সরকারি রাস্তায় বাড়ি নির্মাণ, পুলিশের কথা মানছে না দখলদার

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারি রাস্তাকে বন্দোবস্ত পাওয়ার আবেদন করে না পেয়ে তা দখল করে বাড়ি নির্মাণ করছে যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের ডহেরপাড়া গ্রামের একটি পরিবার। এ ঘটনায় প্রতিবেশীরা আপত্তি জানালে তারা কর্ণপাত করছে না। তাদের রাস্তা দখলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও তারা তা করেনি। বরং নিজেকে বিএনপি কর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে পরিবারটির বোরহান নামের এক ছেলে।

ডহেরপাড়া গ্রামের ফুলতলা বাজারের নিকটে উত্তর পাড়ায় মহররম আলীর পরিবার তাদের নিজেদের ভূমিহীন দেখিয়ে বাড়ির পাশের একটি সরকারি রাস্তাকে পরিত্যক্ত বর্ণনা করে তা তাদেরকে বন্দোবস্ত দেওয়ার আবেদন করে জেলা প্রশাসক বরাবর। এ বিষয়ে প্রথম আবেদন করেন মহররমের স্ত্রী লাকি বেগমের বোন মনিরা বেগম। তিনি অনুমোদন না পাওয়ায় কয়েক বছর পর লাকী বেগম একই রাস্তা বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য একইভাবে আবেদন করেন। ২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নিজেদের ভূমিহীন দেখিয়ে একই আবেদনপত্র ফটোকপি করে কখনও মনিরা কখনও লাকি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু রাস্তাটি সরকারি হওয়ায় তাদের অনুকূলে বরাদ্দ হয়নি।

এদিকে গত ২০ জুন থেকে তারা ওই রাস্তায় তাদের আবেদনের অংশে ইট ও বালি ফেলে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করার উদ্যোগ নিলে প্রতিবেশীরা প্রতিবাদ করেন এ শাহিনুর আলম নামে এক জন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি নালিশী অভিযোগ করেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশকে ১৪৪/১৪৫ ধারা অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেয়। পুলিশ দুইবার ঘটনাস্থলে গিয়ে মহররম পরিবারকে তাদের অবৈধ দখল ও বাড়ির কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়। কিন্তু তারা পুলিশের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে বাড়ি নির্মাণ অব্যাহত রাখে।

এ অবস্থায় শাহিনুর আলম আবারও আদালতে অভিযোগ জানালে আদালত পুলিশকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু পুলিশ কার্যকর কোন ভূমিকা না রাখায় দখলদাররা তাদের বাড়ি নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে।
স্থানীয়রা বলেন, পুলিশ কার্যকর ভূমিকা না রাখায় মহররমের পরিবার তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে চলেছে। তারা দেখাতে চাই সরকারি এ রাস্তাটি কেউ ব্যবহার করে না। তাই তারা ভূমিহীন সেজে সরকারের কাছে তাদের বাড়ির পাশের অংশটুকু বন্দোবস্ত পেতে চায়। কিন্তু আবার তাদের দখলে যাতে কেউ বাধা দিতে না পারে সে জন্য বিভিন্ন সময় হুমকি দিচ্ছে প্রতিবেশীদের।

প্রতিবেশীরা আরও জানান, এ পরিবারটি মোটেও ভূমিহীন নয়। সরকারি ওই রাস্তার পাশে তাদের ২০ শতক জমিতে বাগান, অপর পাশে বাড়ি রয়েছে। এছাড়া বারীনগর সাতমাইল বাজারে তাদের দুইতলা একটি আরও একটি বাড়ি রয়েছে। তার দুই ছেলের এক জনের সাতমাইল বাজারে রয়েছে চালের আড়ত ও অপর ছেলের রয়েছে ওষুধের ফার্মেসি। অথচ তাদের মা নিজেদের ভূমিহীন দাবি করে সরকারি রাস্তা দখলের জন্য আবেদন করে! এখন সরকারিভাবে না পেয়ে অবৈধ দখল শুরু করেছে।

শাহিনুর আলম বলেন, গ্রামের ওই রাস্তাটি যত দিন যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কেননা এক সময় মানুষ বিভিন্ন বাড়ির উপর দিয়ে যাতায়াত করলেও, বর্তমানে সবখানে ঘর-বাড়ি উঠেছে। এ অবস্থায় আগের মতো অন্যের বাড়ি ওপর দিয়ে বর্তমানে আর যাতায়াত করা সম্ভব নয়। এ কারণে সরকারি রাস্তাটি দখল হলে ভোগান্তি তৈরি হবে।

এ মামলার আইনজীবী রাজু আহম্মেদ বলেন, নালিশি রাস্তাটি এসএ ও আরএস ম্যাপে অংকিত সরকারি রাস্তা। সেহেতু উক্ত রাস্তাটি ব্যক্তিভাবে কেউ ভোগ দখল করা সম্পূর্ণ বেআইনি ও আইনত দন্ডণীয়।