যশোর সদরের লাখখানেক ভোটারের তথ্য উইপোকার পেটে!

0

তহীদ মনি ॥ যশোর সদর উপজেলার প্রায় এক লাখ ভোটারের নিবন্ধন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি উইপোকা এবং বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। যদিও এতে ভোটারদের কোনো উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হবে না বলে জেলা নির্বাচন অফিস দাবি করেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত দুই দিন ধরে যশোর নির্বাচন অফিসের কর্মচারী রবিউল ইসলাম প্রায় আড়াই লাখ ভোটারের নথি সদর উপজেলা গুদাম থেকে জেলা নির্বাচন অফিসের গুদামে ইজিবাইকে করে নিয়ে আসছেন। এসব নথি কোনো ধরনের আচ্ছাদন ছাড়াই খোলা অবস্থায় বহন করা হচ্ছিল, ফলে বাতাসে কিছু পাতা উড়ে গেছে এবং বৃষ্টির পানিতে ভিজেছে। গুদামে দীর্ঘ সময় পড়ে থাকায় বেশিরভাগ ফাইল উইপোকায় কাটা পড়েছে এবং তথ্যগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে যশোর সদর উপজেলার ভোটারদের নিবন্ধনের জন্য পূরণ করা ফরম এবং তার সঙ্গে জমা দেওয়া সহায়ক কাগজপত্রের নথিগুলো এতদিন উপজেলা গুদামে পড়ে ছিল। প্রায় ১৫ বছর ধরে অরক্ষিত অবস্থায় থাকায় পানি ঢুকে এবং উইপোকার আক্রমণে নথিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে এই নথিগুলো স্ক্যান করে সার্ভারে যুক্ত করার জন্য জেলা অফিসে আনা হয়।

যশোরের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম রাকিব সামগ্রিক বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নথিগুলো ২০০৭ ও ২০০৮ সালের ভোটারদের। তাদের সব তথ্য ডাটা সেন্টারে সংরক্ষিত আছে। তাই এই নথিগুলো নষ্ট হলেও ভোটারদের কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি জানান, ওই দুই বছরে ফরম পূরণের পর শুধু তথ্য আপলোড করা হয়েছিল, সহায়ক কাগজপত্র (সাপোর্টিং পেপার) সংযুক্ত করা হয়নি।

তিনি বলেন, যদি কোনো ভোটার পরবর্তীতে এনআইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আসেন এবং পুরোনো নথিতে তার সহায়ক কাগজপত্রের কপি না থাকে, তবে তাকে নতুন ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। এটি শুধু যশোরের জন্য নয়, সারা দেশের ওই দুই বছরের নথির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অন্য বছরের নথি ও সহায়ক কাগজপত্র সর্বদা আপলোড করা আছে।

জাহাঙ্গীর আলম রাকিব আরও বলেন, প্রায় আড়াই লাখ নথির মধ্যে এক লাখের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা কাজ শুরু করেছি এবং যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করছি। নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্দেশ দেবে, আমরা তা পালন করব।

তিনি বলেন, ‘আগে আমাদের নিজস্ব অফিস বা ভবন ছিল না। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে অফিস স্থানান্তরের সময় এই নথিগুলো উপজেলা গুদাম থেকে জেলা অফিসে আনা উচিত ছিল, তাহলে এতটা ক্ষতি হতো না। তবে আমরা কমিশনের সিদ্ধান্ত ছাড়া এ জাতীয় কাজ করতে পারি না।’

তিনি পুনরায় আশ্বস্ত করেন, এই কাগজপত্রগুলোর ক্ষতি হলেও ভোটারদের কোনো সমস্যা হবে না। সকলের তথ্য একাধিক স্থানে সংরক্ষিত আছে এবং কোনো তথ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই।