চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিনে সাড়ে ৩শ রোগী দেখেছেন একজন চিকিৎসক

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছার ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটে রোগীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। যে কয়জন চিকিৎসক আছেন রোগীর চাপে তারাও কাহিল। একদিন বা দুই দিন না, বছরের পর বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে দশ বারের দেশসেরা এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

রোববার দুপুর একটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ৫নং কক্ষের সামনে দীর্ঘ লাইন। যার বেশির ভাগই শিশু ও নারী। ওই কক্ষে আবাসিক মেডিকেল অফিসার সুরাইয়া পারভীন রোগী দেখছেন।
তিনি জানান, সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত তিনি সাড়ে তিনশর মতো রোগী দেখেছেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩১ টি। এরমধ্যে কাগজে-কলমে আছেন ১৮ জন। কিন্তু কাজ করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ মাত্র ৭জন।

জুনিয়ার কনসলটেন্ট (অ্যানেসথেসিয়া) ডাক্তার রবিউল ইসলাম ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এখানে যোগদানের পর কিছু দিন রোগী দেখেন। এরপর তিনি প্রেষণে যান যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে। ডা. মো. বনি আমিন জুনিয়র কনসলটেন্ট (সার্জারি)। তিনি ২০২৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এখানে যোগদান করেন।

এরপর প্রেষণে যান যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে। সপ্তাহে দুই দিন চৌগাছায় বাকি দিন তিনি যশোরে রোগী দেখেন। ডাক্তার মহিদুল ইসলাম(মেডিসিন) যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে প্রেষণে আছেন। তিন দিন চৌগাছায় রোগী দেখেন তিনি। ডাক্তার গোলাম রসুল জুনিয়র কনসলটেন্ট (অর্থো)। তিনি ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি চৌগাছায় যোগদান করেন।

এরপর তিনি ২০২৪ সালের ১৭ জানুয়ারি হতে অনুপস্থিত। ডা. সাইমা নাহিদ শান্তা মেডিকেল অফিসার। তিনি ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর এখানে যোগদান করেন ও ২০২৩ সালের ১৫ মে হতে তিনি অনুুপস্থিত। ডাক্তার সামান্তা রহমান শান্তা সহকারী সার্জন। তিনি ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর চৌগাছায় যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে প্রেষণে আছেন। ডাক্তার মো. আহসান হাবিব সহকারী সার্জন। তিনি ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর যোগদানের পর প্রেষণে আছেন যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে। ডা. সঞ্চিতা সেন ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর চৌগাছায় সহকারী সার্জন হিসেবে যোগদান করেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন। ডাক্তার মৃদুল কান্তি সহকারী সার্জন। ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর এখানে যোগদান করেন। ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট হতে তিনি অনুপস্থিত। ফলে হাতে গোনা ৬/৭ জন চিকিৎসক রোগী দেখতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন।

চিকিৎসাসেবা নিতে আসা মহেশপুরের আসাদুল ইসলাম, চৌগাছার সালমা খাতুন, পুড়াপাড়ার মিজানুর রহমান বলেন, রোগীরা ভিষণ কষ্টে আছে। কেননা দুই- তিনজন ডাক্তার শ শ রোগী কীভাবে দেখবেন? বিশেষ করে নারী শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা ডাক্তার দেখাতে এসে দুর্ভোগে পড়েন।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল আফিসার ডাক্তার সুরাইয়া পারভীন বলেন, সকাল থেকে দুপুর ১ টা পর্যনন্ত তিনি একাই সাড়ে তিনশ রোগী দেখেছেন। এখানো সামনে লাইনে যা আছে তাতে আরও একশ বেশি রোগী হবে। কষ্ট হচ্ছে। তারপরও সেবা তো দিতে হবে। সেই মানষিকতা হতে রোগী দেখে যাচ্ছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মু. আহসানুল মিজান রুমি বলেন, ডাক্তার সংকট দীর্ঘ দিনের। আমি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এখন অপেক্ষা ছাড়া তো কিছুই করার নেই। এখানে যে কয়জন চিকিৎসক আছেন তারা নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।