মার্কিন হামলায় জেনারেল সোলাইমানি নিহত

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন সামরিক হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের এলিট শাখা কুদ্‌স ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ নির্দেশের মাধ্যমে বছরের শুরুতেই মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা নতুন মাত্রায় নিয়ে গেলেন তিনি। সোলাইমানি ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের একজন। সাধারণত লাইমলাইট থেকে দূরে থাকলেও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বৃদ্ধির কারিগর ধরা হয় তাকে। অনেকে তাকে দেশটির পরবর্তী সুপ্রিম লিডার হওয়ার প্রতিযোগিতায়ও এগিয়ে রেখেছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তারে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুলাইমানির ওপর মার্কিন হামলার প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়ে, বিধ্বংসী প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে ইরান। দেশটির সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আল খোমেনি তার মৃত্যুতে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, অপরাধীদের জন্য কঠিন প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অনুসারে, বৃহস্পতিবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন সামরিক বাহিনীর চালানো এক হামলায় নিহত হন সোলাইমানি। ইরাকে মার্কিন দূতাবাসে বিক্ষোভকারীদের হামলার একদিন পর এই হামলা চালালো যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের রাষ্ট্র পরিচালিত গণমাধ্যম জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হেলিকপ্টার দিয়ে চালানো হামলায় জেনারেল সুলাইমানি ও ইরাকি মিলিশিয়া নেতা আবু মাহদি আল-মুহানদিস সহ আটজন নিহত হয়েছেন।
যেভাবে মারা গেলেন সুলেইমানি: সামপ্রতিক সময়ে একাধিকবার বাগদাদে সফর করেছিলেন সুলাইমানি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘন ঘন সফরই সোলাইমানির মৃত্যু ডেকে আনে। ইউএস ইন্সটিটিউট অব পিস এর স্কলার রামজি মারদিনি বলেন, সুলাইমানি বাগদাদে এমনভাবে চলাফেরা করতেন যেন তিনি অস্পৃশ্য। তার এই চিন্তা ভুল ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বের প্রশাসনগুলো তার ওপর হামলার মতো সিদ্ধান্ত নিতো না। তিনি আরো বলেন, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের বিশাল নেটওয়ার্ক ধরে রাখার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন সোলাইমানি। তার মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্য ডেইলি মেইল জানিয়েছে, হামলার দিন সবেমাত্র সিরিয়া থেকে বাগদাদে পৌঁছেছিলেন সোলাইমানি। সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসতে যায় ইরাকের পপুলার মোবালাইজেশন ফোর্সেস এর মিলিশিয়ারা। স্থানীয় সময় বৃহসপতিবার দিবাগত মধ্যরাত ১২টা ৩৪ মিনিটে বাগদাদ পৌঁছেন তিনি। বাগদাদের বিমানবন্দর থেকে মিলিশিয়াদের সঙ্গে ফেরার সময় একটি মার্কিন ড্রোন থেকে চালানো চারটি ক্ষেপণাস্ত্রে ধ্বংস হয়ে যায় তাকে ও মিলিশিয়াদের বহনকারী দু’টি গাড়ি।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সোলাইমানির ওপর হামলার দায় স্বীকার করেছে। এক বিবৃতিতে বলেছে, তাকে হত্যার নির্দেশ দেন ট্রাম্প। বিবৃতিতে বলা হয়, সুলাইমানি ইরাক সহ মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কূটনীতিক ও কর্মকর্তাদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। এমনকি ইরাকে মার্কিন দূতাবাসে বিক্ষোভকারীদের হামলার পেছনেও জড়িত ছিলেন তিনি। আরো বলা হয়, বিদেশে অবস্থানরত মার্কিন কর্মীদের রক্ষা করতে এ নিষ্পত্তিকারী প্রতিরক্ষা পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। ইরানের ভবিষ্যৎ হামলা প্রতিরোধে এই হামলা চালানো হয়েছে। মার্কিন নাগরিকরা বিশ্বের যেখানেই থাকুক না কেন, যুক্তরাষ্ট্র সবসময় আমাদের জনগণ ও স্বার্থ রক্ষায় সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া অব্যাহত রাখবে। সোলাইমানি নিহত হওয়ার খবর প্রকাশের পরপরই নিজের টুইট একাউন্টে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পতাকার ছবি পোস্ট করেছেন ট্রাম্প। তার এ নির্দেশ অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শত্রু বধ হলো।
প্রতিশোধের হুমকি: জেনারেল সোলাইমানি ইরানের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের একজন। তার নেতৃত্বাধীন কুদ্‌স ফোর্স সরাসরি দেশটির সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ খোমেনির কাছে জবাবদিহি করে। দেশটিতে জাতীয় বীর হিসেবে পরিচিত তিনি। অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের শক্তি বৃদ্ধিতে তার ভূমিকা অনবদ্য। তার মৃত্যুর যথাযথ জবাব দেয়ার হুমকি দিয়েছে দেশটির নেতারা। রেভ্যুলুশনারি গার্ডসের সাবেক এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জানিয়েছে, খুবই কুৎসিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কঠোর জবাব দেবে ইরান। ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ বলেছেন, এই হামলার মাধ্যমে চরম মাত্রায় বিপজ্জনক ও বেকুবি করে উত্তেজনা বাড়িয়েছেন ট্রাম্প। এটা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ। এই অপরাধের জন্য মার্কিন প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ইরান তাদের সকল রাজনৈতিক, আইনি ও আন্তর্জাতিক সক্ষমতা প্রয়োগ করবে। সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ খোমেনি বলেছেন, আমার সব বন্ধু ও শত্রুরা এটা জেনে রাখুন- বিদ্রোহের জিহাদ এখন নতুন উদ্দীপনায় চলবে। যোদ্ধাদের জন্য রহমতের এ পথে জয় অপেক্ষা করছে। আমাদের প্রিয় জেনারেলের মৃত্যু তিক্ততার। কিন্তু আমাদের অবিরাম লড়াই ও জয় তার হত্যাকারী ও অপরাধীদের জন্য অধিকতর তিক্ত হবে।