যশোরে আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন

জুনে ৮ খুন, ১০ ধর্ষণ ও ৬ অপহরণ

0

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ গত জুন মাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম। রোববার কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষর সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় খুন ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি, কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা, ফুটপাত ও সড়কের অবৈধ দখল, যানজট এবং অবৈধ ক্লিনিকের রমরমা বাণিজ্যের মতো বিষয়গুলো উঠে এলে জেলা প্রশাসকের পাশাপাশি কমিটির সদস্যরাও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সভায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে অনেকাংশে দায়ী করা হয়।

সভায় জানানো হয়, জুন মাসে জেলায় ৮টি খুন, ১০টি ধর্ষণ এবং ৬টি অপহরণের ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। এছাড়া ৪টি গরু চুরি, ২টি গাড়ি চুরি এবং ১০টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনায় মোট ২৫২টি মামলা রেকর্ড হয়েছে। খুলনা বিভাগে ৭০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে, যার মধ্যে যশোরে নিহত হয়েছেন ৯ জন। এসব পরিসংখ্যান তুলে ধরে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় তুলনামূলকভাবে হত্যা, মারামারি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে, যা উদ্বেগজনক।’ যদিও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এসব অপরাধের অধিকাংশই ‘ডিটেক্ট’ করা সম্ভব হয়েছে এবং আসামিরা আটক রয়েছে।

শহরের ফুটপাত ও সড়কগুলোর অবৈধ দখল নিয়ে জেলা প্রশাসক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বিশেষভাবে মণিহার এলাকার রাস্তার দখল ও চলাচল অযোগ্য হয়ে ওঠা, খাজুরা স্ট্যান্ড এলাকায় বাস-ট্রাকের যত্রতত্র পার্কিং এবং বোর্ড অফিসের সামনে থেকে মণিহার পর্যন্ত সড়কের পাশে বাস দাঁড় করিয়ে রাখায় সৃষ্ট যানজটের সমালোচনা করেন। এ সময় উপস্থিত জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন এবং প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুনসহ অন্যান্য সদস্যরাও একই অভিযোগ তুলে ধরেন। তারা ফুটপাতসহ সরকারি জায়গার অবৈধ দখলমুক্তকরণ এবং যানজট নিয়ন্ত্রণে আনার ওপর জোর দেন।

সভায় দৈনিক লোকসমাজের প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত অবৈধ ক্লিনিক ব্যবসার রমরমা বাণিজ্য এবং স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসীনতা নিয়ে কথা বলেন। তিনি মানহীন ও দক্ষ জনবলহীন নতুন নতুন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে ডাক্তারদের প্রচারণা থেকে শুরু করে তরিতরকারি ব্যবসায়ীদের মাইকের আওয়াজে শহর ও উপশহরে ভয়াবহ শব্দদূষণের বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিডিএলজি ও পৌরপ্রশাসক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার, সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা, হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার, বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর ফারদিন, সেনাবাহিনীর মেজর সানজিদ, এনএসআইয়ের যুগ্ম পরিচালক আবু তাহের মো. পারভেজ, বিএনপির সভাপতি ও পিপি অ্যাড. সাবেরুল ইসলাম সাবু, দলটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, জেলা জামায়াতের আমীর গোলাম রসুল, প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, দৈনিক লোকসমাজের প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত প্রমুখ।