যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবা সহসা মিলছে না

0

তহীদ মনি ॥ যশোর মেডিকেল কলেজের ৫০০ শয্যার হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ সহসা শেষ হচ্ছে না। বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণপূর্ত বিভাগ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ২০২৬ বা ২০২৭ সাল নয়, বরং এটি শেষ হতে কমপক্ষে ২০২৮ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ফলে এই মুহূর্তে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতির আশা ক্ষীণ।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ওপর রোগীর যে চাপ (গড়ে প্রতিদিন ৬ শতাধিক রোগী ভর্তি) তা সহসা কমছে না। কলেজ প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পরও হাসপাতাল না হওয়ায় একদিকে যেমন শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমন বৃহত্তর যশোরের ২০ লাখ মানুষও কাঙ্খিত উন্নত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

মেডিকেল কলেজের ৫০০ শয্যার হাসপাতাল তৈরিতে ২০২৪ সালে টেন্ডার ও ২৪ মাসের সময় নির্ধারিত ছিল। বর্তমানে হাসপাতাল নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ চলছে।

যশোর মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরেও ক্যাম্পাসে হাসপাতাল হয়নি। এতে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে যশোরসহ আশপাশের জেলার মানুষ কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেখানে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হলে সহজেই মিলতো সরকারি স্বাস্থ্যসেবা। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল জেনারেল হাসপাতালের ওপরের চাপও কমতো। যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার অন্তত ২০ লাখ মানুষ যশোর ২৫৯ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল।

যশোর গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৬৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর মেডিকেল কলেজের জন্যে তৈরি হচ্ছে ১০ তলা বিশিষ্ট একটি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ৬ তলা বিশিষ্ট একটি নার্সিং কলেজ, ৬ তলা বিশিষ্ট নার্সদের হোস্টেল ও স্টাফ কোয়ার্টার, ৬ তলা বিশিষ্ট ইন্টার্ন ডাক্তারদের ডরমেটরি, ৩ তলা বিশিষ্ট একটি মসজিদ, ছাত্রদের ৩ তলা হোস্টেল ৬ তলায় সম্প্রসারণ ও ছাত্রীদের দুই তলা হোস্টেলটি ৬ তলায় সম্প্রসারণ।
ইতোমধ্যে ছাত্রী হোস্টেল সম্প্রসারণ সম্পন্ন হয়েছে। হস্তান্তরও করা হয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে ছাত্র হোস্টেল হস্তান্তর হতে পারে।

৪টি ব্লকের ১০ তলা বিশিষ্ট ৫০০ শয্যার হাসপাতালটির বেজমেন্ট হবে এক লাখ ১০ হাজার বর্গফুটের। ৩৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের ভবনে থাকবে ১৭টি লিফট। এমনিতেই ২৪ মাসের নির্মাণের সময় দিয়ে ২০২৪ সালে টেন্ডার হওয়ার পর ২০২৬ সালে তৈরি সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৫ সালের মে মাসে একনেকে কাজের অনুমতি পাওয়া যায়। তারপর থেকে তৈরি শুরু করে নির্ধারিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান অ্যান্ড সন্স। সে হিসেবে ২০২৭ সালে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ৭০ শতাংশ নির্মাণ শেষ না হলে লিফট স্পেস হিসাব করা যাবে না। এই ১৭টি লিফটের জন্যে ইউরোপ বা উন্নত কোনো দেশের জন্যে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। তাদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া ও স্থাপন সব মিলিয়ে বেশ সময় ব্যয় হবে।

একই সময়ে মেডিকেল বর্জ্য ট্রিটমেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ থাকবে। আবার নির্মাণ শেষ হওয়ার পর যন্ত্রপাতি, আসবাবসহ জনবল। এরপরই চালু হবে পূর্ণাঙ্গভাবে। ফলে ৩ বছরের অধিক সময় লাগলেও অবাক হওয়ার কথা না বলে জানালো ওই সূত্র।

যশোরের একাধিক সূত্র জানায়, ২০১০ সালে যশোর মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু ২০২৫ সালেও ক্যাম্পাসে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যশোরের পরে প্রতিষ্ঠিত হলেও সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল চালু হয়েছে।

যশোর মেডিকেল কলেজের সূত্রমতে, মেডিকেল কলেজের সঙ্গে হাসপাতাল থাকতেই হবে। এটি নিয়ম। যশোর মেডিকেল কলেজের ৫০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপনের জন্যে ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি ছিল। তবে তা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়। এখন নিজস্ব তহবিলেই হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়ে কাজ করছে সরকার।

সূত্রমতে, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে উন্নয়ন প্রকল্প স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ৫০০ বেডেড হসপিটাল ও এনসিলারি ভবন ইন যশোর’ প্রকল্পটি স্থান পেয়েছিল।

যশোর মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০০৬ সালে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনুমোদন পায়। এরপর ২০০৭ সালের জানুয়ারির শেষের দিকে শহরতলীর হরিণার বিলে মেডিকেল কলেজের জন্যে ২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০০৮ সালে ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ তলা প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনের মধ্যে ৬ তলা নির্মাণ কাজ শুরু হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর ২০১০ সালের মার্চ মাসে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে ফ্যাকাল্টি অনুমোদন দেয়।

কলেজ কর্তৃপক্ষ যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পূর্ব দিকে করোনারি কেয়ার ইউনিটের দ্বিতীয় তলায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। একই বছর ১০ সেপ্টেম্বর মাত্র ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু ২০১৩ সালের শেষের দিকে মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সে সময় প্রবেশ সড়ক না থাকায় কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ক্যাম্পাসে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেননি। পরে ২০১৬ সালের ৩ জুন অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হয়।

যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান বলেন, যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার অন্তত ২০ লাখ মানুষ যশোর জেনারেল হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হোসাইন শাফায়াত জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি ও মাসিক সমন্বয়সভায় বহুবার বেডের চেয়ে কয়েকগুণ রোগী থাকে দাবি করেছেন। এতে চিকিৎসা ব্যাহত হয়।

যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাক্তার আবু হাসনাত মোহম্মাদ আহসান হাবিব বলেন, অর্থ ছাড় না পাওয়ায় ৫০০ শয্যার মেডিকেল হাসপাতাল ভবন নির্মাণে বিলম্ব হয়। এখন কাজ শুরু হয়েছে।

যশোর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, সবে কাজ শুরু হয়েছে। পাইলিং চলছে। ইচ্ছে করলেও ২০২৬ সাল তো দূরে থাক ২০২৭ সালেও বুঝে দেওয়া সম্ভব না।