চার্জার ফ্যানের যথেচ্ছ দামে মুনাফা লুটছে বিক্রেতা

0

আকরামুজ্জামান ॥ ভয়াবহ বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের বড় প্রভাব পড়েছে যশোরের ইলেক্ট্রনিক পণ্যের বাজারে। বিশেষ করে চার্জারফ্যান ও চার্জারলাইট বিক্রিতে যেনো রীতিমত অরাজক পরিস্থতি চলছে। গরম ও লোডশেডিংকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফালাভের আশায় এসব পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়েছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সোমবার (৫ জুন) বিকেলে যশোর শহরের মাইকপট্টি ও এমকে রোড এলাকায় চার্জার ইলেক্ট্রনিক পণ্যের দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি দোকানেই উপচেপড়া ভিড়। ক্রেতাদের একটাই উদ্দেশ্যে চার্জারফ্যান ও চার্জারলাইট ক্রয় করা। তবে দোকানিরা বলছেন, দুপুরের আগেই চার্জারফ্যান বিক্রি হয়ে গেছে।  ঢাকা থেকে মাল না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরম ও লোডশেডিংয়ের অজুহাতে চার্জারফ্যান ও লাইটের দাম আগের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। আগে ১২ ইঞ্চির ডিফেন্ডার চার্জারফ্যান ২৮৫০ টাকা দামে বিক্রি হলেও বর্তমান তা বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৫ শ টাকা দামে। একই অবস্থা সানকা ও কেনেডি চার্জারফ্যানের ক্ষেত্রেও। এই দুটি ফ্যানের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ৪১শ টাকার ১৬ ইঞ্চির ডিফেন্ডার ও সানকা ফ্যান বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮ হাজার ৫শ টাকায়। একই অবস্থা চার্জার লাইটের ক্ষেত্রেও। আগে যে লাইটের দাম ছিলো ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা সেগুলো এখন বিক্রি হচ্ছে ৫শ থেকে ৬শ টাকা দামে। গত দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে এসব ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম বেড়েই চলছে বলে ক্রেতারা জানান।
শহরের মাইকপট্টি এলাকার রোকন ইলেক্ট্রনিক এর বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, তাদের দোকানে যে চার্জারফ্যান ছিলো তা দুপুরের আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। চার্জার ফ্যানের এতো চাহিদা এর আগে তারা কখনও পায়নি বলে জানান। তাদের দাবি পাইকার বাজারে হঠাৎ চার্জারফ্যানের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি সংকট দেখা দেওয়ায় তারা আগের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি করছেন। তারপরও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পারছেন না তারা।
মাইকপট্টি এলাকার হাজী তাজের আলী সুপার মার্কেটের মেহেদী ইলেক্ট্রনিক্স এর মালিক মো. মেহেদী হাসান বলেন, গত চার দিন ধরে চার্জারফ্যান ও চার্জার লাইটের চাহিদা বেড়েছে। এই কয়দিন প্রতিটি দোকানেই রেকর্ড পরিমাণ চার্জারফ্যান ও লাইট বিক্রি হয়েছে। দ্বিগুণেরও বেশি দাম বাড়ার কারণ কী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে এসব ইলেক্ট্রনিক পণ্য কিনে আনছি। ফলে বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া আমাদের পক্ষে কোনও উপায় নেই।
একই কথা বলেন, মেসার্স আর আর ইলেকট্রনিক্স এর সেলস ম্যানেজার বাবু। তিনি বলেন, দাম বাড়ার বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের কিছুই করার নেই। আমরা মালের চাহিদা জানিয়ে অর্ডার দিলেও পাইকার বাজার থেকে চার্জার ফ্যানের সরবরাহ দিতে পারছে না। যশোরের মার্কেটে যে কয়টা ফ্যান ছিলো তা সকালের দিকেই বিক্রি হয়ে গেছে। এখন ক্রেতারা ভিড় করছে। আমরা তাদেরকে আগামীকাল আসার জন্য বলছি।
যশোর শহরের চাঁচড়া ডালমিল এলাকার আফরোজা বেগম নামে এক মহিলার সাথে কথা হয় মাইকপট্টি একটি ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের দোকানে। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে মাত্রাতিরিক্ত গরমে ছোট শিশুদের নিয়ে বাসায় থাকা দায় হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের যে ভয়াবহতা শুরু হয়েছে এ অবস্থায় চার্জার ফ্যান কেনা ছাড়া কোনও উপায় নেই। কিন্তু বাজারে প্রতিটি দোকানে ঘুরে কোনও চার্জার ফ্যান পাওয়া গেল না।
রাকিব হাসান নামে আরেকজন বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে যে চার্জার ফ্যানের দাম ২৪০০ টাকা ছিলো এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকার ওপরে। তারপরও না কিনে উপায় নেই। তিনি বলেন, দিনে রাতে যে হারে বিদ্যুৎ যাচ্ছে তাতে চার্জারফ্যান নিয়ে কিছুটা সামাল দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

 

Lab Scan