বাঁচার লড়াইয়ে মৃত্যুর খবর চাইনা

0

রাষ্ট্রপক্ষ আবারও প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করেছে। পাটকল শ্রমিকরা নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ পর ফের রাজপথে ফিরে এসেছে। শুরু করেছে আমরণ অনশন। গত ৫ দিন ধরে তারা খুলনা, নওয়াপাড়া ও নরসিংদিতে আমরণ অনশন করছে। প্রচণ্ড শীত ও বৃষ্টিতে ইতোমধ্যেই কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে বিশেষ কোন ব্যবস্থা গৃহিত হয়নি। ফলে, ডিসেম্বরের আন্দোলনের পরিণতির শঙ্কা রয়েছে। ওই সময় অনশনে ৩ জনের মৃত্যু ঘটে বলে খবর হয়। এরপর সরকার শ্রমিকদের সাথে আলোচনায় আসে এবং ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি মানার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকদের অনশন ভঙ্গ করায়। এরপর আবার সেই পথে যাত্রা শুরু হয়েছে। আমরা মনে করি, সরকারের উচিত তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। আমরা চাই না বাঁচার জন্য আন্দোলনে করে কারো মৃত্যু হোক, কারো পরিবার বাঁচার শেষ অবলম্বন হারিয়ে পথে বসুক।
সংবাদ মাধ্যমের তথ্যানুযায়ী খুলনা-যশোর অঞ্চলে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রয়েছে ৯টি। খুলনায় সাতটি ও যশোরে দুটি। স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন এসব পাটকলে। বিভিন্ন সমস্যার পরিপ্রেেিত ২০১৯ সালের শুরুর দিকে শিল্পনগরী খুলনায় তাঁরা আন্দোলন শুরু করেন। থেমে থেমে সারা বছর ধরেই তা চলেছে। ১১ দফা দাবিতে তাঁদের আন্দোলন এখনো চলছে। সভা-সমাবেশ, মিলগেটে বিােভ, ভুখা মিছিল, সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন প্রভৃতি কর্মসূচি পালন শেষে গত ১০ ডিসেম্বর শুরু হয় আমরণ গণ-অনশন কর্মসূচি। প্রথম দফার গণ-অনশনকালে দুজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ১১ দফার মধ্যে বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও মজুরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন মূল দাবি। পাটের মৌসুমে মিলগুলোকে পর্যাপ্ত অর্থবরাদ্দ দেওয়া, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ব্যবস্থা বাতিল করা, বদলি শ্রমিকদের স্থায়ী করা, বরখাস্ত বন্ধ করা ও বরখাস্তকৃত শ্রমিক-কর্মচারীদের পুনর্বহাল করা এবং পাটকলগুলোকে লাভজনক করার দাবিও রয়েছে।
আমরণ গণ-অনশন কর্মসূচি রাষ্ট্রপরে আশ্বাসে ১৪ ডিসেম্বর স্থগিত করা হয়। ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নিয়েছিল রাষ্ট্রপ। দাবিনামা পূরণ না হওয়ায় গত রবিবার আবার আমরণ গণ-অনশন শুরু করেন শ্রমিকরা। খুলনা-যশোর শিল্পাঞ্চলের রাজপথেই রাত-দিন পার করছেন তাঁরা। তাঁদের টানা কর্মসূচিতে মিলগুলোর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ফলে ওই সব মিলে প্রতিদিন কোটি টাকার তি হচ্ছে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দফায় গত ২৯ ডিসেম্বর আমরণ অনশন শুরু হয়েছে। বিজেএমসি বা সরকারের প থেকে দাবি মানার বিষয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর দৈনিক উৎপাদন ল্যমাত্রা ২৭২.১৭ মেট্রিক টন। উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮৬.৩৯ মেট্রিক টন। শুধু খুলনায় নয়, রবিবার থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন নরসিংদীর ইউএমসি জুটমিলের শ্রমিকরাও। অনশন করতে গিয়ে এরই মধ্যে তাঁদের তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তীব্র শীতের মধ্যেও দিন-রাত মিলের সামনে অনশন করছেন তাঁরা।
আড়াই দশক ধরে দেশের পাট খাত চরম অবজ্ঞার শিকার। মাঝখানে একটা সময়ে পাটকলগুলো বিলুপ্ত হতে যাচ্ছিল। ২০০৯-১০ সালে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এ খাতের পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু অব্যবস্থাপনা ও বেসরকারি অংশের শোষণমূলক আচরণের কারণে কাক্সিত পরিবর্তন ঘটেনি। শ্রমিকরা শোষণ ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন এখনো। সার্বিক পরিপ্রেেিত তাঁদের আন্দোলনকে অন্যায্য বলার অবকাশ নেই। রাষ্ট্রপ শ্রমিকদের যে আশ্বাস দিয়েছিল তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা আশা করি সরকার আবারও শ্রমিকপরে সঙ্গে আলোচনা করে তাদের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমস্যার দ্রুত সমাধান করবে। তারাও নিশ্চয় আর কোনো শ্রমিকের মৃত্যু দেখতে চাইবে না। তারা অবশ্যই মনে রাখবে শ্রমিক বাঁচলে পাট শিল্প বাঁচবে, বাঁচবে পাটচাষ ও চাষি।