ভৈরব পাড়ে বৃক্ষরোপণ, প্রকৃতিপ্রেমী সাগরের নান্দনিক উদ্যোগ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভৈরব নদের দুই পাড়ে সবুজের ছোঁয়া দিতে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছেন যশোর শহরের প্রকৃতিপ্রেমী আনোয়ার হোসেন সাগর। রোববার তিনি যশোর শহরের বকুলতলা এলাকায় ভৈরব নদের দুই পাড়ে প্রায় ৬০০ বিভিন্ন প্রজাতির উন্নতমানের গাছ লাগানোর কাজ শুরু করেন। তার এই কাজে যশোর কালেক্টরেট স্কুলের শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়।

যশোরে লেবুতলা ইউনিয়নের নাম লেবুতলা হলেও একসময় সেখানে কোনো লেবু গাছ ছিল না। এই শূন্যতা থেকেই আনোয়ার হোসেন সাগরের মনে বৃক্ষরোপণের ভাবনা আসে। ২০০৯ সালে নিজের গ্রামে লেবু গাছ লাগিয়ে যাত্রা শুরু করেন। গত ১৭ বছরে তার হাতে লাগানো গাছের সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজারে পৌঁছেছে। পেশায় একজন ঠিকাদার হলেও, নিজের ব্যক্তিগত অর্থেই তিনি বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছ লাগিয়ে অনেক গ্রামকে সবুজে ভরে তুলেছেন।

এই ধারাবাহিকতায় রোববার সকালে ভৈরব নদের পাড়ে তিনি আরও ৬০০টিরও বেশি ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণ করেন। এর মধ্যে ছিল খেজুর, নীল কৃষ্ণচূড়া, জাপানি কেসিয়া, পলাশ, ডাউফল, শিমুল, সোমরাইল ফুল, জারুল ও কাঞ্চন। শুধু গাছ লাগিয়েই তিনি থেমে যাননি, কালেক্টরেট স্কুলের ৫০ জন শিক্ষার্থীর মাঝেও গাছের চারা বিতরণ করেন।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মানুষ নির্বিচারে গাছ কাটছে। এই সবুজ ধ্বংস ঠেকানো না গেলে আমাদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে।’ তিনি জানান, গ্রামের পাশাপাশি এখন তিনি শহর এবং ভবিষ্যতে হাইওয়েতেও বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এটা কোনো ব্যবসা নয়, বরং আমার নেশা। যখন দেখি আমার লাগানো গাছগুলো বড় হচ্ছে, তখন মনে হয় জীবনের এক নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছি।’

রোববারের এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান এবং যশোর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোদাচ্ছের হোসেন। তারাও আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে গাছ রোপণে অংশ নেন।

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান বলেন, ‘আনোয়ার হোসেনের এই নিঃস্বার্থ উদ্যোগ স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। একজন মানুষ চাইলে সমাজের জন্য কতটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, তিনি তা প্রমাণ করেছেন।’

একইভাবে অধ্যক্ষ মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, ‘যশোরের ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদ দখল-দূষণের কারণে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এমন পরিস্থিতিতে ভৈরবের প্রাণ-প্রকৃতি ফিরিয়ে আনতে আনোয়ার হোসেন সাগরের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই বৃক্ষরোপণ সত্যিই প্রশংসনীয়।’