যশোরে যানজট ও মাদক নিয়ন্ত্রণ প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত

জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায়

0

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ যশোরে জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা রোববার সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় শহরের যানজট, মাদক ব্যবসা এবং অপরাধ বৃদ্ধিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসকসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা। সভায় জানানো হয়, শহরের সীমাহীন যানজট ও মাদক নিয়ন্ত্রণ প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সভায় জানানো হয়, আগস্ট মাসে জেলায় মোট ২৬৭টি মামলা দায়ের হয়েছে, যা জুলাই মাসের ২২৬টি মামলার তুলনায় বেশি। এই সময়ে ৭টি খুন এবং ১১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে জুলাই মাসে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬টি ও ৭টি। এছাড়া, কোতোয়ালি থানায় একই মামলায় একই ব্যক্তিকে দুবার গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে। তবে, মাদকের বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযান বৃদ্ধিকে প্রশাসন ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, এটি প্রমাণ করে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাদক দমনে কাজ করছে।

শহরের যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়, পৌরসভা কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৪,৭৭২টি ইজিবাইক ছাড়া অন্য কোনো বাইক শহরে চলতে পারবে না। এ বিষয়ে কয়েকদিন মাইকিং করা হবে, এরপর কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে। উপশহর বা চাঁচড়া ইউনিয়ন থেকে লাইসেন্স পাওয়া গাড়িগুলোও শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। সড়ক ও ফুটপাত অবৈধভাবে দখল করে রাখা সব দোকান ও মালামাল উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম। বিশেষ করে দড়াটানা থেকে হাসপাতাল সড়কে এই অভিযান জোরদার করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

সিভিল সার্জন জানান, হাসপাতাল সড়কে যানজটের কারণে রোগী নিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের ভিতরে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের কারণেও রোগীদের সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। ডিডিএলজি ও পৌর প্রশাসক রফিকুল হাসান জানান, এসব ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে গেলেই বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসে।

জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিয়েছেন, যাদের নামে একাধিক ইজিবাইক ও ইঞ্জিন রিকশার লাইসেন্স আছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। ইতোমধ্যে পৌরসভা অভিযান চালিয়ে ৭০টির বেশি ইজিবাইক ও রিকশা আটক করেছে।

সভায় মাদকের ভয়াল বিস্তার নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। মাদক ব্যবসা বন্ধে ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরির কথা বলেন জেলা প্রশাসক। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তালিকা থাকলেও অভিযানের সময় মাদক উদ্ধার না হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়।

সভায় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য কমানোর জন্যও সংশিষ্টদের প্রতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সভায় অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সিভিল সার্জন জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যশোরের কোনো ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এমনকি কুইন্স হাসপাতাল বা ইবনে সিনাও বৈধতা পায় না।

তিনি বলেন, অভিযানে কয়েকটি ক্লিনিক থেকে জানানো হয় তাদের প্যাথলজিস্ব আসবে বেলা দুটো। একই প্যাথলজিস্টের নামে অন্তত ৪টি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে। একজন বেলা ২টায় ৪ প্রতিষ্ঠানে থাকবেন বলে জানা যায়। একইজন ৪টি প্রতিষ্ঠানে বেলা দুটোয় কীভাবে যান বলেও তিনি প্রশ্ন রাখেন। তিনি জানান. প্রায় সব প্রতিষ্ঠান চলছে প্যাথোলজিস্ট বাদেই। এছাড়া নিউমার্কেট, যশোর বোর্ডের সামনেসহ সড়কে যত্রতত্র বাস ট্রাত রেখে সড়কের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিষয় নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এভাবে জেলার বিভিন্ন সমস্যা উঠে আসে সভায় এবং জরুরি ভিত্তিতে সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ, হাসপাতাল সড়ক পরিস্কার রাখা, মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণসহ কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার নির্দেশ দেন সভার সভাপতি।

সভায় শহরের ব্যাপক চুরি বৃদ্ধি, বিশেষ করে বিভিন্ন স্থান থেকে বৈদ্যুতিক তার চুরির বিষয়টিও উঠে আসে। এছাড়া, নিউমার্কেট ও যশোর বোর্ডের সামনে যত্রতত্র বাস-ট্রাক পার্কিং করে সড়কের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়।

সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি মো. আজহারুল ইসলাম। সভা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইরুফা সুলতানা।

অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিডিএলজি ও পৌর প্রশাসক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার, সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা, জেলা পিপি অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু, জেলা জামায়াতের আমীর গোলাম রসুল, এনএসআইয়ের যুগ্ম পরিচালক আবু তাহের মোহাম্মদ পারভেজ, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, দৈনিক লোকসমাজের প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত এবং প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন।