যশোরে টিবি ক্লিনিকের বর্জ্যে পরিবেশ দূষণ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর রেল রোড এলাকার টিবি ক্লিনিককে ঘিরে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ক্লিনিকের অব্যবস্থাপনা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ মেডিকেল বর্জ্য পোড়ানোর কারণে আশপাশের এলাকায় মারাত্মক বায়ুদূষণ সৃষ্টি হচ্ছে।

স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চললেও প্রশাসন বা স্বাস্থ্য বিভাগ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জীবন এখন ক্রমেই নাজুক হয়ে পড়ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টিবি ক্লিনিকটিতে প্রতিদিনই রোগ নির্ণয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। বিশেষ করে যক্ষা রোগ পরীক্ষার জন্যে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, টেস্ট কিট, ওষুধের খালি প্যাকেট, গজ, তুলো ও অন্যান্য উপকরণ জমিয়ে রাখা হয় ক্লিনিকের ভেতরে। এরপর প্রতি মাসে একসঙ্গে এসব বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হয়।

স্থানীয়দের হিসেবে, প্রতি মাসে প্রায় ৬০ বস্তা বা ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি বর্জ্য পোড়ানো হয়। এতে শুধু ক্লিনিকের আঙিনাই নয়, পাশের কয়েকটি আবাসিক এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে কালো ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ, যা অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থায়ী থাকে।

রেল রোড এলাকার বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, প্রতিদিনই বিকেল বা রাতে দেখা যায়, ক্লিনিকের পেছনে আগুন জ্বলছে। ধোঁয়া পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের বাচ্চারা কাশি আর শ্বাসকষ্টে ভোগে। চোখ জ্বালা করে, গলায় জ্বালা ধরে।

আরেক বাসিন্দা রওশন আরা বলেন, আমরা বারবার ইউএনও অফিস, পৌরসভা আর স্বাস্থ্য বিভাগে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখনো কেউ এসে দেখেনি।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নিয়মিত ধোঁয়ার সংস্পর্শে এলে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, ত্বকের অ্যালার্জি ও চোখে জ্বালাপোড়া দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা এতে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। মেডিকেল বর্জ্য পোড়ানোর সময় প্লাস্টিক, সিরিঞ্জ ও কেমিক্যাল উপকরণ থেকে যে ধোঁয়া তৈরি হয়, তাতে থাকে ক্ষতিকর কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ও ডাইঅক্সিন, যা মানবদেহে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

রেল রোড এলাকার বাসিন্দা সোহেল মাহমুদ নামে এক যুবক বলেন, এই ক্লিনিকটা অনেক বছর ধরে চলছে। আগে জনবসতি কম ছিল। তাই এতো সমস্যা বোঝা যেত না। এখন চারপাশে বাড়ি হয়েছে, স্কুল আছে, দোকান আছে-সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। তবুও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে টিবি ক্লিনিকটির জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শামসুজ্জামান বলেন, বিগত ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে আমরা এই হাসপাতালের বর্জ্যব্যবস্থাপনা পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু এ যাবত কেউ অভিযোগ করেননি। এখানকার বর্জ্য নির্দিষ্ট একটি গর্তের মধ্যে ডাম্পিং ও বার্নিং করা হয়। যেটি স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী করা হয়। ফলে এসব বর্জ্য পোড়ানোর কারণে স্বাস্থ্যের যে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে সেটি সঠিক নয়।

এ বিষয়ে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মাদ আতাউর রহমান বলেন, ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোর বর্জ্য যদি নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি না করা হয়। তবে তা শুধু স্থানীয় নয়, বৃহত্তর এলাকার পরিবেশের জন্যেও মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। ক্লিনিকটি কী প্রক্রিয়ায় বর্জ্য অপসারণ করছে সেটি অব্যশই খতিয়ে দেখা হবে।

এলাকাবাসী দ্রুত এই বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ ও ক্লিনিকের কার্যক্রমের ওপর প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তারা চান, সরকার মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্যে আধুনিক ইনসিনারেটর বা কেন্দ্রীভূত বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপন করুক, যাতে ব্যক্তি ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে আর নিজেদের বর্জ্য পোড়াতে না হয়। প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে এলাকাবাসী বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।