বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা ওখানে রাস্তাঘাট প্রশস্ত নয়, সবখানে সব সময় পৌঁছানো ডিফিকাল্ট। চতুর্থত সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে কমিশনারদের দৃশ্যমান থাকতে হবে। এসি রুমে বসে ফাইল ওয়ার্ক করলে চলবে না। আর কর্মকর্তাদের উপরে সব ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলেও চলবে না। পঞ্চমত সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে যেন সহায়ক পরিবেশ থাকে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে সতর্কতার সঙ্গে ইভিএম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে দুই চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সব ভেবেচিন্তে, দেখেশুনে এটা (ইভিএম) ব্যবহার করতে হবে। আমি ইভিএমে ভোট না করতে বলছি না। প্রস্তুতি ঠিকভাবে নিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করে এটা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন ২০২০ সালের প্রথম নির্বাচন। বিশ্ববাসী এটাকে পর্যবেক্ষণ করবে। সেজন্য এটাকে যতটা সম্ভব ত্রুটিমুক্ত করতে হবে। আর সবাইকে আস্থায় নিতে হবে। যারা ইভিএমের বিরোধিতা করছেন, তাদের সঙ্গে বসুন, তাদেরকে দেখান, তাদেরকে আস্থায় আনুন।’ তিনি বলেন, ইভিএম প্রথম টেস্ট করা হয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে। গত সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে করা হয়েছে। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা। আর বিদেশে বহু দেশ ইভিএম শুরু করে আবার বন্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড আছে। আবার অনেকে আছে এটা ২০ বছর ধরে চালাচ্ছে। তার মধ্যে ব্রাজিল, ইন্ডিয়া উন্নতম। ইন্ডিয়ায় এটা নিয়ে অনেক অবজেকশন হয়েছে। অবজেকশনের মুখে তারা রেখেছে। কিন্তু তারা মডিফাই (সংস্কার) করেছে। তারা ইভিএমের সঙ্গে পেপার প্রিন্ট অ্যাড করেছে। তাহলে পুনঃ গণনার প্রশ্ন এলে প্রিন্ট আউট দিয়ে এটাকে পুনঃ গণনা করতে পারবে।
আপিল করার সময় শেষ হচ্ছে কাল : ঢাকার দুই নির্বাচনে যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়া প্রার্থীরা রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নিযুক্ত আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে বাদ পড়া প্রার্থীরা আপিল করতে পারবেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে নির্বাচন কমিশন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে নিয়োগ দিয়েছেন। আগামীকাল পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন প্রার্থীরা।
মোট বৈধ প্রার্থী ৯৯৩ জন, মনোনয়নপত্র বাতিল ৪৬ জনের : ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটিতে মোট ১৪ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে একজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে ১৩ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ করেছেন রিটার্নিং অফিসার। আর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে উত্তরের জাতীয় পার্টির প্রার্থীর। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাপাসহ সাতজন মেয়র প্রার্থীই বৈধ হয়েছেন। ৪৬০ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৪৩৪ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে, বাতিল হয়েছে ২৬ জনের প্রার্থিতা। আর সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের ১০২ প্রার্থীর মধ্যে ১০০ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে, বাতিল হয়েছে দুজনের প্রার্থিতা। এদিকে উত্তরে সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ছয়জনের মনোনয়নপত্র বৈধ আর একজনের প্রার্থিতা বাতিল করেছে রিটার্নিং অফিসার। এ ছাড়া ৩৭৪ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে বৈধ হয়েছেন ৩৫৯ জন, বাতিল হয়েছে ১৫ জনের। ৮৯ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে বৈধ হয়েছেন ৮৭ জন, বাতিল হয়েছে দুজনের। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৯ জানুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ জানুয়ারি। প্রচার শেষে ভোট হবে ৩০ জানুয়ারি।