রোগী দেখছেন না চিকিৎসকরা, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

0

খুলনা প্রতিনিধি॥ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে খুলনার স্বাস্থ্যসেবা খাত। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পরিস্থিতি সামাল দিতে আতঙ্কে নিয়মিত রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন খুলনার অনেক চিকিৎসক। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎকদের দেখা পাওয়া অনেকটাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ অনেকের। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের আউটডোরে (বহিঃবিভাগ) কোন রকমে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলেও রোগী ভর্তি রাখতেও অপারগতা প্রকাশ করা হচ্ছে। এদিকে, রোগী দেখতে চিকিৎসকদের এ ধরণের অনীহার কারণে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শত শত রোগাক্রান্ত মানুষ। এ কারণে সর্বাধিক ঝুঁকিতে রয়েছেন শিশু ও বয়স্করা। সবমিলিয়ে পুরো স্বাস্থ্যসেবাই এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
সূত্র মতে, দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে খুলনার সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। নিয়মিত রোগীও দেখছেন না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এতে দুরারোগ্য ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিকস ও শিশুরোগ নিয়ে খুলনাবাসী পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। একাধিক চিকিৎসক জানিয়েছেন, স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবা দিতে না পারার জন্য প্রধানত: দুটি কারণ দায়ী। এক, চিকিৎসকের পিপিই না থাকা; দ্বিতীয়ত, নিয়মিত রোগী ও তার স্বজনদের সংক্রমণ প্রতিরোধক ব্যবহারসহ সুরক্ষা দূরত্বে না থাকা। তবে, এসব বুঝতে চাইছেন না রোগী ও তাদের স্বজনরা। তারা চাইছেন, অতি দ্রুত সংক্রমণ প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট প্রাক্টিসে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবা পেতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর সোনাডাঙা থানাধীন একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তার বৃদ্ধ মাকে নিয়ে নগরীর খানজাহান আলী রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার মায়ের শরীরের একপাশ অবশ হয়ে গেছে। কিন্তু চিকিৎসক তড়িঘড়ি করে তার চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন। এর আগে ৩১ মার্চ চারটি হাসপাতাল-ক্লিনিক ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করে স্কুলছাত্র রিফাত। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ছিল সে।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. মো. সুজাত আহমেদ বলেন, ‘কোনও হাসপাতালে সাধারণ রোগীর চিকিৎসা বন্ধ করা হয়নি। তবে, বেসরকরি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে করোনা ভীতির কারণে মানবিকবোধ কমে গেছে।’ সেবার মানসিকতা নিয়ে মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে নিয়মিত রোগীর স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা দেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. বাহারুল আলম জানান, সরকারি-বেসরকারি ডাক্তার অবশ্যই রোগী দেখবেন। তবে সেই চিকিৎসকের জীবনের সুরক্ষা দেবে কে? আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পিপিই সরবরাহ করে রাষ্ট্রকে নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা দেবার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ‘চিকিৎসকরা কিভাবে নিজেদের নিরাপদ না রেখে রোগীর সেবা দেবেন। তবুও চিকিৎসকরা বসে নেই। জীবনবাজী রেখে সেবা দিচ্ছেন কেউ কেউ।’
বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন (বিপিএইচসিডিওএ) খুলনার সভাপতি ও বিএমএ’র সহ-সভাপতি ডা. গাজী মিজানুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবার একটা ক্রান্তিকাল চলছে। জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্তদের সরকার নির্ধারিত হাসপাতালে রেফার্ড করছি। নিয়মিত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘যারা প্রাক্টিস করবে, তাদের প্রধানত্ব দুই ধরনের সমস্যা এখন। চিকিৎসকদের পিপিই নেই, এটা না থাকার কারণে চিকিৎসকরাই নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। দ্বিতীয়ত্ব হল-আগত রোগীদের সংক্রমণ প্রতিরোধক ও সুরক্ষা দূরত্ব নিশ্চিতকরণের অভাব। এই সুরক্ষা নেই বলেই অনেকেই প্রাক্টিস করছেন না।’ প্রত্যেক চিকিৎসকের পিপিই ম্যানেজ হলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হবে না বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) খুলনার ও বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় বন্ধ থাকতে পারে, তবে শিগগির খুলবে। একটু আতঙ্ক কাজ করেছে। তারপরও ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের দ্রুত পিপিই সংগ্রহ করে চিকিৎসা সেবায় ফিরে আনা জরুরি।’ বিএমএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ড্যাব’র খুমেক হাসপাতাল শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. সেখ আখতারুজ্জামান বলেন, ‘চিকিৎসকদের নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে, সে কারণেই সাধারণ মানুষ আজ চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে।’

Lab Scan