চৌগাছার বলুহ মেলায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু,চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় ঐতিহ্যবাহী পীর বলুহ মেলা পাঁচ দিন অতিবাহিত হয়েছে। দিন যত যাচ্ছে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের ভিড় ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত মেলায় আগত দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে সৃষ্টি হচ্ছে এক মিলন মেলা।

এবছর আবহাওয়া ভালো ও মেলায় আগত মানুষের উপস্থিতি বৃদ্ধির কারণে বেচাকেনাও হচ্ছে সন্তোষজনক এমনটিই জানালেন ব্যবসায়ীরা। সম্পূর্ণ গ্রামীণ এই মেলা যেন মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে বলছেন স্থানীয়সহ আগত ব্যবসায়ী ও দর্শনার্থীরা। তবে মেলা নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে অভিযোগ আয়োজক কমিটির।

চৌগাছার নারায়ণপুর ইউনিয়নের হাজারাখানা গ্রামে প্রতি বছরের মতো গত ৯ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ বাংলা সন ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী পীর বলুহ মেলা। দেখতে দেখতে পাঁচ দিন অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু মেলায় আগতদের উপস্থিতি যেন কোনভাবেই থামছে না। বরং দিন যত যাচ্ছে ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের উপস্থিতি।

চৌগাছা উপজেলার প্রতিটি গ্রাম থেকে মানুষ যাচ্ছেন মেলাতে। শুধু চৌগাছা না, দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা হতে মানুষ ছুটে আসছেন গ্রামীণ বলুহ মেলাতে। বলুহ মেলায় সব ধরনের ব্যবসা বাণিজ্য খুবই সন্তোষজক হয়। কেউ কখনও এই মেলায় এসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তাই মানুষের পাশাপাশি মেলায় বেড়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা।

চৌগাছা-মহেশপুর মেইন সড়কে হাজরাখানা পীর বলুহ দেওয়ান (র.) দাখিল মাদ্রাসা থেকে শুরু করে গ্রামের মাঝখান দিয়ে আঁকাবাকা সড়কের দুই পাশে বসে দোকান আর শেষ হয় পীর বলুহ দেওয়ান (র.) এর রওজা শরীফের নিচে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে গিয়ে।

প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে এবং যেখানে খালি জায়গা সেখানে বসেছে দোকান। কি নেই বলুহ মেলাতে। নড়াইলের বিখ্যাত রাজভোগ মিষ্টি, সদর ঘাটের সেই খিলি পান, রাজ সিংহাসনের মত পালংখাট, বাহারি পোশাক ও প্রসাধনী, শিশুদের বিনোদনে বিদ্যুৎচালিত নৌকা, নাগরদোলা, ট্রেন, ভূতের বাড়ি, অন্ধকূপসহ নানা ধরনের জিনিস মেলাকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। মেলা দেখতে প্রশাসনের বড়কর্তা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তি গণমাধ্যমকর্মী, শিল্পি সকলেই ছুটে আসছেন এবং মেলার সার্বিক বিষয়ে সকলেই সন্তোষ প্রকাশ করছেন জানান আয়োজক কমিটি।

শনিবার দুপুরে মেলা চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, মহেশপুরের যাদবপুর গ্রাম থেকে এসেছেন শহিদুল ইসলাম, মাজেদা খাতুন। মেয়ে জামাই বাড়িতে দিবেন তাই ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি ওয়াল শোকেস কিনেছেন, দাম নাগালের ভেতরে জিনিসও ভালো তাই বেজায় খুশি এই পরিবার।

যশোরের মনিরামপুর থেকে এসেছেন আব্দুর রাজ্জাক দম্পতি। তারা কাঠের তৈরি কিছু আসবাবপত্র কিনবেন, দরদাম করেছেন তবে মেলার শেষের দিকে তারা কিনবেন বলে জানান।

নড়াইল জেলা হতে এসেছেন মিষ্টি ব্যবসায়ী খগেন কুণ্ডু। তিনি বলেন, প্রতি বছরই এই মেলাতে আসেন এবং ভালো ব্যবসা করে বাড়িতে যান।এবছর গত পাঁচ দিনে ব্যবসা মন্দ হয়নি বলে জানান।

নাগরদোলা নিয়ে আসা বাপ্পি বলেন, শুরুর দিনে কিছুটা মন্দভাব ছিলো তবে এখন ব্যবসা খুবই ভালো। সুদুর বরিশাল থেকে মতিউর রহমান শিশুদের বিনোদনের জন্য নিয়ে এসেছেন পঙ্খিরাজ নৌকা, স্লিপার ট্রেন ও ভূতের বাড়ি। ব্যবসা ভালো হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এ বছর কপোতাক্ষ নদের অঢেল পানিতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার চলছে, সেখানেও ভালো ব্যবসা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক বিএম বাবুল আক্তার বলেন, আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুমতি আছে মেলার, ওই সময় পর্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে মেলা শেষ করতে কমিটি তথা গ্রামবাসী একতাবদ্ধ এমনটিই জানান কমিটির নেতৃবৃন্দ।