বন্দর–এলডিসি নিয়ে সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার নিতে পারে না: তারেক রহমান

0
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ।। ছবি: সংগৃহীত

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ দেশের কৌশলগত খাত—বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর এবং এলডিসি থেকে উত্তরণ—নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলোর কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি মনে করেন, অনির্বাচিত সরকারের জনগণের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার কোনো নৈতিক বা গণতান্ত্রিক ক্ষমতা নেই।
গতকাল সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তারেক রহমান বলেন, একটি দেশ যেই সরকারকে নির্বাচিত করেনি, সেই সরকার দেশের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিতে পারে না।
তিনি মনে করেন, বন্দর পরিচালনা এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের মতো কৌশলগত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনোভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারের ‘রুটিন কাজ’ নয়।

এলডিসি উত্তরণ নিয়ে প্রশ্ন

তারেক রহমান অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্ত এমনভাবে এগিয়ে নিচ্ছে, যেন বিকল্প বা সময় নেওয়ার সুযোগ নেই। অথচ জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী—

  • অর্থনৈতিক ধাক্কা বা ঝুঁকির সময় উত্তরণে সময়সীমা বাড়ানো যায়,
  • অন্য দেশ যেমন অ্যাঙ্গোলা ও সামোয়া সময় বাড়িয়ে উত্তরণ করেছে

তিনি বলেন, ক্ষমতাহীন একটি সরকার দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
ব্যাংক খাতের চাপ, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের অস্থিরতা এবং রপ্তানি শ্লথতার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন—দেশ প্রস্তুত না থাকা সত্ত্বেও এমন সিদ্ধান্ত দেশের কর্মসংস্থান ও রপ্তানিমুখী শিল্পকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিতে পারে।

চট্টগ্রাম বন্দরের কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ

চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল এবং পানগাঁও নৌ টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার সিদ্ধান্তকেও তিনি প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে তুলে ধরেন।
তার ভাষায়, এগুলো জাতীয় সম্পদ নিয়ে কৌশলগত প্রতিশ্রুতি। এগুলোরুটিন ওয়ার্কনয়।

তিনি অভিযোগ করেন—

  • সব বিকল্প বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে,
  • জনগণের সমালোচনাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না,
  • দ্রুততার অজুহাতে যৌক্তিক প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।

সাধারণ মানুষের সংকটতারেক রহমানের তুলে ধরা বাস্তব চিত্র

পোস্টে তিনি একটি ক্ষুদ্র পোশাক কারখানার মালিক এবং একজন শ্রমিকের পরিবারের গল্প তুলে ধরে বলেন—
এলডিসি সুবিধা হঠাৎ প্রত্যাহারের প্রভাব যে কত সাধারণ মানুষের জীবনে পড়ে, তা সরকার বিবেচনাই করছে না।
তিনি উল্লেখ করেন—

  • শুল্কসুবিধা উঠে গেলে ছোট কারখানা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না,
  • রপ্তানি কমলে শ্রমিকের ওভারটাইম কমে যায়,
  • পরে শিফট কমানো হয়, শেষমেশ ছাঁটাই।

তারেক রহমান বলেন, যে সিদ্ধান্তে তাঁদের এমন দশা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে তাঁরা ভোট দেননি; এমনকি তাঁদের জিজ্ঞেসও করা হয়নি।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার বৈধতা নিয়েই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন

তার পোস্টের কেন্দ্রীয় বার্তা ছিল—
অনির্বাচিত সরকার দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না।
তিনি লিখেছেন,

  • গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেটহীন সরকারের সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক,
  • জনগণের মতামত ছাড়া নেওয়া এসব সিদ্ধান্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে,
  • সমালোচনা বা প্রশ্ন করা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং জাতীয় দায়িত্ব।

২০২৬ সালের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে দেশ

তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশে মানুষ সবসময় নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছে, লড়াই করেছে।
তিনি মনে করেন—আসন্ন ২০২৬ সালের সাধারণ নির্বাচনই হবে জনগণের সেই সুযোগ যেখানে তারা আবারও প্রমাণ করবে—
সবার আগে বাংলাদেশ।