৩৫ কর্মীর আত্মহত্যার দায়ে সাজা শীর্ষ নির্বাহীর

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ফরাসি টেলিযোগাযোগ কোম্পানি অরেঞ্জ-এর ৩৫ জন কর্মী আত্মহত্যা করেছেন। ১০ বছর পর ওই মৃত্যুর জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীদের। তাদের বিরুদ্ধে ‘সামগ্রিক নৈতিক হয়রানি’ ও ‘প্রাতিষ্ঠানিক হয়রানি’র মাধ্যমে তিক্ত কর্মপরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, কর্মপরিবেশের ভয়াবহ অবস্থার কারণেই ওই কর্মীরা আত্মহত্যা করেছেন। এ খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিষয়ক বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস।
খবরে বলা হয়, অরেঞ্জ একটি বৈশ্বিক কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক আছে ২৬.৬ কোটি। এখানে কাজ করে ১ লাখ ৫০ হাজার কর্মী। একসময় সরকার চালিত হলেও এখন এটি বেসরকারি।
কিন্তু সরকার থেকে বেসরকারি দায়িত্বে যাওয়ার সময়ে ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় কোম্পানিটি। ব্যয় কমাতে প্রায় ২২ হাজার কর্মীকে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেন শীর্ষ নির্বাহীরা। তবে ফ্রান্সে শীর্ষ নির্বাহীরা চাইলেই কর্মী ছাঁটাই করতে পারেন না। যদি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি থাকে তাহলে কোনো কর্মীকে ছাঁটাই করা অসম্ভব না হলেও, অনেক কঠিন। ফরাসি কোম্পানিতে কর্মীরা সাধারণত স্থায়ী চুক্তিতে কাজ করেন।
যেহেতু চাইলেই কর্মীদের ছাঁটাই করা যাবে না, তাই অরেঞ্জ-এর প্রধান নির্বাহী ও শীর্ষ নির্বাহীরা কোম্পানির ভেতর ‘ভয়ের পরিবেশ’ সৃষ্টি করেন, যেন সেখানকার কর্মীদের জন্য চাকরি করা অত্যন্ত কঠিন ও অসহ্য হয়ে ওঠে। এরপর যেন তারা নিজেরাই চাপ সহ্য করতে না পেরে চাকরি ছেড়ে চলে যান।
ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কর্মীদের বিভিন্ন অনুপযুক্ত কাজ করতে বাধ্য করে। বাড়ির চেয়ে অনেক দূরের অফিসে বদলি করে। যতটা সম্ভব কর্মীদের জীবন বিষাক্ত করে তোলাই ছিল এসবের উদ্দেশ্য। ফ্রান্সে চাকরি বদল করা সাধারণ ঘটনা নয়। সচরাচর নিজেদের ক্যারিয়ার এক কোম্পানিতেই কাটিয়ে দেয় ফরাসিরা। এছাড়া অভিজ্ঞ কর্মীদের জন্য নতুন চাকরি পাওয়াও কঠিন।
ফলে অফিসের ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে নতুন চাকরি না পেয়ে, অনেক কর্মী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। কোনো কর্মী ফাঁসিতে ঝোলেন, কেউ নিজের গায়ে আগুন দেন, আর কেউ বা জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে বা ট্রেনের সামনে লাফ দিয়ে মারা যান। মার্সেই-এর এক ৫১ বছর বয়সী কর্মী নিজের সুইসাইড নোটে সরাসরি নিজের অফিসের বসদের দায়ী করে যান।
গত সোমবার প্যারিসের একটি ফৌজদারি আদালতে প্রমাণ হয় যে, জ্যেষ্ঠ নির্বাহীরা অফিসে এক ধরণের ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়। আদালত বলেছে, যে উপায়ে তারা ওই ২২ হাজার কর্মীকে প্রস্থানে বাধ্য করার সিদ্ধান্ত নেয়, তা বৈধ ছিল না। সাবেক প্রধান নির্বাহী দিদিয়ের লম্বার্ডকে এই পরিকল্পনার মূল হোতা হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাকে ৪ মাসের কারাদ- ও ১৬০০০ ডলার জরিমানা করা হয়েছে। অরেঞ্জ-এর তৎকালীন মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক সহ একাধিক শীর্ষ কর্তাকেও কারাদ- ও জরিমানা করা হয়েছে। অরেঞ্জকে ৮৩ হাজার ডলার জরিমানা দিতে বলা হয়েছে।