চৌগাছায় বাণিজ্যিকভাবে লাউ চাষ করে আর্থিক লাভবান চাষি

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু,চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় বাণিজ্যিকভাবে লাউ চাষ করছেন চাষিরা। বাজারে লাউয়ের চাহিদা থাকায় চৌগাছায় বারো মাসই লাউ চাষ হচ্ছে। এর থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষি।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে চৌগাছা উপজেলায় ৫০ থেকে ৬০ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ হয়েছে। এখনও অনেক চাষি জমি প্রস্তুত করছেন, সে সব জমিতেও লাউ চাষ করা হবে। লাউ চাষ লাভজনক, সে কারণে চাষি দিন দিন এই চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকাতেও বিশেষ ব্যবস্থায় কৃষক মাচায় লাউ চাষ করছেন বলে জানা গেছে।

শনিবার সরেজমিনে স্বরুপদাহ ইউনিয়নের টেংগুরপুর, বেলেমাঠ, খড়িঞ্চা, আন্দারকোটা, বিহলাপোতা গ্রাম এলাকার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি মাঠে চাষি কমবেশি লাউ চাষ করেছেন। অনেকে পটলের মাচায় লাউ গাছ উঠিয়ে দিয়েছেন, অনেকে জমিতে বিভিন্ন ধরনের গাছে লাউ গাছ উঠিয়েছেন আবার কেউ কেউ লাউ চাষের উদ্যেশে জমি প্রস্তুত করে মাচা দিয়ে সেই মাচাতে লাউ চাষ করছেন। আগাম লাগানো লাউ ইতোমধ্যে ধরন এসেছে এবং কৃষক বাজারজাত শুরু করেছেন। লাউ বাজারে ব্যাপক চাহিদা এবং দামও ভালো সে কারণে চাষি জমিতেই এখন সময় দিচ্ছেন বেশি।

স্বরুপদাহ ইউনিয়নের বাঘারমাঠে গিয়ে দেখা গেছে, চাষি রফিকুল ইসলাম লাউ গাছ থেকে তুলছেন। তিনি টেংগুরপুর গ্রামের ফজের আলীর ছেলে। এই চাষি জানান, দেড় বিঘা জমিতে তিনি পরিকল্পিতভাবে লাউ চাষ করেছেন। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে জমি প্রস্তুত করে লাউ বীজ বপন করেন। চারা বের হওয়ার পরপরই গোটা জমিতে তিনি মাচা তৈরি করেন এবং প্রতিটি গাছ মাচায় উঠিয়ে দেন। আড়াই মাস পরিচর্যা করার পর তার এখন লাউ বাজারজাত শুরু হয়েছে।

চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি প্রতি বছরই লাউ চাষ করে ব্যাপক লাভবান হন। সেই ধারাবাহিকতায় এবছরও দেড় বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। লাউ উঠতে শুরু করেছে এখন এক দিন পর একদিন তিনি ৫০ থেকে ৮০টি লাউ তুলতে পারছেন। এক সপ্তাহ পর একই সময়ে তিনি ৪শ থেকে ৫শ পিস লাউ উঠাতে পারবেন। বর্তমানে বাজরে প্রতি পিস লাউ তিনি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করেন। এই দর যদি থেকে যায় তাহলে ব্যাপক লাভবান হবেন বলে তিনি আশায় বুক বেধেছেন। দেড় বিঘা জমিতে তার এ পর্যন্ত সার কীটনাশক, সুতা, বাঁশ সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। অন্য ফসলের মতই সার ও কীটনাশক প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হয়। এখন যেহেতু শীত চলে এসেছে তাই পোকার আক্রমণ বহুলাংশে কমে যাবে বলে তিনি মনে করছেন।

ওই মাঠে চাষি আজগার আলী,সামাউল ইসলাম, বাবলুর রহমানসহ একাধিক চাষি বলেন, এ বছর একটানা বৃষ্টিতে চাষিদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। সে কারণে অল্প সময়ে যে সব ফসল বাজারজাত করা যায় যেমন লাউ, ঢ্যাঁড়স, মুলা এ ধরনের ফসলে চাষি বেশি ঝুকে পড়েছেন। চাষি রফিকুলের মত অনেকেই লাউ চাষ করেছেন এবং তারা লাভবান হবেন বলে চাষিরা জানিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হোসাইন বলেন, দীর্ঘ বৃষ্টিপাতের পর যে সব জমি দ্রুত সবজি চাষের উপযোগী হয়েছে আমরা কৃষি অফিস হতে সেই সব জমিতে সবজি চাষে কৃষককে আগ্রহী করে তুলতে সক্ষম হয়েছি এবং অল্প দিনেই অনেকে সবজি চাষে সফল হয়েছেন। লাউ চাষ এর আগে সে ভাবে হতো না, তবে কয়েক বছর ধরে কৃষক বাণিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু করেছেন। আমরা কৃষি অফিস থেকে ওই চাষিদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছি।